করোনা মহামারীর জেরে ভারতে 'গভীর ও দীর্ঘায়িত অর্থনৈতিক মন্দা' অনিবার্য ছিল। সোমবার এই মন্তব্য করেছেন দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা ডঃ মনমোহন সিং। তবে এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে নরেন্দ্র মোদী নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারকে তিনটি পথ বাতলেছেন মনমোহন।
বিবিসি-র সঙ্গে ই-মেইল কথোপকথনে ডঃ মনমোহন সিং বলেছেন, ভারতে অর্থনৈতিক মন্দা হল একটি 'মানবিক সংকট'। তাঁর কথায় 'সরকারের লকডাউনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি মানুষের যন্ত্রণার কারণ হয়ে উঠেছে।' এরপরই ডঃ সিং বলেছেন, 'যদিও মহামারী রুখতে সেই সময় লকডাউনই ছিল একমাত্র ও অনিবার্য কৌশল। তবে, লকডাউন ঘোষণার আকস্মিকতা এবংতার কঠোরতা ছিল নির্বোধ এবং অসংবেদনশীল।'
এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে ও অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে তিনটি পথের সন্ধার দিয়েছেন দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিং। তাঁর মতে, প্রথমত, মানুষের জীবন ও জীবিকা বাঁচাতে সরাসরি নগদ হস্তান্তর বা ক্যাশ ট্রান্সফার করতে হবে। এর ফলে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়বে ও বাজারে চাহিদার সৃষ্টি হবে। দ্বিতীয়ত, ব্যবসার মূলধনের জন্য যোগান বাড়াতে হবে সরকার পোষিত ক্রেডিট গ্যারান্টি প্রোগ্রামের মাধ্যমে। পুরো প্রক্রিয়াটাই সরকারকে সুনিশ্চিত করতে হবে। তৃতীয়ত, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে স্বায়ত্বশাসন দিতে হবে।
মনমোহন সিং মেনে নিয়েছেন যে মতে ঋণ অনিবার্য। কিন্তু তা যদি জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে, অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে হয় তবে তা সদর্থক। 'আমাদের ঋণ গ্রহণে কোনও লজ্জা নেই, কিন্তু বুদ্ধি দিয়ে তা কীভাবে ব্যবহার করছি সেটা দেখা প্রয়োজন।' ডঃ সিংকে উদ্ধৃত করে বলেছে বিবিসি।
আমদানির ক্ষেত্রে অন্যান্য বেশ কয়েকটি দেশের মতো অতি রক্ষণশীল হয়ে অধিকমাত্রায় কর চাপানোর সিদ্ধান্তেরও প্রবল সমালোচনা করেন ডঃ মনমোহন সিং। তাঁর কথায়, 'গত তিন দশক ধরে ভারতের বাণিজ্যনীতি শুধু অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে তাকা মানুষদেরই নয়, দেশের সবস্তরে লাভ পৌঁছে দিয়েছে।' সিং বলেছেন যে, 'আমি মন্দা শব্দটি ব্যবহার করতে চাই না। ওটা শুনতে খারাপ লাগে। বরং আমি বলব, অর্থনৈতিক এই মন্দগতি অনিবার্য এবং তা দীর্ঘমেয়াদী।'
মহামারীর আগেই আগেই ভারতের অর্থনীতিতে মন্দা প্রবণতা ছিল। ২০১৯-২০ অর্থবছরে জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ৪.২ শতাংশ। যা ছিল প্রায় এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম।
ন্যূনতম মেয়াদে ভারতে অর্থনৈতিক সংকোচনের বিষয়ে অনেক অর্থনীতিবিদ একমত হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে ডঃ সিং বলেছেন যে, 'যা যদি এমন হয়, তবে স্বাধীন ভারতে তা প্রথমবার হবে। যদিও আমার ধারনা সেটা ভুল বলে প্রমাণিত হবে।'
কঠোর লকডাউের শেষে দেশজুড়ে অর্থনৈতিক কাজকর্ম শুরু হয়েছে। অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ২০ সক্ষ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন