Advertisment

এই বাঙালির হাতেই গড়ে ওঠে মেক্সিকোর কম্যুনিস্ট পার্টি

রাশিয়ার বাইরে পিসিএম-ই ছিল কমিউনিস্ট পার্টিগুলির মধ্যে অন্যতম, যা মেক্সিকোয় শ্রমিক-আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

রাশিয়ার অক্টোবর বিপ্লবের প্রভাবে ভারত তথা বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে বামপন্থী চেতনা। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে এদেশের রাজনৈতিক ভাবধারা বিভক্ত হয়ে যায় গান্ধীর মতাদর্শ এবং উগ্র কম্যুনিজমের মধ্যে। এতটাই, যে সারা বিশ্বে কম্যুনিজমের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে একজন হয়ে ওঠেন বাঙালি জাতীয়তাবাদী মানবেন্দ্রনাথ রায়।

Advertisment

প্রথম জীবনে তাঁর নাম ছিল নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, এবং অল্প বয়সেই জোর গলায় ১৯০৫-এর বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করে রাজনৈতিক মঞ্চে অবতীর্ণ হন তিনি। এর পর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের টালমাটাল সময়ে নরেন্দ্রনাথ এবং অন্যান্য অনেকেই এই সিদ্ধান্তে পৌঁছন যে ভারতে বৃটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালানোর জন্য আবশ্যিক জার্মান সহায়তা। ১৯১৫ নাগাদ অর্থ সংগ্রহ করার উদ্দেশ্যে ভারত ছাড়েন নরেন্দ্রনাথ, এবং অচিরেই জড়িয়ে পড়েন ক্রমবর্ধমান কম্যুুনিস্ট সংগ্রামের সঙ্গে।

প্রথম ভারত ছাড়ার সময় মেক্সিকোর কোনো ভাবনাই ছিল না নরেন্দ্রনাথের মনে। তাঁর গন্তব্য ছিল ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপ। কিন্তু ১৯১৬-র শেষের দিকে তিনি গিয়ে পৌঁছন আমেরিকায়, এবং তার পরের বছরই এপ্রিল মাসে জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে আমেরিকা। ইন্দো-জার্মান চক্রান্তে লিপ্ত ভারতীয় এবং তাঁদের জার্মান সহযোগীদের ওপর স্বাভাবিকভাবেই পড়ে সরকারি নজর, যা এড়াতে অন্যান্য অনেক ভারতীয় বিপ্লবীর সঙ্গে আমেরিকার দক্ষিণে মেক্সিকোতে পালিয়ে যান নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য ওরফে মানবেন্দ্রনাথ রায়।

তাঁর নিজেরই লেখা অনুযায়ী, এই সময় ভারতের পরিসর ছাড়িয়ে তাঁর নজর ঘুরেছিল আন্তর্জাতিক স্তরে বিপ্লবের প্রয়োজনীয়তার দিকে। কিন্তু মেক্সিকোয় পৌঁছেও জার্মান কূটনীতিকদের সাহায্যে ভারতে বিপ্লবী কার্যকলাপে জড়িত থাকেন তিনি। ২০১৪ সালে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে মাইকেল গোয়েবেল লিখেছেন, "জার্মানির সঙ্গে ষড়যন্ত্রকারী আঁতাতের সম্ভাবনা যত ক্ষীণ হয়ে আসতে লাগল, উত্তর আমেরিকা থেকে বাধ্যতামূলক সামরিক সেবার কবল এড়াতে পালিয়ে আসা কিছু বামপন্থীর সঙ্গে মেলামেশা বাড়ালেন মানবেন্দ্রনাথ।"

১৯১৭-র বলশেভিক বিপ্লবের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সে বছরই মেক্সিকান কম্যুনিস্ট পার্টির পত্তন করলেন মানবেন্দ্রনাথ। পাশে পেলেন উত্তর আমেরিকার বামপন্থীদের, এবং কিছু মেক্সিকান বিচ্ছিন্নতাবাদী ও নৈরাজ্যবাদীকে।

রাশিয়ার বাইরে পিসিএম-ই ছিল কমিউনিস্ট পার্টিগুলির মধ্যে অন্যতম, যা মেক্সিকোয় শ্রমিক-আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। এই পিসিএম-এর সূত্রেই কমিউনিস্ট আন্দোলনের বিশ্বব্যাপী প্রসারে পরিচিতি পান এম.এন. রায়। স্বয়ং লেনিন তাঁকে এবং তাঁর দলকে কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনালস কংগ্রেসে শরিক হওয়ার আহ্বান জানান। মানবেন্দ্রনাথ কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনালসের (যা থার্ড ইন্টারন্যাশনাল নামেও পরিচিত) গঠনে এবং ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রগুলির ক্ষেত্রে নীতি নির্ধারণেও সাহায্য করেন।

গোয়েবেল লিখছেন, "জার্মানির আর্থিক প্রশ্রয়প্রাপ্ত একজন ভারতীয় জাতীয়তাবাদী নেতা থেকে আন্তর্জাতিক বিপ্লব-আন্দোলনে মানবেন্দ্রর উত্তরণ ঘটে মেক্সিকোতে।" এবং সঙ্গে যোগ করছেন, মেক্সিকোর কর্মকাণ্ডের সময়েও মানবেন্দ্রনাথের দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল ভারতের ঔপনিবেশিকতা-বিরোধী আন্দোলনের উপর।

১৯২০ সালে মস্কোয় চলে আসার পর আর মেক্সিকোয় ফেরেননি এম.এন. রায়। গোয়েবলসের কথায়, "যে বইটি উনি মেক্সিকোয় থাকাকালীন লিখেছিলেন, 'Some Opinions about British Administration in India' এবং মেক্সিকো ছাড়ার দু'বছর পরের 'India in Transition', তাতে ভারতের কথাই প্রাধান্য পেয়েছিল। লাতিন আমেরিকা বা মেক্সিকো নয়। তাঁর রাজনৈতিক অনুগামীরা সাক্ষী, ভারতই থাকত তাঁর চিন্তা-ভাবনা জুড়ে।"

মেক্সিকো আজও মনে রেখেছে তাঁকে। যে বাড়িতে তিনি দুই বছর কাটিয়েছিলেন, তা এখন একটি নাইটক্লাব। যার নাম এম.এন. রায়ের নামেই। মানবেন্দ্রনাথ রায়ের প্রয়াণ দেরাদুনে, ১৯৫৪ সালে।

may day
Advertisment