ছত্তিশগড় সরকারের প্রস্তাবে সাড়া দিল মাওবাদীরা। ভূপেশ বাঘেলের নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় বসতে ইচ্ছুক নিষিদ্ধ এই সংগঠন। তবে শান্তি আলোচনায় বসার ক্ষেত্রে তাদের শর্ত রয়েছে। প্রশাসন তা মানলেই এমমাত্রা বৈঠক সম্ভব বলে জানিয়েছে মাওবাদীরা। শর্তটি হল যে, জেলে বন্দি মাওবাদী নেতাদের মুক্তি দিতে হবে ও নিরাপত্তা বাহিনী প্রত্যাহার করতে হবে। মাওবাদীদের এই শর্তে কী আদৌ ছত্তিগড় সরকার রাজি হবে? তা নিয়ে এখনও কিছু জানানো হয়নি।
এক মাস আগেই মুখ্যমন্ত্রী বাঘেল বলেছিলেন যে, তাঁর সরকার সংবিধানে বিশ্বাসী, তাই বিদ্রোহীদের সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত। সেই ঘোষণার প্রায় এক মাস পরে আলোচনার প্রস্তাবে শর্ত সাপেক্ষে সাড়া দিল মাওবাদীরা। উল্লেখ্য, ছত্তিশগড় দেশের নকশাল প্রভাবিত রাজ্যগুলির মধ্যে অন্যতম।
শুক্রবার থেকে মাওবাদীদের দ্বারা জারি ও সোশাল মিডিয়ায় প্রচারিত একটি বিবৃতিতে, মুখ্যমন্ত্রী বাঘেলকে বহিরাগত বলে কটাক্ষ করা হয়েছে। সমালোচনা করা হয়েছে তাঁর "দ্বৈত চরিত্র" নিয়েও। মুখ্যমন্ত্রী একদিকে আলোচনার প্রস্তাব দিচ্ছে, অন্যদিকে তাঁর সরকার বিমান হামলা চালাচ্ছে। একইসঙ্গে কীভাবে এটা সম্ভব তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মাওবাদী নেতৃত্ব। সাম্প্রতিক বিমান হামলার জন্য কে অনুমতি দিয়েছিল তা মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট করা উচিত বলে দাবি করেছে মাওবাদীরা।
মাওবাদীদের দণ্ডকারণ্য স্পেশাল জোনাল কমিটির (ডিকেএসজেডসি) মুখপাত্র বিকল্পের নামে দুই পৃষ্ঠার বিবৃতি জারি করা হয়েছিল, মে মাসে বস্তার জেলার ঝিরাম উপত্যকা হামলা সহ দক্ষিণ বস্তারে বেশ কয়েকটি মারাত্মক হামলা চালানোর ক্ষেত্রে এই মাও নেতৃত্বের ভূমিকা ছিল। ২০১৩ সালে ওই জায়গাতেই শীর্ষ কংগ্রেস নেতাদের হত্যা করা হয়েছিল।
সংবিধান সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের উল্লেখ করে নিষিদ্ধ সংগঠনটি বলেছে, সরকার জনগণের সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করছে। সরকার পঞ্চায়েতে তফসিলি এলাকার সম্প্রসারণ আইন এবং সংবিধানের পঞ্চম তফসিলের অধীনে গ্রামসভায় প্রদত্ত অধিকার লঙ্ঘন করছে বলে মনে করে মাওবাদীরা। তাদের মতে, সরকারের দেওয়া আলোচনার প্রস্তাবে সংগঠন রাজি, তবে এর অনুকূল পরিবেশ তৈরির দায়িত্ব প্রশাসনেরই।
আলোচনার জন্য মাওবাদীদের দ্বারা নির্ধারিত শর্তগুলির মধ্যে রয়েছে, দল এবং তার সঙ্গে সম্পৃক্ত সংগঠনগুলির উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ, বিমান হামলা বন্ধ করা, নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্প অপসারণ এবং সংঘর্ষ-বিধ্বস্ত এলাকা থেকে বাহিনী প্রত্যাহার এবং তাদের কারাবন্দি নেতাদের মুক্তি।
দাবির প্রতি প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে, মুখ্যমন্ত্রী বাঘেল বলেছেন যে, মাওবাদীরা যদি সংবিধানে বিশ্বাস প্রকাশ করে তবে সরকার যে কোনও প্ল্যাটফর্মে তাদের সঙ্গে আলোচনার জন্য প্রস্তুত। শনিবার সুরাজপুর জেলায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় বাঘেল বলেন, 'নকশালদের ব্যাকফুটে ঠেলে দেওয়ার জন্যই আমাদের সরকার আদিবাসীদের মন জয় করেছে।'
মাওবাদীদের দ্বারা বেঁধে দেওয়া শর্তের উপর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাম্রদ্বাজ সাহু এখানে বলেছেন যে আলোচনা শুধুমাত্র নিঃশর্তভাবে অনুষ্ঠিত হবে। গত মাসে, অতি বামরা দাবি করেছিল যে, নিরাপত্তা বাহিনী দক্ষিণ বস্তারে তাদের আস্তানাগুলিকে লক্ষ্য করার জন্য ড্রোন ব্যবহার করে বিমান হামলা চালিয়েছিল, এইঅভিযোগ বস্তার পুলিশ অস্বীকার করেছে।
Read in English