যাদবপুরের পর অশান্তির আঁচ শহরের আরও এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। একদিকে প্রবেশিকার দাবিতে আমরণ অনশনে বসেছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা, অন্যদিকে মঙ্গলবার দুপুর থেকে নতুন হস্টেলের দাবিতে অনশনে বসলেন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তাররা। এই অশান্তির বীজ বপন হয়েছিল দু-সপ্তাহ আগেই। কলেজের নতুন হস্টেল কেবল প্রথম বর্ষের ছাত্রদের জন্য, এই মর্মে একটি বিজ্ঞপ্তি জারির পরেই ছড়ায় উত্তেজনা।
সোমবার বিকেল তিনটে থেকে হস্টেলের দাবিতে ধর্নায় বসেছেন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তাররা। কমনরুমে মালপত্র সহ ৬০ ঘণ্টারও বেশি সময় অবস্থান করছিলেন তাঁরা। ঘেরাও হন প্রিন্সিপাল। তাঁর থেকে অভিযোগ পেয়ে কলেজ চত্বরে বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে হাজির হন উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা। তবে পড়ুয়াদের অভিযোগ, প্রিন্সিপালকে উদ্ধারের নামে পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে সিনিয়র ছাত্রছাত্রীদের উপরে।
হস্টেলের দাবিতে আমরণ অনশনে বসল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা#ieBangla pic.twitter.com/Bx8LLP9MKo
— IE Bangla (@ieBangla) July 10, 2018
এখানেই শেষ নয়, তাঁদের দাবি, নতুন হস্টেলে শুধুমাত্র প্রথম বর্ষের ছাত্রদেরই রাখা হবে এই মর্মে বিজ্ঞপ্তি জারির পরও লেডিজ পিজিটি হস্টেলের সমস্ত আবাসিককে স্থানান্তরিত করা হয়েছে নতুন হস্টেল বিল্ডিং-এই। অভিযোগ, গত ১০ দিনে কোনও কলেজ কাউন্সিল মিটিং বা অফিসিয়াল নোটিশ ছাড়াই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। এতে আরও উত্তপ্ত হয়েছেন পড়ুয়ারা। এ বিষয়ে অধ্যক্ষ জানান, পিজিটির অর্থাৎ স্নাতকোত্তরের মেয়েদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। মাঝরাতেও কাজের জন্য বেরতে হয় তাঁদের, সেক্ষেত্রে ক্যাম্পাসের মধ্যেই তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করা জরুরি ছিল।
এক শিক্ষিকার কথায়, "এ বিষয়ে আমরা খুব বেশি কিছু জানি না। তবে আগে ১৫০ জন ছাত্রছাত্রী ছিল, এখন সংখ্যাটা বেড়ে দাড়িয়েছে ২৫০। সেক্ষেত্রে থাকার কিছু সমস্যা হওয়াটা স্বাভাবিক। অধ্যক্ষ উচ্ছল ভদ্রের কথায়, "আমি এবং আমার সহকর্মীরা ওদের অনুরোধ করেছি অবস্থান তুলে নেওয়ার জন্য, ওরা শোনেনি। শান্তভাবে বসে যে সমস্যার সমাধান করা যেত, অযথা অভব্য আচরণ করে সেই পরিস্থিতি আরও জটিল করল। এর পেছনে অন্য উদ্দেশ্য আছে কিনা আমার জানা নেই।"
ভবিষ্যতে আবারও পুলিশি হস্তক্ষেপের সম্ভবনা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে উচ্চলবাবু সাফ জানিয়ে দেন, ভবিষ্যতে প্রয়োজনে যেকোন উপায়ই অবলম্বন করতে পারেন তিনি। তাঁর দাবি, মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া বা এমসিআই-এর নির্দেশ অনুযায়ী নতুন হস্টেলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বহু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, নতুনদের বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে থাকে সিনিয়ররা, চলতে থাকে র্যাগিংও। অথচ এই সময়টা প্রথম বর্ষের কাছে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। সেই কারণেই প্রথম বর্ষের ছাত্রথাত্রীদের বাকিদের থেকে আলাদা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি এও জানান, সিনিয়র ছাত্রছাত্রীদের হস্টেল সংক্রান্ত কোনও সমস্যা থাকলে ভর্তি প্রক্রিয়া মিটে যাওয়ার পরই সে বিষয়ে বৈঠক বসার কথা আছে।
আন্দোলনকারীদের দাবি, দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ বর্ষের অনেক ছাত্রই হস্টেল পাননি। তাঁরা বাইরে থেকে পড়াশোনা করছেন। বহুদিন ধরেই ভাঙাচোরা হস্টেলে কার্যত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে থেকেছেন তাঁদের অধিকাংশ। তাঁদের অভিযোগ, বিষয়গুলি অধ্যক্ষকে একাধিকবার জানানো সত্ত্বেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, বরং তিনি সাফ জানিয়েছেন, এ নিয়ে তিনি ভাবিত নন। পড়ুয়াদের অভিযোগ, প্রথম বর্ষের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে সংঘাত বাঁধাতেই মূলত এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অধ্যক্ষ। এ প্রসঙ্গে প্রিন্সিপাল জানান, পি ডব্লু ডি হস্টেল সারাই-এর কাজ করছে। ছাত্রছাত্রীদের ধৈর্য্য ধরতে হবে।
তবে পড়ুয়ারা এই বক্তব্য মানতে নারাজ। যতক্ষণ না তাঁদের দাবি মেনে অবিলম্বে নতুন হস্টেলে তাঁদের স্থানান্তরিত করা হচ্ছে, ততক্ষণ অনশন চলবে বলে জানিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তাররা।