নতুন করে হিংসার আগুনে জ্বলে উঠলো পার্বত্য রাজ্য মণিপুর। চুড়াচাঁদপুরে ৪ জনকে গুলি করে হত্যার পাশাপাশি হিংসার ঘটনায় ইম্ফলে নিহত হয়েছেন এক ট্যাক্স অ্যাসিস্ট্যান্ট। চুড়াচাঁদপুরের বাসিন্দা পেশায় গবেষক মুয়ান হানসিংহ দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন, ‘শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ নতুন করে অশান্তির আগুন শুরু হয়।
তিনি বলেন, “নিরাপত্তা কর্মীদের মোতায়েন করার কারণে, লোকেরা তাদের বাড়ি থেকে তেমন বেরোচ্ছেন না। সন্ধ্যা ৭ টা আমরা জানতে পারি মৈতেইদের একাংশে নিরাপত্তা কর্মীরা শহর থেকে সরিয়ে নিতে চলেছে। জনতা (এই উচ্ছেদের বিরোধিতা করে) শহরের প্রধান সড়ক, তিদিম রোডে জড়ো হয়েছিল ব্যারিকেড দিতে। আমরা মহিলাদের ব্যারিকেডের সামনে রেখেছিলাম কারণ আমরা ভেবেছিলাম যে তাদের উপর গুলি চালানো হবে না। কিন্তু নিরাপত্তাবাহিনী গুলি চালায় এবং চারজন মারা যায়,”।
ইম্ফলে আসাম রাইফেলস কর্মকর্তা বলেছেন যে তিনি তথ্য পেয়েছেন যে "১০০-২০০" লোকের জমায়েত হয়েছে এবং গুলিতে চারজন মারা গেছেন। "রাজ্যের বিভিন্ন অংশ থেকে লোকেদের সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে," তিনি বলেন, রাজ্যের বিভিন্ন অংশে রাস্তা অবরোধ অব্যাহত রয়েছে। কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর একজন সিনিয়র আধিকারিকও নিশ্চিত করেছেন যে জনতা-পুলিশ খণ্ডযুদ্ধে গুলিতে চারজন মারা গেছেন, যদিও জেলার একজন সিনিয়র পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন মৃতের সংখ্যা তিন।
হিংসায় জ্বলছে মণিপুর। দেখা মাত্র গুলির নির্দেশ। রাজ্যের আটটি জেলায় কারফিউ জারি করা হয়েছে। রাজ্য জুড়ে মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা স্থগিত করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র বলেছেন, বুধবার নাগা ও কুকি উপজাতিদের দ্বারা উপজাতি সংহতি মিছিলের পর সহিংসতা শুরু হয়, যা রাতে আরও তীব্র হয়। সমস্ত জেলাশাসক, সাব ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেট, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, স্পেশাল এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটকে এই নোটিশ ইস্যু করার জন্য অনুমোদন করা হয়েছে। রাজ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনতেই এই পদক্ষেপ বলেই জানিয়েছেন রাজ্যপাল। ইম্ফল উপত্যকায় মৈতেই জনজাতির তরফে দাবি তোলা হয়েছে, তাদের তফশিলি উপজাতির তকমা দিতে হবে। যদিও মৈতেইদের এই দাবি মানতে পারছেন না স্থানীয় কুকি সম্প্রদায়ের আদিবাসীরা। তা থেকেই বিরোধের সূত্রপাত। তার জেরে ক্রমেই ছড়াচ্ছে হিংসা।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মণিপুরে, মোতায়েন করা হয়েছে সেনা, নিরাপদ স্থানে সরানো হল কয়েক হাজার মানুষকে। আদিবাসীদের বিক্ষোভ ঘিরে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি পার্বত্য রাজ্যে মনিপুরে। জানা গিয়েছে, শান্তি বজায় রাখতে ফ্ল্যাগ মার্চ করছে সেনা। এর আগে গত মাসে মুখ্যমন্ত্রীর সভাস্থলে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল উত্তেজিত জনতা। আর সম্প্রতি মৈতেই গোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘর্ষ বেঁধেছে আদিবাসী সম্প্রদায়ের। এই আবহে রাজ্যের আট জেলায় জারি হয়েছে কার্ফু। ৫ দিনের বন্ধ হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা।
মণিপুর হাইকোর্টের একটি রায় পার্বত্য রাজ্যে উত্তেজনা বাড়িয়েছে। পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর জওয়ানরা রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় ফ্ল্যাগ মার্চ করছেন। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, মণিপুর প্রশাসনের আবেদনে বিভিন্ন এলাকায় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। ৩ মে সন্ধ্যা থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষার চেষ্টা চলছে।
বুধবার বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়নের ব্যানারে মণিপুরের ১০টি জেলায় মিছিল করেছে, যাতে বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশ নেয়। বিক্ষোভকারীরা মৈতেই সম্প্রদায়কে উপজাতি মর্যাদা দেওয়ার বিরোধিতা করছে। গত ১৯শে এপ্রিল, মণিপুর হাইকোর্ট তার একটি সিদ্ধান্তে জানায় যে সরকারের মৈতেই সম্প্রদায়কে উপজাতি বিভাগে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত এবং হাইকোর্ট এর জন্য রাজ্য সরকারকে চার সপ্তাহ সময় দিয়েছে। রায়ের প্রতিবাদে মণিপুরের বিষ্ণুপুর ও চন্দ্রচুড়পুর জেলায় হিংসা ছড়ায়। সরকার পাঁচ দিনের জন্য রাজ্যে মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা স্থগিত করেছে। চন্দ্রচুড়পুর জেলায় কারফিউ জারি করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ
মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্সের বেশ কিছু কোম্পানিও মণিপুরে পাঠানো হয়েছে। ভারতীয় বিমানবাহিনীর বিমানে করে RAF এর সদস্যদের মণিপুরে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মণিপুরে শুরু থেকেই পর্যাপ্ত সংখ্যক সেনা ও আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর আসাম রাইফেলসের কর্মীরা মণিপুরের হিংসা কবলিত এলাকা থেকে লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এ পর্যন্ত সাড়ে সাত হাজার নাগরিককে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন. বীরেন সিং একটি বিবৃতি জারি করে বলেছেন যে ‘গত ২৪ ঘণ্টায় কিছু জায়গায় হিংসা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। আমাদের সমাজের দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির কারণে এই ধরণের ঘটনা ঘটছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজ্য সরকার সব ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে’।
মণিপুরে মৈতেই সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা প্রায় ৬০ শতাংশ এবং এই সম্প্রদায়টি ইম্ফল উপত্যকা এবং এর আশেপাশের এলাকায় বসবাস করেন। মৈতেই সম্প্রদায় বলছে যে মায়নামার ও বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের কারণে তারা রাজ্যে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। একইসঙ্গে, বিদ্যমান আইনে তাদের রাজ্যের পাহাড়ি এলাকায় বসতি স্থাপনের অনুমতি নেই। এই কারণেই মৈতেই সম্প্রদায় তাদের আদিবাসী সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত করার আবেদন জানিয়ে হাইকোর্টে আবেদন করে।
আদিবাসী শ্রেণী কেন প্রতিবাদ করছে?
অন্যদিকে, হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে রাজ্যের আদিবাসী সম্প্রদায়। আদিবাসী সম্প্রদায়ের আশঙ্কা, মৈতেই সম্প্রদায়কে আদিবাসী তকমা দেওয়া হলে তারা তাদের জমি ও সম্পদ দখল করে বসতি স্থাপন করবে।
মণিপুরে হিংসার কারণ –
বুধবারের হিংসা নিয়ন্ত্রণে আনতে মণিপুরের বিভিন্ন জেলায় মোতায়েন করা হয়েছে সেনা এবং অসম রাইফেল পার্সোনাল। হিংসায় রাশ টানতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা। বিভিন্ন জেলায় জারি করা হয়েছে কারফিউ। ইম্ফল উপত্যকায় মৈতেইরা সংখ্যা গরিষ্ঠ। এঁরা হিন্দু। উপত্যকার পাঁচটি জেলায়ই এঁদের আধিপত্য রয়েছে। যদিও পাহাড়ি জেলাগুলিতে নাগা এবং কুকি উপজাতিদের আধিপত্য।এই কুকি এবং নাগারা হলেন খ্রিস্টান। পাহাড়ের চার জেলায় কুকিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। মণিপুরের মোট জনসংখ্যার ৫৩ শতাংশ মৈতেই। যদিও গোটা রাজ্যের মাত্র ১০ শতাংশ এলাকায় বাস তাদের। উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে ৩৫টি উপজাতি সম্প্রদায়ের বাস। এদের সিংহভাগই নাগা ও কুকি সম্প্রদায়ের। রাজ্যের ১০ শতাংশ এলাকা বাদে বাকি অংশে বাস করেন এই ৩৫টি উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষ।
অল মণিপুর ট্রাইবাল ইউনিয়নের (Manipur Violence) সাধারণ সম্পাদক কেলভিন নেইশিয়াল বলেন, এই প্রতিবাদের নেপথ্যে প্রধান কারণ হল মৈতেইরা তফশিলি উপজাতির মর্যাদা চাইছে। তারা এগিয়ে থাকলেও কীভাবে তাদের এসটির মর্যাদা দেওয়া হবে? তিনি বলেন, ওরা যদি এসটির মর্যাদা পায়, তাহলে আমাদের সব জমি কেড়ে নেবে। কেলভিন বলেন, কুকিরা খুব গরিব। তাই তাদের নিরাপত্তা প্রয়োজন। তাদের জন্য কোনও স্কুল নেই। ঝুম চাষের ওপর জীবিকা নির্বাহ করে তারা। যদিও মৈতেইদের দাবি, এটা কোনও ইস্যুই নয়। আসল কারণটা হচ্ছে, রাজ্য সরকার যে রিজার্ভ ফরেস্ট এলাকা থেকে অনুপ্রবেশকারীদের তাড়াতে চাইছে, তাতেই ভয় পেয়েছে কুকিরা। তার জেরেই অশান্তির সূত্রপাত।
কংগ্রেস অভিযোগ করেছে যে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) তার ঘৃণার রাজনীতি দিয়ে সম্প্রদায়ের মধ্যে ফাটল তৈরি করেছে, যার কারণেই মণিপুর জ্বলছে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী উত্তর-পূর্ব রাজ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে আবেদন করেছেন। কংগ্রেস বলেছে যে মণিপুরে আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি বিঘ্নিত হওয়ার কারণে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে অবিলম্বে তাঁর পদ থেকে বরখাস্ত করা উচিত এবং ভারতীয় জনতা পার্টির উচিত মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা।
‘বিজেপি সম্প্রদায়ের বিদ্বেষের বীজ তৈরি করেছে‘
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং কংগ্রেস রাহুল গান্ধীও মণিপুরের জনগণকে শান্তি বজায় রাখার আবেদন করেছেন। মল্লিকার্জুন খাড়গে টুইট বার্তায় লিখেছেন, ‘মণিপুর জ্বলছে। বিজেপি সম্প্রদায়ের মধ্যে ফাটল সৃষ্টি করেছে এবং এই সুন্দর রাজ্যের শান্তি নষ্ট করেছে। বিজেপির বিদ্বেষ ও বিভাজনের রাজনীতি এবং ক্ষমতার লোভ এই সমস্যার জন্য দায়ী। আমরা সকল পক্ষের কাছে শান্তি বজায় রাখার আবেদন করছি’
‘প্রধানমন্ত্রী মোদীর মণিপুরের বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত’
এক টুইটে রাহুল গান্ধী বলেছেন, ‘মণিপুরের দ্রুত অবনতি হওয়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন। প্রধানমন্ত্রীর উচিত সেখানে শান্তি ও স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনার দিকে মনোযোগ দেওয়া। আমি মণিপুরের জনগণকেও শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানাই’।
‘ডাবল ইঞ্জিন সরকার , রাজ্যে আগুন, কেন্দ্র নীরব’
কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ টুইট করেছেন, ‘বিজেপি বিধানসভা নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। নির্বাচনের ১৫ মাস পর মণিপুরে ডাবল ইঞ্জিন সরকারের দৌলতে রাজ্যে আগুন জ্বলছে। নীরব কেন্দ্রীয় সরকার। কর্ণাটকে প্রচারে ব্যস্ত প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
কেন মণিপুরে হিংসা ছড়িয়েছে?
আদিবাসী আন্দোলনের সময় হিংসার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার মণিপুরের আটটি জেলায় কারফিউ জারি করা হয়েছে এবং পুরো উত্তর-পূর্ব রাজ্যে মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা স্থগিত করা হয়েছে। মৈতেই সম্প্রদায়কে তফসিলি উপজাতি (এসসি) বিভাগে অন্তর্ভুক্ত করার দাবির প্রতিবাদে একটি ছাত্র সংগঠনের ডাকা ঐক্য মিছিল চলাকালীন হিংসা ছড়িয়ে পড়ে। তখন থেকেই মণিপুর অশান্তির আগুনে জ্বলছে।
মণিপুরের সংখ্যাগরিষ্ঠ মৈতেই সম্প্রদায় দীর্ঘদিন ধরে এসটি মর্যাদার দাবি করে আসছে। সম্প্রতি, হাইকোর্টও তাদের দাবিকে সমর্থন করেছে এবং রাজ্য সরকারকে এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে একটি প্রস্তাব পাঠাতে নির্দেশ দেয়। শুধু তাই নয়, রাজ্য সরকার রাজ্যের বনাঞ্চল চুরাচাঁদপুরে অবস্থিত ৩৮টি গ্রামকে অবৈধ বসতি বলে ঘোষণার পাশাপাশি উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে। এ নিয়ে গত সপ্তাহে চুড়াচাঁদপুরেও হিংসা ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিবাদে বুধবার আদিবাসীরা মিছিল বের করে, সেই সময় হিংসা চূড়ান্ত আকার ধারণ করে।
কেন প্রতিবাদে আদিবাসী সম্প্রদায়?
প্রতিবাদের অনেক কারণ আছে, তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল জনসংখ্যা এবং রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব উভয় ক্ষেত্রেই মৈতেই সম্প্রদায়ের আধিপত্য। রাজ্য বিধানসভার ৬০টি আসনের মধ্যে ৪০টি আসনে মৈতেই সম্প্রদায় সংখ্যাগরিষ্ঠ। এমন পরিস্থিতিতে আদিবাসীদের আশঙ্কা, মৈতেই সম্প্রদায় যদি এসটি মর্যাদা পায়, তাহলে তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে যাবে। অশান্তির জেরে কুকি বিধায়কদের একটি দল মঙ্গলবার বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে দেখা করতে দিল্লি পৌঁছায়। তাদের দাবি দলের রাজ্য নেতৃত্বে পরিবর্তন, বিশেষ করে মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেনের বদল।
বিধায়কদের মধ্যে একজন, দাবি করেছেন যে রাজ্য প্রশাসন গত কয়েক বছরে মণিপুরের সম্প্রদায়কে “মেরুকরণ” করেছে, সম্প্রতি চুরাচাঁদপুর জেলার সংরক্ষিত বনভূমি থেকে গ্রামবাসীদের উচ্ছেকেই হিংসার কারণ বলে অভিহিত করেন তিনি। যদিও রাজ্য সরকার দাবি করেছে যে ইম্ফল উপত্যকায় একই রকম উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে, যেটি মৈতেই সম্প্রদায়ের অধ্যুষিত অঞ্চল। হাওকিপ সহ কুকি নেতারা উল্লেখ করেছেন যে বীরেন বারবার চুরাচাঁদপুর সম্প্রদায়কে “বিদেশী” এবং “বহিরাগত” বলে ইঙ্গিত করেছেন, যারা মায়ানমার থেকে মণিপুরে বসতি স্থাপন করেছেন।
দু’দিন আগে, মুখ্যমন্ত্রীর অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে বীরেন-এর একটি বার্তাও বিক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। হাওকিপ বলেছিলেন, “ভয় হল যে মৈতেইরা আদিবাসীদের জমি দখল করার চেষ্টা করছে, আমি মৈতেই বিরোধী নই, তবে একজন আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি হিসেবে আদিবাসীদের উদ্বেগ ও দাবি তুলে ধরা আমার কর্তব্য।”
মণিপুরে আগামী ৭২ ঘণ্টা গুরুত্বপূর্ণ, সেনাবাহিনীর পরবর্তী পরিকল্পনা প্রস্তুত, হিংসার ঘটনা সামাল দিতে তৎপর প্রশাসন। সেনা সূত্রে খবর, পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। হিংসার জেরে আগামী ৪৮ ঘন্টা বাতিল করা হয়েছে ট্রেন চলাচল। সেনা সূত্রে খবর, পরবর্তী দুই-তিন দিন আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ইতিমধ্যেই কেন্দ্র রাজ্যে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে রাজ্যজুড়ে বিপুল সংখ্যক সেনা মোতায়েন করেছে।
রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা দায়িত্বে থাকা একজন শীর্ষ আধিকারিক জানিয়েছেন কেন্দ্র মুম্বই, ঝাড়খণ্ড এবং গুজরাট থেকে র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্সের (আরএএফ) ছয়টি কোম্পানি এবং দিল্লি ও পাঞ্জাব থেকে ৬ কোম্পানি সিআরপিএফ এবং বিএসএফ-পাঠিয়েছে। হিংসার ঘটনায় পাঁচ জেলায় ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের জারি করা আদেশ অনুসারে, আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে বৃহস্পতিবার মোট ১২কোম্পানি আধাসামরিক বাহিনী মণিপুরে পৌঁছেছে। ইতিমধ্যেই স্পর্শকাতর এলাকায় সেনা ও আসাম রাইফেলস মোতায়েন করা হয়েছে। সূত্র অনুসারে, প্রাক্তন সিআরপিএফ ডিআইজি কুলদীপ সিংকে বিশেষ বিমানে মণিপুরে পাঠানো হয়।
সূত্রের খবর, কেন্দ্র আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে মণিপুরে আরও সেনা পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বৃহস্পতিবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দুটি বৈঠক করেছেন এবং মণিপুর এবং এর প্রতিবেশী রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
একটি ভিডিও বিবৃতিতে, মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং বলেছেন “দুটি সম্প্রদায়ের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির কারণেই এই হিংসার ঘটনা ঘটেছে। রাজ্যের জনগণকে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতার আবেদন করেছেন”। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সূত্রের খবর, মণিপুরের পরিস্থিতির কারণে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রাজ্যের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে কর্ণাটক সফর বাতিল করেছেন’। সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।