Muhammad Yunus: ২০০৬ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মহম্মদ ইউনুস বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হবেন। সোমবার (৫ আগস্ট), সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মীয়-স্বজনদের জন্য কোটা নিয়ে শুরু হওয়া চলমান বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ঘোষণা করেন।
৮৪ বছরের ইউনুস একজন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত অর্থনীতিবিদ এবং তিনি বাংলাদেশে ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থার পথপ্রদর্শক। যা বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশিকে চরম দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করেছে বলে মনে করা হয়। যাইহোক, তবে হাসিনার সঙ্গে তাঁর হিমশীতল সম্পর্ক নিয়ে সবাই অবগত, হাসিনা একবার তাঁকে গরিবদের "রক্ত চোষা"র জন্য অভিযুক্ত করেছিলেন। হাসিনার শাসনামলে, ইউনুসের বিরুদ্ধে জালিয়াতি, আর্থিক তছরুপ এবং অর্থ আত্মসাৎ-সহ ২০০টিরও বেশি মামলা দায়ের করা হয়েছিল।
ইউনুস কে, তাঁর ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থা কী, কেন তিনি হাসিনার সঙ্গে হিমশীতল সম্পর্ক শেয়ার করেছিলেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে কী কী মামলা রয়েছে তা এখানে এক নজরে দেখে নেওয়া যাক।
মহম্মদ ইউনুস কে?
১৯৪০ সালে তিনি চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। নোবেল বিজয়ী এবং গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক মহম্মদ ইউনুস ১৯৬৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসির ভ্যান্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তীকালে মিডল টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটির সহকারি অধ্যাপক হন। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ গঠিত হওয়ার পর তিনি স্বদেশে ফিরে আসেন এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রধান নিযুক্ত হন। ৮৪ বছর বয়সী এই বৃদ্ধ অর্থনীতিবিদের সঙ্গে শেখ হাসিনার একটি শৈত্য সম্পর্ক ছিল। তাঁর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আদালতে দুর্নীতির মামলা চলছিল। যদিও সেই অভিযোগগুলো মহম্মদ ইউনুস অস্বীকার করেছেন।
‘গরিবের ব্যাংকার’
স্বাধীনতা-পরবর্তী বছরগুলোতে বাংলাদেশ যখন তার অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে এবং দারিদ্র্য মোকাবিলার জন্য সংগ্রাম করছে, সেই সময় ইউনুস দরিদ্রদের সাহায্য করার জন্য একটি অনন্য ধারণা প্রচলন করেছিলেন। তিনি এমন উদ্যোক্তাদের ছোট ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, যাঁরা সাধারণত ব্যাংক লোন পান না। একটি আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক গ্রুপের প্রোফাইলে বলা হয়েছে যে, প্রাথমিক স্থানীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর, ‘১৯৮৩ সালে ইউনুসের উদ্যোগটি গ্রামীণ ব্যাংক হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পায়।’ সেই মডেল এখনও পর্যন্ত ১০০টিরও বেশি দেশে নকল করা হয়েছে। লক্ষ লক্ষ দরিদ্র ব্যক্তিকে দারিদ্রসীমার ওপরে তুলে ধরার জন্য গ্রামীণ ব্যাংককে কৃতিত্ব দেওয়া হয়েছে। এই ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৯০ লক্ষ মানুষের মধ্যে ৩৪.০১ বিলিয়ন ডলার ($) জামানত-মুক্ত ঋণ বিতরণ করেছে। গত বছর রিপোর্টে এমনটাই জানিয়েছে, বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক ডেইলি সান। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, ঋণ পুনরুদ্ধারের হার ৯৭.২২%। ২০০৬ সালে, ইউনুস ও গ্রামীণ ব্যাংক যৌথভাবে শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার পান। ‘নিচুতলার মানুষের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য’ ইউনুস ‘গরিবের ব্যাংকার’ পরিচিতি লাভ করেন।
আরও পড়ুন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পদে নোবেলজয়ী ইউনুসকে চান বিক্ষোভকারীরা, জানেন কে তিনি?
ইউনুস ও হাসিনার সম্পর্ক
নোবেল পুরস্কার জেতার পরই ইউনুস নিজস্ব রাজনৈতিক দল গঠনের চিন্তা শুরু করেন। যা হাসিনা ভালভাবে গ্রহণ করেননি। ২০০৯ সালে যখন হাসিনা ক্ষমতায় ফিরে আসেন, তখন তাঁর সরকার গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান হিসাবে দরিদ্র গ্রামীণ মহিলাদের কাছ থেকে ঋণ পুনরুদ্ধার করার জন্য বলপ্রয়োগ ও অন্যান্য উপায় অবলম্বন করার অভিযোগে ইউনুসের কর্মকাণ্ড নিয়ে একাধিক তদন্তের নির্দেশ দেন। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে, চলমান সংকট এবং বিরোধী দলগুলো এই বিক্ষোভের পিছনে রয়েছে বলে হাসিনা যে অভিযোগ করেছিলেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে ইউনুস বলেন, ‘সরকার একটি মিথ্যা তৈরির কারখানা। ক্রমাগত মিথ্যা কথা বলে এই সরকার। আর, সেগুলো তারা নিজেরাই বিশ্বাস করতেও শুরু করে। তাই তারা নিজেদের মিথ্যার জালে বন্দি।'
ইউনুসের বিরুদ্ধে কী কী মামলা?
অতি সম্প্রতি, এই বছরের জানুয়ারিতে, ইউনুস এবং তার টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি গ্রামীণ টেলিকমের অন্য তিন কর্মকর্তাকে বাংলাদেশের শ্রম আইন লঙ্ঘনের জন্য ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের জামিন দেওয়া হয়।
২০১৫ সালে, ১.৫১ মিলিয়ন ডলারের কর পরিশোধ না করার অভিযোগে বাংলাদেশের রাজস্ব কর্তৃপক্ষ তাঁকে তলব করেছিল।
তার দুই বছর আগে, তাঁর নোবেল পুরস্কার এবং একটি বই থেকে রয়্যালটি-সহ সরকারি অনুমতি ছাড়া অর্থ গ্রহণের অভিযোগে তাকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন অস্থির বাংলাদেশ, বড় অশান্তির আশঙ্কা, কীসের ভয় পাচ্ছে ভারত?
২০১১ সালে, ইউনুসকে সরকারি অবসর বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে অপসারণ করা হয়।
ইউনুসের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। গত বছরের আগস্টে, প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং রাষ্ট্রসংঘের প্রাক্তন মহাসচিব বান কি-মুন-সহ ১৬০ জন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব ইউনুসের "লাগাতার বিচারবিভাগীয় হয়রানির" নিন্দা জানিয়ে একটি চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন।