Advertisment

INDIAN EXPRESS EXCLUSIVE: মৌন মোদিকে নিয়ে সরব মনমোহন

’’সংবাদমাধ্যমে জেনেছিলাম যে, আমার কথা না-বলা নিয়ে উনি সমালোচনা করতেন। আমার মনে হয়, মৌনতাভঙ্গ নিয়ে উনি আমায় যে পরামর্শ দিতেন, সেটা ওঁরই অনুসরণ করা দরকার।’’- মনমোহন সিং

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
manmohon singh

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। ফাইল ছবি, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

জ্যোতি মালহোত্রা

Advertisment

দেশের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর কথার পাশাপাশি কয়েক কোটি টাকার পিএনবি কেলেঙ্কারি, সব নিয়ে অকপট প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। অন্যায় করে যেন কেউ পার না পেয়ে যায়, সে ব্যাপারে সরকারকে দৃঢ় পদক্ষেপ করতে বললেন দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। আর কী কী বললেন তিনি? ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারের নির্যাস-

কাঠুয়া, উন্নাও ও সুরাতের ঘটনায় আপনার প্রতিক্রিয়া?

এ তিনটি ঘটনা সারা দেশের চেতনাকে আমূল নাড়িয়ে দিয়েছে। স্বাধীন ভারতে এধরনের ঘটনা আমাদের প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার দুর্ভাগ্যজনক প্রতিচ্ছবি। আমি আশা করি, ভবিষ্যতে যাতে এধরনের ঘটনা আর না ঘটে, সেজন্য আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হব। তবে একই সঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব, এই ভয়ংকর ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে।

আপনি নিশ্চয়ই ইতিমধ্যেই জেনে ফেলেছেন যে, কাঠুয়ার কয়েকজন আইনজীবী ও জম্মু-কাশ্মীর সরকারের দুই মন্ত্রী কীভাবে পুলিশকে তাদের কাজ করতে বাধা দিয়েছেন

এটা সত্যিই ভয়াবহ যে আইনজ্ঞরাই আট বছরের মেয়ের হত্যার মত কঠোর বাস্তব থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। আর জম্মু-কাশ্মীর সরকারের ওই দুই মন্ত্রী যেভাবে সাম্প্রদায়িকতাকেও উস্কানি দিচ্ছিলেন তা অত্যন্ত কলঙ্কজনক।

বিজেপির দুই মন্ত্রী ইস্তফা দিয়েছেন। আপনার কেন মনে হয়, তাঁরা একাজ করেছেন?

এ বিষয়ে আমার খুব একটা জানা নেই। কিন্তু ওঁরা জানিয়েছেন যে, দলের হাইকম্যান্ডের নির্দেশেই ওঁরা কাঠুয়া গিয়েছিলেন। জানি না, ওঁদের হাইকম্যান্ডের অভিপ্রায় কী ছিল!

আপনার এমনটা মনে হয় কেন?

এটা আমাদের সিস্টেমের দুর্ভাগ্যজনক দিক। কেউ কেউ বিচারব্যবস্থাকে বাধা দেওয়ার জন্য গোপন আঁতাঁত করছেন, আবার একটা ভয়ঙ্কর অপরাধকে সাম্প্রদায়িক ইস্যুতে পরিণত করছেন। শিশুটির বাবা বলেছেন, ‘‘ও জানত না, কে হিন্দু, কে মুসলিম, তার বাঁ দিক কী, তার ডান দিক কী।’’ এই ঘটনাই বলে দেয় যে আমাদের দেশের অবস্থা কতটা দুর্ভাগ্যজনক।

আপনার কি মনে হয়, জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি এ ঘটনা ভালভাবে সামাল দিতে পারছেন?

উনি আরও ভালভাবে গোটা পরিস্থিতি সামাল দিতে পারতেন। উনি প্রথম থেকেই গোটা বিষয়টি নিজের হাতে নিয়ে কড়া ভাবে বিষয়টির মোকাবিলা করতে পারতেন। দৃঢ় পদক্ষেপ করতে পারতেন। শেষ পর্যন্ত উনি একটি জোট সরকারের শীর্ষস্থানে রয়েছেন।  ফলে আশা করাই যায় যে, উনি জোট সরকারের নেত্রী হিসেবে কালক্ষেপ না করে দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন।

আপনার কি মনে হয়, উনি জোটধর্ম পালন করেননি?

তেমনটাই তো মনে হচ্ছে।

বোধহয়, ওঁর উপর জোট শরিকের থেকে চাপ ছিল।

হ্যাঁ, এই চাপ থাকবেই। যদিও এ ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু জানা নেই আমার। জোটে থাকলে দেয়া-নেয়ার রীতি চলবেই। কিন্তু তার জন্য ৮ বছরের শিশুকন্যাকে মন্দিরে এক সপ্তাহ ধরে আটকে রেখে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনাকে যদি উপেক্ষিত হয়, তা সত্যিই দুর্ভাগ্যের।

গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ ঘটনায় মুখ খুলেছেন। তিনি বলেছেন দেশের মেয়েরা বিচার পাবে এবং অপরাধীরা শাস্তি পাবেই।

ভাল লাগছে যে উনি মুখ খুলেছেন এ নিয়ে। উনি যদি আগেই এ ব্যাপারে মুখ খুলতেন, তবে ওঁর দলের কর্মী এবং জম্মু-কাশ্মীরে ওঁর জোট শরিকদের কাছে সঠিক বার্তা যেত।

উনি আগে এ ব্যাপারে মুখ খুললে কী হতো?

আমার মনে হয়, যাঁরা সরকারে রয়েছেন, তাঁদের ঠিকঠাক সময়ে মুখ খোলা উচিৎ, যাতে তাঁদের অনুগামীরা সঠিক নেতৃত্ব পেতে পারেন।

আপনি যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন আপনার মৌনতা নিয়ে সরব হত বিজেপি...

কিন্তু নির্ভয়ার ঘটনায় আমরা সরব হয়েছিলাম। আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করেছিলাম, আইন সংশোধন করেছিলাম, বিচারপতি ভার্মার নেতৃত্বে আমরা কমিশন তৈরি করেছিলাম। ওই মেয়েটি সিঙ্গাপুরে মারা গিয়েছিল, ওঁর মৃতদেহ মাঝরাতে আনা হয়েছিল, আমি আর সোনিয়াজি, দু’জনেই ওঁর মরদেহ নিতে বিমানবন্দরে গিয়েছিলাম। গোটা বিষয়টি আমাদের নজরে আসা মাত্রই পদক্ষেপ করেছিলাম।

আপনার কি মনে হয়, জম্মু-কাশ্মীরে বিজেপি সরকারের জোট ঠিকঠাক পদক্ষেপ করছে?

বিস্তারিত না জেনে কাউকে দোষারোপ করতে চাই না। কিন্তু এটা সত্য যে, দীর্ঘদিন ধরে এ ঘটনায় কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি, ফলে প্রশাসনের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছে মানুষের।

আপনাকে যখন ‘মৌন-মোহন সিং’ বলে কটাক্ষ করা হয় বিজেপির তরফে, কী মনে হতো?

বহুদিন ধরে এসব মন্তব্যকে নিয়েই বেঁচে আছি।

বিশেষত, সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রধানমন্ত্রীর মুখ খোলা নিয়ে নানা রকমের মন্তব্য করা হয়েছে।

আমার মনে হয়, আমাকে দেওয়া পরামর্শগুলো অনুসরণ করে প্রধানমন্ত্রীর উচিৎ আরও বেশি মুখ খোলা। সংবাদমাধ্যমে জেনেছিলাম যে, আমার কথা না-বলা নিয়ে উনি সমালোচনা করতেন। আমার মনে হয়, মৌনতাভঙ্গ নিয়ে উনি আমায় যে পরামর্শ দিতেন, সেটা ওঁরই অনুসরণ করা দরকার।

গত কয়েক বছরে গণপিটুনিতে মুসলিমদের হত্যা নিয়ে প্রচুর ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

গত সপ্তাহে চণ্ডীগড়ে বলেছিলাম, যে সংখ্যালঘু, দলিত, মহিলারা দেশে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এ পরিস্থিতি আমাদের দেশ কোনওভাবেই মেনে নেবে না, মেনে নেওয়া উচিতও নয়।

কেন এমনটা ঘটছে বলে আপনার মনে হয়?

কয়েকজন ব্যক্তি সরকারের ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। ওঁরা ভাবছেন এসব করে ওঁরা পার পেয়ে যাবেন। মুসলিমদের পিটিয়ে মারার ঘটনাও আমাদের দেশের বর্তমান পরিস্থিতির দুর্ভাগ্যজনক চিত্র।

সরকারের কি আরও কিছু করা দরকার?

২০টি রাজ্যের ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা রাজ্য সরকারের দায়িত্ব। কেন্দ্র যেটা পারে, তা হল, সংখ্যালঘু, দলিত, মহিলাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য, আইনশৃ,ঙ্খলা রক্ষার্থে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারগুলিকে  প্রয়োজনীয় নির্দেশ পাঠানো। যাতে ওই সব রাজ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, দলিত শ্রেণির মানুষরা উপযুক্ত সম্মান পান।

আপনার কি মনে হয়, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির এসব ঘটনায় চোখ বন্ধ করে রয়েছে?

কয়েকটি রাজ্যে তো তেমনটাই হচ্ছে, যেমন রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ। যদি সরকার কড়া পদক্ষেপ করত, তবে এসব ঘটনা ঘটত না।

এছাড়াও ব্যাঙ্কিং সেক্টরে প্রচুর দুর্নীতি হচ্ছে...

ব্যাঙ্কিং সেক্টরের অবস্থা তো মোটেই ভাল নয়। এগুলো শুধু সরকারি ব্যাঙ্কেই হচ্ছে, এমন নয়। বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলিতেও আজকাল এসব ঘটনা ঘটছে। দ্বিতীয় বৃহত্তম বেসরকারি ব্যাঙ্কও এই বিশৃঙ্খলায় যুক্ত হয়ে পড়েছে। আমার মনে হয়, গোটা ব্যাঙ্কিং সেক্টরকে ঢেলে সাজানো দরকার। এতে অবশ্য সময় লাগবে। কিন্তু অন্যায় করে যাতে কেউ পালিয়ে যেতে না পারে, সে ব্যাপারে কড়া পদক্ষেপ করা দরকার।

সংসদে বাজেট অধিবেশন তো একেবারে পণ্ড হয়ে গেল...

সংসদে যাতে ভাল ভাবে কাজ হয়, সেটা দেখা সরকারের প্রাথমিক দায়িত্ব। কিন্তু সরকার আইনসভা বা বাজেটের মত বিষয়গুলিকে গুরুত্ব না দেওয়ার ঘটনা প্রমাণ করে যে সরকার কীভাবে সংসদকে পরিচালনা করছে।

অনুলিখন- সৌরদীপ সামন্ত

manmohon singh
Advertisment