ফের ছড়িয়ে পড়ল অশান্তির আগুন, মণিপুরে পর পর জ্বালিয়ে দেওয়া বাড়ি-ঘর। জানা গিয়েছে হিংসার ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছে এক ব্যক্তি।
শনিবার থেকেই ফের নতুন করে উত্তেজনা বাড়তে থাকে মণিপুরের ইম্ফলে। সেখানে ১৫টি বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, রবিবার কর্মকর্তারা এই তথ্য জানিয়েছেন। ঘটনাটি শনিবার সন্ধ্যায় ল্যাঙ্গোল গেমস গ্রামে ঘটে। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েক রাউন্ড টিয়ার গ্যাসের শেল ফাটানো হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হন বছর ৪৫-এর এক ব্যক্তি।তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ইম্ফল পূর্বে চেকন এলাকা থেকেও নতুন করে হিংসার খবর পাওয়া গেছে যেখানে শনিবার একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে আগুন দেওয়া হয়। আশেপাশের তিনটি বাড়িতেও আগুন লাগানো হয়। দমকলকর্মীরা দ্রুততার সঙ্গে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
কিছুতেই শান্ত হচ্ছে না মণিপুর। গতকালই নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে মণিপুরের বিষ্ণুপুরে। ব্যাপক গুলিবর্ষণ, হিংসার বলি ৩ । সেই সঙ্গে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে বাড়িঘর। শুক্রবার গভীর রাতে মণিপুরের বিষ্ণুপুর জেলায় শুরু হওয়া নতুন করে সংঘর্ষে কমপক্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। সংঘর্ষের পর ওই এলাকার বেশ কয়েকটি বাড়িতেও আগুন দেওয়া হয়। নিরাপত্তা বাহিনী ইতিমধ্যেই পরিস্থিতি মোকাবিলায় আসরে নেমেছে। শুক্রবার গভীর রাতে মণিপুরের বিষ্ণুপুর জেলায় নতুন সহিংসতার ঘটনায় অন্তত তিনজন মারা গেছেন। নিহতরা মেইতি সম্প্রদায়ের বলে জানা গিয়েছে। নতুন করে ছড়িয়ে পড়া হিংসার ঘটনায় কুকি সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকটি বাড়িঘরও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
এরপর আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। কুকি সম্প্রদায় এবং নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে বিষ্ণুপুর জেলার কোয়াকতা এলাকায় শুরু হয় ব্যাপক গুলির লড়াই। মণিপুর পুলিশ ও কমান্ডোরা পাল্টা গুলি চালায় বলেই খবর।বিষ্ণুপুর পুলিশ জানিয়েছে,নতুন করে হিংসার ঘটনা মেইতি সম্প্রদায়ের তিনজন নিহত হয়েছেন। কুকি সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
গুলিতে মণিপুরের এক কমান্ডো মাথায় আঘাত পেয়েছেন। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নতুন করে হিংসার ঘটনায় বিষ্ণুপুরের পরিস্থিতি বেশ থমথমে। আহত ওই সেনাকে বিষ্ণুপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এলাকায় আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বাফার জোন পেরিয়ে মেইতেই এলাকায় কয়েকজন লোক এসে তাদের ওপর গুলি চালায়।
বৃহস্পতিবার মণিপুরের বিষ্ণুপুর জেলায় সশস্ত্র বাহিনী এবং মেইতি সম্প্রদায়ের বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষে ১৭জন আহত হওয়ার দু’দিন পর এই ঘটনা ঘটে। পুলিশের বিশদ বিবরণ অনুসারে, ঘটনাটি ঘটে যখন মেইতি মহিলারা জেলার একটি ব্যারিকেডেড জোন অতিক্রম করার চেষ্টা করছিলেন। আসাম রাইফেলস এবং র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স (আরএএফ) তাদের থামানোর চেষ্টা করেন। সেই সময় বাহিনীকে লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করা হয়।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে প্রায় তিন মাস ধরে জাতিগত হিংসার সাক্ষী থেকেছে। চলমান হিংসার ঘটনায় ১৬০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছেন এবং আহতের সংখ্যা শতাধিক। মেইতি সম্প্রদায়ের তফসিলি উপজাতি (এসটি) মর্যাদার দাবির প্রতিবাদে পার্বত্য জেলাগুলিতে একটি ‘উপজাতি সংহতি মার্চ’ সংগঠিত হওয়ার পর ৩ মে মণিপুরে হিংসা শুরু হয়।
মণিপুরের জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মেইতি এবং বেশিরভাগই ইম্ফল উপত্যকায় বাস করে, যেখানে নাগা এবং কুকি সহ আদিবাসীরা ৪০ শতাংশ গঠন করে এবং তারা প্রধানত পার্বত্য জেলাগুলিতে বসবাস করেন।