‘‘ভারতকে আরেকটা মুসলিম দেশ বানানোর চেষ্টা কারও করা উচিত নয়, তেমনটা হলে ভারতের শুধু নয়, সারা পৃথিবীর পক্ষে ভয়ানক হবে।’’ মেঘালয় হাইকোর্টের বিচারপতি সুদীপ রঞ্জন সেন এ কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তানের অ-মুসলিম এবং খাসির মত জনজাতিদের ভারতে কোনও নির্দিষ্ট তারিখের হিসেব না কষেই নাগরিকত্ব দেওয়া উচিত। এ ব্যাপারে কোনও নথির প্রয়োজন নেই বলেও মতপ্রকাশ করেছেন তিনি।
বিচারপতি সেন বলেছেন, তিনি ‘‘আত্মবিশ্বাসী যে শ্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন সরকার এ বিষয়ের গুরুত্ব বুঝবে এবং প্রয়োজনানুযায়ী ব্যবস্থা নেবে’’ এবং ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা জাতীয় স্বার্থে একে সমর্থন করবেন।’’
আরও পড়ুন, মেহুল চোকসির বিরুদ্ধে এবার জারি রেড কর্নার নোটিস
আমন রানা নামের এক ব্যক্তির নাগরিকত্বের শংসাপত্রের আবেদন খারিজ করে দিয়ে বিচারপতি সেন বলেন, ‘আসল ভারত এবং দেশভাগের বিষয়’ ব্যতিরেকে নাগরিকত্বের শংসাপত্র সম্পর্কিত আবেদন শুনলে ‘ভুল’ হবে।
তিনি বলেন, পাকিস্তান যখন নিজেদের মুসলিম দেশ হিসেবে ঘোষণা করেছে তখন ভারতেরও উচিত ছিল নিজেদের হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করা। তা না করে তারা ‘ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসেবে রয়ে যায়’। এ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মেঘালয়ের রাজ্যপাল তথাগত রায় লিখিত একটি বই থেকে উদ্ধৃতিও দেন তিনি।
বিচারপতি সেন অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এ পালকে বলেন তাঁর এই রায়ের একটি করে প্রতিলিপি ‘‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং মাননীয় আইনমন্ত্রীর হাতে তুলে দিতে যাতে তাঁরা হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, পার্সি, খাসি, জয়ন্তিয়া এবং গারোরা যাঁরা ইতিমধ্যে ভারতে এসে পড়েছেন এবং যাঁরা পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্থান থেকে এসে পৌঁছবেন এবং যেসব ভারতীয়রা বিদেশে রয়েছেন তাঁদের জন্য আইন আনার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন।’’
৬১ বছর বয়সী সুদীপ রঞ্জন সেন শিলংয়ে জন্মেছেন, সেখানেই বেড়ে উঠেছেন এবং ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাস থেকে মেঘালয় হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি পদে নিযুক্ত হয়েছেন।
তাঁর রায়ের অন্য একটি এনআরসি প্রক্রিয়ার সমালোচনা করেছেন বিচারপতি সেন। তিনি বলেছেন, এনআরসি তে যাঁদের নাম উঠবে না, তাঁদের যদি কোনোভাবে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো হয় তাহলে তা অমানবিক, পশুর মতো আচরণ হবে।
তিনি বলেছেন, এই গোটা এলাকায় এক সময়ে ‘‘হিন্দুদের রাজত্ব ছিল এবং পরবর্তীকালে মুঘলরা ভারতে এসে দেশের বিভিন্ন অংশ দখল করে নেয় এবং দেশ শাসন করতে শুরু করে, এবং সে সময়ে বলপূর্বক অনেক ধর্মান্তরণ হয়েছিল।’’
বিচারপতি সেনের বক্তব্য, ‘‘আমার যেসব মুসলমান ভাই বোনেরা কয়েক পুরুষ ধরে ভারতে বাস করে আসছেন এবং ভারতীয় আইন মনে চলছেন, আমি তাঁদের বিরুদ্ধে নই, তাঁদেরও শান্তিতে বসবাস করতে দেওয়া উচিত।’’
Read the Full Story in English