Advertisment

মীরাটের মারের ভিডিওর জেরে ব্যাকফুটে উত্তর প্রদেশ পুলিশ

"লজ্জা করে না? দেখেশুনে এক (মুসলিমদের প্রতি অসম্মানজনক বিশেষণ) বেছে নিতে হলো? হিন্দু পাওয়া গেল না?" সঙ্গে সঙ্গে একের পর এক আঘাত করছেন কনস্টেবল প্রিয়াঙ্কা সিং।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

সম্প্রতি উত্তর প্রদেশের মীরাট শহরে এক মহিলা পুলিশকর্মীর হাতে মার খান এক তরুণী। তাঁর 'অপরাধ'? তিনি নাকি তাঁর এক মুসলিম ক্লাসমেটের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন। সেই মারের একটি ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতেই নড়েচড়ে বসেছে উত্তর প্রদেশ পুলিশ। ২৯ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একজন পুলিশকর্মী গাড়ি চালাচ্ছেন, এক তরুণী, স্কার্ফে যাঁর মুখ ঢাকা রয়েছে, বসে আছেন গাড়ির পিছনে, এবং তাঁর পাশেই বসে রয়েছেন এক মহিলা পুলিশকর্মী। পুরুষকণ্ঠে শোনা যাচ্ছে, "লজ্জা করে না? দেখেশুনে এক (মুসলিমদের প্রতি অসম্মানজনক বিশেষণ) বেছে নিতে হলো? হিন্দু পাওয়া গেল না?" আর তার সঙ্গে সঙ্গেই দেখা যাচ্ছে তরুণীর মাথায় একের পর এক থাপ্পড় মেরে চলেছেন কনস্টেবল প্রিয়াঙ্কা সিং। গত ২৩ সেপ্টেম্বর মেডিক্যাল কলেজ থানার আওতায় এ ঘটনা ঘটেছে।

Advertisment

প্রিয়াঙ্কা জানিয়েছেন, তিনি তাঁর উর্ধ্বতন অফিসারের আদেশ পালন করছিলেন মাত্র, যার মূল্য দিতে হচ্ছে তাঁকে। এবং তিনি কারোর ক্ষতি করতেই পারেন না, যেহেতু তিনি নিজেই "শোষিত সম্প্রদায়ের" অন্তর্ভুক্ত। তরুণীটির পরিবার, এবং তিনি যে নার্সিং কলেজে চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী, সেই কলেজের অধ্যক্ষ, তাঁকে সম্পূর্ণভাবে সমর্থন করছেন। সেই মুসলিম ছাত্রটি অজ্ঞাতবাসে রয়েছেন। প্রিয়াঙ্কার সহকর্মীরা অবশ্য তাঁর পাশে দাঁড়ান নি। দুবছর আগে কনস্টেবল হওয়া প্রিয়াঙ্কা এবং তাঁর তিন সহকর্মী, কনস্টেবল সালেক চাঁদ, কনস্টেবল নীতু সিং ও হোম গার্ড সাঁইসরপাল কে বরখাস্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি শুরু হয়েছে ঘটনার পুলিশি যাচাই।

নীতু দাবি করেছেন, তিনি সামনের সিটে বসার ফলে পেছনের সিটে কী হচ্ছে দেখতে পাননি। সালেক চাঁদ বলেছেন তিনি প্রিয়াঙ্কাকে থামানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সেটার ভিডিও হয় নি। ড্রাইভার সাঁইসরপাল, যিনি সম্ভবত ভিডিও তুলেছিলেন, নাকি এতটাই অসুস্থ যে কথা বলার অবস্থায় নেই, জানিয়েছেন তাঁর ভাই।

দিল্লিতে নিজের আত্মীয়ের বাড়ি থেকে ফোনে ওই তরুণী প্রিয়াঙ্কার দাবি নস্যাৎ করে দিয়েছেন। "এখন উনি যা খুশি বলতে পারেন, সত্যিটা সবার চোখের সামনে রয়েছে। আমি শুধু পড়াশোনায় ফিরে যেতে চাই," বলেছেন তিনি। হাপুর তহসিলে তাঁর নিজের বাড়িতে বসে ওই তরুণীর মা বলেছেন, "বেশিরভাগ রবিবারই ও বাড়ি আসত। ও কোনও ভুল কাজ করতেই পারে না। ওকে যারা ওর বন্ধুর বাড়িতে পেয়েছিল, তারা আমাদের জানাতে পারত। দুজনের গায়ে হাত তুলল কেন?"

মীরাটের এস পি সিটি রণবিজয় সিং জানান, “ছেলেটি কলেজ হস্টেলে থাকত না, এদিন জাগৃতি বিহারে ছেলেটির আবাসনে যায় মেয়েটি। সেখানেই কিছু মানুষ জমায়েত হয় এবং ঝামেলার সৃষ্টি করে। এরপর ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে এবং সুরক্ষার জন্য ভ্যানে তুলে নিয়ে যায় ওই ছেলেমেয়ে দুটিকে। এ বিষয়ে কোনও এফআইআর দায়ের করতে চাননি তাঁদের অভিভাবকরাও।"

এদিকে ওই মুসলিম ছাত্রটি ফোন করে জানিয়েছেন, "সকাল ১১.৩০ নাগাদ ও আমার কাছে নোট নিতে এসেছিল, যে সময়ে কমপক্ষে ১৫-২০ জন আমাকে নির্মমভাবে মারধর করে। আমার চোখে থেকে রক্ত বেরোচ্ছিল, এবং আমি শ্বাস নিতে পারছিলাম না।" বুধবার ৪৫ সেকেন্ডের আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, জনতার উপস্থিতিতে গণপ্রহারের মাঝে শোনা যাচ্ছে, "এক এক করে তোদের মারব। কেন এখানে ফ্ল্যাট নিয়েছিস?"

আরও পড়ুন : পরকীয়ার শাস্তি; ত্রিপুরায় জুতোর মালা পরিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে পেটানো হল মহিলাকে

দুজন পরিবারের তরফ থেকে কোনো অভিযোগ নেই। কিন্তু ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৪৭ (দাঙ্গা), ৩২৩ (স্বেচ্ছায় শারীরিক আঘাত করা), ৪৫২ (অনধিকার প্রবেশ), ২৯৮ (ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত হানা), ৫০৪ (ইচ্ছাকৃত অপমান), ৫০৬ (ভয় দেখানো) ধারায় এফআইআর করা হয়েছে গণপ্রহারে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে।

অন্যদিকে, ২০১২ সালে চালু হওয়া নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ জানিয়েছেন, "ব্যক্তিগত সম্পর্কে হস্তক্ষেপ করার কোনও অধিকার কারোর নেই। আমাদের ৩০০ ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে, যাদের মধ্যে ৫ বা ১০ শতাংশ পুরুষ। আমি আগে এই দুই ছাত্র ছাত্রীর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ পাইনি।" দুজনের সহপাঠী ও বন্ধুরা বলেছেন ঘটনাটিতে তারা বিস্মিত এবং স্তম্ভিত।

uttar pradesh
Advertisment