Advertisment

হিংসায় জ্বলছে মণিপুর, মর্গে উপচে পড়ছে লাশ,পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সর্বদল বৈঠক, শান্তির আবেদন মুখ্যমন্ত্রীর

মণিপুরে হিংসার ঘটনা প্রসঙ্গে কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর রাজ্য সরকারের ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার আবেদন করেছেন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Manipur Violence,N Biren Singh,India News,Curfew, army in manipur, curfew in manipur, president rule, shashi tharoor, manipur death toll, manipur violence death,

বুধবার মণিপুরে মেইতেই এবং কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত কমপক্ষে ৫২ জন নিহত হয়েছেন। তিনটি হাসপাতালের সিনিয়র আধিকারিকরা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে এমনটাই জানিয়েছেন। এরমধ্যে চূড়াচাঁদপুরে, শুক্রবার সাত জনের মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে তিন জন নিরাপত্তারক্ষীদের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন বলে অভিযোগ। মেইতেইদের এলাকা থেকে রক্ষীরা সরানোর চেষ্টা করলে অভিযুক্তরা বাধা দিয়েছিল। তখনই রক্ষীরা গুলি চালায় বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।

Advertisment

চূড়াচাঁদপুর জেলা হাসপাতালের চিফ মেডিক্যাল অফিসার জানিয়েছেন, ৩ মে দাঙ্গা শুরুর পর থেকে এখনও পর্যন্ত এই হাসপাতালের মর্গে ১২টি মৃতদেহ আনা হয়েছে। যার মধ্যে শুক্রবার সন্ধ্যায় গুলি চালানোর পর তিনটি দেহ আনা হয়েছে। হাসপাতালের অন্য একজন প্রবীণ চিকিৎসকের মতে, এই দাঙ্গার ঘটনায় আরও দু’জন গুরুতর আহত হয়েছেন। তাঁরা হাসপাতালে ভর্তি। এর আগে বৃহস্পতিবার, চূরাচাঁদপুর-বিষ্ণুপুর সীমান্তে গুলি বিনিময়ের পরে চারটি মৃতদেহ হাসপাতালে আনা হয়েছিল।

ইম্ফল পশ্চিমের আঞ্চলিক ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সে আবার ২৬টি দাঙ্গায় নিহত ব্যক্তির দেহ আনা হয়েছে। যার মধ্যে ২৪টি পুরুষের দেহ। আর, দুটি মহিলার দেহ। এর মধ্যে একটি দেহ বিষ্ণুপুর জেলার নাম্বোলের এক পরিবারের। ইম্ফল পূর্বের জওহরলাল নেহরু ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস-এ, দু’জন দাঙ্গায় আহত রোগী আবার হাসপাতালে মারা গিয়েছেন। এছাড়াও, ১২টি মৃতদেহ বিভিন্ন জেলা থেকে নিরাপত্তা কর্মীরা মর্গে নিয়ে এসেছেন। কোনও পরিবার এখনও এই সব দেহগুলোর একটারও দাবি জানায়নি।

তবে, মণিপুর সরকার বা পুলিশ এখনও পর্যন্ত হতাহতের কোনও সরকারি পরিসংখ্যান প্রকাশ করেনি। শুক্রবার, মণিপুর পুলিশের ডিজি পি ডুঞ্জেল জানিয়েছেন, নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই হতাহতের পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়নি। চূড়াচাঁদপুরে নিরাপত্তা বাহিনীর কথিত গুলিতে নিহতদের মধ্যে ৩৪ বছর বয়সি নিয়াংহোইচিংও আছেন। তাঁর ভাই লাম জ্যাকবের মতে, নিয়াংহোইচিং আট বছর দিল্লির জসোলা অ্যাপোলোতে কাজ করার পর ২০২১ সাল থেকে চূড়াচাঁদপুর জেলা হাসপাতালে চুক্তিভিত্তিক নার্স হিসেবে কাজ করছিলেন। শনিবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে মণিপুর সরকারের নিরাপত্তা উপদেষ্টা কুলদীপ সিং বলেছেন যে রাজ্যে এখনও ৩৫৫ ধারা কার্যকর করা হয়নি। এনিয়ে ইতিমধ্যেই গুজব ছড়ানো হচ্ছে বলেও তিনি দাবি করেন। শুক্রবার চুড়াচাঁদপুরে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। এতে নিরাপত্তা বাহিনীর তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে খবর মিলেছে।

নাগরিক অধিকারকর্মী ইরম শর্মিলা চানু শনিবার মণিপুরের মহিলাদের কাছে আবেদন করেছেন, যাতে জাতিগত পরিচয় নির্বিশেষে সংঘর্ষ-বিধ্বস্ত রাজ্যে তাঁরা শান্তি ফেরানোর জন্য সমবেতভাবে কাজ করেন। এই আহ্বানের পাশাপাশি, শর্মিলা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে ‘সমস্যা বুঝতে’ এবং ‘সেগুলোকে সমাধান করতে’ মণিপুর সফরের অনুরোধও করেছেন।

‘আয়রন লেডি’ নামেও পরিচিত ইরম শর্মিলা একটি টেলিফোনিক সাক্ষাত্কারে পিটিআইকে বলেছেন, ‘মণিপুর জ্বলছে এবং আমাদের জনগণের দুর্ভোগ দেখে আমি গভীরভাবে ব্যথিত। আমি সকলকে, (মেইতিস এবং আদিবাসীদের) একত্রিত হয়ে হিংসা বন্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছি। নারীদের অবশ্যই ‘মায়ের প্রকৃতি’ অনুযায়ী কাজ করতে হবে এবং শান্তি ফিরিয়ে আনতে তাঁদের শক্তি ব্যবহার করতে হবে।’

এদিকে মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং শনিবার গভীর রাতে বলেছেন যে চুরাচাঁদপুর জেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তিনি বলেন, সরকার ও বিভিন্ন দলের মধ্যে আলোচনার পর আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে কারফিউ আংশিক শিথিল করার বিষয়ে সরকার চিন্তা ভাবনা করছে। গত ৩রা মে থেকে অশান্তির আগুন জ্বলছে এই পার্বত্য রাজ্যে।

মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং শনিবার (৬ই মে) রাজ্যে চলমান হিংসা এবং সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য সর্বদলের বৈঠক ডাকেন। সেই সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে কথা বলে হিংসা বন্ধে যা যা করনীয় তারও নির্দেশ দেন। মণিপুরে হিংসার ঘটনা প্রসঙ্গে কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর রাজ্য সরকারের ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার আবেদন করেছেন। অন্যদিকে, রাজ্যের ‘আয়রন লেডি’ ইরম শর্মিলা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মো্দী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে রাজ্য সফরের আবেদন করেছেন।

Manipur Violence
Advertisment