মহারাষ্ট্রে মারাঠা সংরক্ষণের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন হিংসাত্মক রূপ নিল। বিদ জেলার মাজালগাঁও তালুকে এনসিপি বিধায়ক প্রকাশ সোলাঙ্কের বাড়িতে পাথর ছুড়ে মারলেন উত্তেজিত জনতা। শুধু তাই নয়, সোমবার সেখানে দাঁড় করিয়ে রাখা বেশ কয়েকটি গাড়িতেও জনতা আগুন ধরিয়ে দেয়। পাশাপাশি, সোমবার সকালে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে ধুলে-শোলাপুর মহাসড়ক অবরোধ করেন মারাঠা সম্প্রদায়ের কয়েকশো সদস্য। মহারাষ্ট্র স্টেট রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন (এমএসআরটিসি) এর জেরে নয়টি জেলায় তার পরিষেবা স্থগিত করে দেয়।
বাসে পাথর নিক্ষেপ
এই জেলাগুলোর বেশিরভাগই মারাঠাওয়াড়া অঞ্চলের। কয়েকটি জেলায় পাথর নিক্ষেপকারীরা বাসগুলিকে নিশানা করেছে। বিধায়ক এবং সাংসদ-সহ বেশ কয়েকজন রাজনীতিবিদকে মারাঠা কর্মীরা গ্রামে প্রবেশ করতে বাধা দিয়েছেন। এই বিধায়ক এবং সাংসদরা মারাঠা সংরক্ষণের দাবি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিণ্ডেরর ছেলে সাংসদ শ্রীকান্ত শিণ্ডে, মন্ত্রী দাদা ভুসে-সহ বেশ কয়েকজন নেতা বিদ এলাকায় তাঁদের সফর বাতিল করেছেন। তার মধ্যেই উত্তেজিত জনতা মাজলগাঁও নগর পরিষদের অফিসে আগুন ধরিয়ে দেয়। পুলিশের গাড়িতে পাথর ছুড়ে মারে। বাজার বন্ধেরও ডাক দিয়েছে।
বিধায়ককে দোষারোপ করলেন জারাঙ্গে-পাতিল
সোলাঙ্কের বাড়িতে হামলার কথা জানিয়েছেন মারাঠা নেতা মনোজ জারাঙ্গে-পাতিল। সোমবার তাঁর অনশনের ষষ্ঠ দিন। সোলাঙ্কের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি আন্দোলনকারীদের উসকে দিয়েছেন। পাতিল দাবি করেছেন, মারাঠারা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করছেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী তাঁর যে লোকেরা আন্দোলনের বিরুদ্ধে বিতর্কিত বিবৃতি দিচ্ছেন, তাদের নিয়ন্ত্রণ করছেন না। একইসঙ্গে পাতিল বলেন, 'মারাঠারা কখনও হামলা চালাবে না। অন্য কেউ নিশ্চয়ই করেছে। মারাঠারা যদি এটা করে থাকে, তাহলে বিধায়ক অবশ্যই তাঁদের উসকানি দিয়েছেন। বিতর্কিত বক্তৃতা করার অভ্যাস আছে তাঁর। তবুও আমি সমস্ত মারাঠাদের কাছে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করার এবং আত্মহত্যার মত চরম পদক্ষেপ না-নেওয়ার আবেদন করছি। আমি পুলিশকে আগেই বলে দিচ্ছি যে মারাঠা সম্প্রদায়ের সদস্যরা বিক্ষোভ করছেন শান্তিপূর্ণভাবে। তাঁদের হয়রান না-করতে। মারাঠারা যদি হয়রানির শিকার হন, আমি নিজে সেখানে যাব এবং এর প্রতিক্রিয়া হবে। আমি সিএম শিণ্ডেকে তাঁর লোকেদের নিয়ন্ত্রণ করার অনুরোধ করছি। বিশেষ করে সেই লোকেদের, যাঁরা বিতর্কিত বিবৃতি দিচ্ছেন।'
অনশন ভাঙতে নারাজ
এই পরিস্থিতিতে মহারাষ্ট্রের রাজস্বমন্ত্রী রাধাকৃষ্ণ ভিখে-পাটিল আন্দোলনকারী জারঙ্গে-পাতিলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তাঁকে অনশন ভাঙার আহ্বান জানিয়েছেন। মন্ত্রী তাঁকে বলেছেন, মহারাষ্ট্র সরকার বিচারপতি স্যান্ডে কমিটির কাছ থেকে একটি প্রাথমিক রিপোর্ট পেয়েছে। জেলাশাসকদের একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে। পালটা জারাঙ্গে-পাতিল, সমস্ত মারাঠারা সংরক্ষণ না-পাওয়া পর্যন্ত, তাঁর অনশন প্রত্যাহার করতে রাজি হননি। তিনি বলেছেন যে সরকারকে অবশ্যই কোনও বৈষম্য ছাড়াই সমস্ত মারাঠাদের কুনবি বর্ণের শংসাপত্র দিতে হবে।
দাবি না-মিটলে বৃহত্তর আন্দোলন
মারাঠা নেতা জারঙ্গে-পাতিলের দাবি যে রাজস্বমন্ত্রী তাঁকে বলেছিলেন যে মারাঠাওয়াড়া থেকে মারাঠাদের কুনবি শংসাপত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত জেলাশাসকদের বৈঠকে নেওয়া হবে। জারঙ্গে-পাতিল বলেন, 'আমি তাঁকে বলেছিলাম যে প্রতিবাদটি প্রত্যাহার করা হবে না। মারাঠাদের কুনবি বর্ণের শংসাপত্র দিতে হবে। যাঁদের কুনবি বর্ণের রেকর্ড পাওয়া গেছে, এমন সমস্ত মারাঠাদের সংরক্ষণ করা উচিত। না-হলে, আমি অনশন প্রত্যাহার করব না।' এই ব্যাপারে জারাঙ্গে- পাতিল বলেন, 'তিনি এখনও বুঝতে পারছেন না যে মারাঠা সম্প্রদায়ের সংরক্ষণের ঘোষণা করতে মুখ্যমন্ত্রীর আরও কত সময় লাগবে! জারাঙ্গে-পাতিল আরও বলেছেন যে এটি তার ছয়-পর্যায়ের সংরক্ষণ আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায়। দাবি না-মিটলে তাঁর আন্দোলনের তৃতীয় পর্বটি ১ নভেম্বর থেকে শুরু হবে।