সাতসকালেই ঘুম থেকে স্কুল যাওয়ার আগে জামাকাপড় খুলে নিয়ে প্লাস্টিকে ভরে নেনে কচিকাঁচাদের দল। অবাক হলেন? ভাবছেন স্কুলে যাওয়ার আগে জামাকাপড় পড়ার বদলে কেন খুলে প্লাস্টিক ব্যাগে ভরছেন স্কুল পড়ুয়ারা? আসলে স্কুল যেতে পার হতে হবে বিশাল নদী। বুক সমান জলে রয়েছে সাপ-কুমিরের আতঙ্ক। তারপরই সেই ভয়কে তুচ্ছ করে চলছে ‘মানুষ’ হয়ে ওঠার মরিয়া লড়াই।
মধ্যপ্রদেশের ধর জেলার এক উপজাতীয় গ্রামের পড়ুয়াদের এভাবেই ফি দিন নদী পেরিয়েই স্কুলে যাতায়াত করতে হয়। একেবারে প্রাণের ঝুঁকি নিয়েই।
বছর আটেকের রোহিত দামা, ১১-এর কৃষ্ণা দামারর মত গ্রামের আদিবাসী পড়ুয়াদের এটাই রোজকার রুটিন। স্কুলে যাওয়ার আগে তারা তাদের স্কুল ইউনিফর্ম খুলে পরিষ্কার প্লাস্টিকের ব্যাগের মধ্যে ‘প্যাক করে’। চপ্পলগুলি থাকে নদীর পাড়েই। এরপরই স্রোতের বিপরীতে নদীতে ঝাঁপ দেন তারা সকলেই। সাঁতার কাটতে কাটয়ে কোটেশ্বরী নদী পেরিয়ে খালি পায়ে কাচানারিয়া গ্রামে তাদের স্কুলে পৌঁছায় এই কচিকাঁচাদের দল। মধ্যপ্রদেশের ধর জেলার এমন ছবি সামনে আসতেই তোলপাড় পড়ে গিয়েছে দেশজুড়ে।
বছর বিয়াল্লিশের গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য মোহন দামার জানিয়েছেন, পাঁচ বছর ধরে বাচ্চাদের তিনি নদী পার করে বেড়াচ্ছেন৷ তিনি বলেন, “ছোট বাচ্চারা নিজেরা অনেক সময় নদী পার হতে পারে না। অনেকে সাঁতার জানে না বা খুব ছোট। তাদের বাবা-মায়েরা খুব ভোরে মাঠে চাষের কাজ শুরু করেন। নদী পার হতে আমি ও আমার মত অনেকেই তাদের ভরসা”।
এত কিছুর পর যখন তারা স্কুল পৌঁছায় ঘড়ির কাঁটায় তখন বেলা সাড়ে এগারোটা। ইতিমধ্যেই একটি ক্লাস মিস করে ফেলে খুদে পড়ুয়াদের দল। এটা কোন একটি দিনের নয়। রোজকারের ঘটনা। অবিরাম বৃষ্টির কারণে নদীতে জলের স্রোত বেড়ে যাওয়ার কারণে বেশ কিছুদিন স্কুলে যেতে পারেনি গ্রামের পড়ুয়ারা।
প্রতিটি নির্বাচনের আগেই মেলে সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি। ভোট যায় আসে সেতু আর হয় না। এপ্রসঙ্গে সদরপুর বিধানসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস বিধায়ক প্রতাপ গ্রেওয়াল বিজেপি সরকারকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন, “আমি সম্প্রতি সরকারের কাছে সেতু নির্মাণের জন্য ১.২৪ কোটি টাকা অনুদানের জন্য পাঠিয়েছি এবং এমনকি সেতু নির্মাণের জন্য সমীক্ষার কাজও প্রায় শেষ। বর্তমান বিজেপি সরকার প্রকল্পে নিয়ে উদাসীন। কয়েক দশক ধরে এখানকার মানুষ এই সেতুর দাবি করে আসছেন।”
প্রাক্তন বিজেপি বিধায়ক ভেল সিং ভুরিয়া বলেছেন, বিজেপি অনগ্রসর শ্রেণির উন্নয়নের জন্য কাজ করে চলেছে। এই সেতুটি এখানকার আদিবাসী সম্প্রদায়ের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা। আমি সেতুর জন্য ২ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিলাম কিন্তু প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হতে সময় লেগেছে। তার মধ্যে নির্বাচন চলে আসে। ফলে কাজ সম্পুর্ণ হয়নি। আমি এলাকার বিধায়ক থাকাকালীন একাধিক প্রকল্পে কয়েক হাজার কোটি টাকা খরচ করেছি। আমি কথা দিচ্ছি এই বছরের নির্বাচনের পর সেতুটির নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে’।