Advertisment

মহানগর জুড়ে অটোর হয়রানি চলছেই, নেই কোনও নজরদারি

অটো নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগ নতুন কিছু নয়। তবে সরকার অটোনীতির খসড়া প্রকাশ করলেও অটোর অত্যাচার বেড়েই চলেছে। কে নিয়ন্ত্রণ করবে অটোচালকদের, সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
kolkata Auto Driver carrying extra passengers his beside Express Photo Shashi

আর কবে নিয়ন্ত্রন করা যাবে শহরের অটো। ছবি - শশী ঘোষ

রাজ্য পরিবহণ দফতর অটো নিয়ন্ত্রন করতে উদ্যোগ নিচ্ছে বলে একাধিকবার দাবি করলেও অটোতে সওয়ার হলেই বোঝা যায়, ওই দাবির কোনও সারবত্তা নেই। কলকাতার উত্তর বা দক্ষিণ, সর্বত্র একই চিত্র। শহর সংলগ্ন এলাকার অবস্থা আরও খারাপ। যাত্রী হয়রানি বাড়ছে, এবং কমার বিন্দুমাত্র লক্ষন নেই। ধর্মঘটের দিন জোর করে রাস্তায় অটো নামালে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যই চরিতার্থ হয়। তবে সাধারণ দিনগুলোতে যাত্রীদের প্রতি সরকার বা শাসকদলের কোনও দায়বদ্ধতা থাকে না, তা হলফ করেই বলা যায়। যাত্রীদের নানা ধরনের অভিযোগ শুনলে পরিস্কার হয়ে যাবে, অটোর অত্যাচার কোন পর্যায়ে যেতে পারে। কিন্তু কোনও সমাধান নেই।

Advertisment

অটোনীতি চালু করার একটি খসড়া প্রকাশ করেছিল রাজ্য পরিবহণ দফতর। দ্রুত তা কার্যকরী করা হবে বলেও জানিয়েছিল। কী রয়েছে সেই খসড়ায়? কাটা রুট চালানো যাবে না। অটোর এই কাটা রুট নিয়ে ভুরি ভুরি অভিযোগ রয়েছে। মাঝেরহাট সেতু ভাঙার পর থেকে আশপাশের অটোরুটে ভাড়া বেড়ে গিয়েছে কয়েকগুণ। অভিযোগ পেয়ে সক্রিয় হয়েছে প্রশাসন। যাত্রীদের অভিযোগ, কসবা-গড়িয়াহাট থেকে বেহালা যেতে গেলে একই অটোতে যাওয়া সম্ভব নয়। রুট থাকতেও টানা যেতে চায় না অধিকাংশ অটো। শহরের অধিকাংশ অটো রুটেই এক দৃশ্য। ব্রিজ ভেঙে যাত্রীদের সর্বনাশ হয়েছে, আর এক শ্রেণির অটোচালকদের পোয়াবারো হয়েছে।

kolkata Auto Driver carrying extra passengers his beside Express Photo ShashiCrime-4671-004 পাঁচজন যাত্রী সওয়ার শহরের অধিকাংশ অটোতে। যাত্রীর পা গাড়ির বাইরে। যখন তখন ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। ইউনিয়ন বা প্রশাসন নির্বিকার। ছবি: শশী ঘোষ

অটোর কাটা রুট নিয়ে অগুনতি অভিযোগ উঠেছে দমদম-নাগের বাজারের মত ছোট রুটেও। যাত্রীদের অভিযোগ, অফিস যাওয়া-আসার সময় এই রুটে চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন তাঁরা। সকাল সন্ধ্যায় অধিকাংশ অটো স্ট্যান্ড অবধি যায়ই না। স্ট্যান্ডের মুখ থেকে ঘুরিয়ে নেয়। শয়ে শয়ে যাত্রী লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। তার ওপর ওইসব অটো ছাতাকল পর্যন্ত যায়। দুদিকের অটোয় সেখান থেকে ঘুরিয়ে নেয়। এটা রোজকার ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেন, প্রশ্ন করলে মারধর খাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অটো ইউনিয়নের এক নেতা জানান, অনেকবার এসব নিয়ে বলা হয়েছে স্থানীয় নেতৃত্বকে। কিন্তু যাঁরা বলেছেন, দল তাঁদেরকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছে। তিনি জানান, দক্ষিণ দমদম পুরসভার কাউন্সিলর প্রবীর পাল এই রুটের দায়িত্বে রয়েছেন। তাঁকে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা হলেও পাওয়া যায়নি।

অটো নীতির খসড়ায় বলা হয়েছে, যাত্রীদের স্বার্থে এবং নিরাপত্তার খাতিরে অতিরিক্ত যাত্রীবহণ করা যাবে না। গাড়ির সামনে তীব্র লাইট ব্যবহার করা যাবে না। উচ্চস্বরে সাউন্ড সিস্টেম বাজবে না। ইচ্ছেমত ভাড়া বাড়ানো যাবে না। যাত্রীদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করতে হবে, মোবাইল ব্যবহার করা যাবে না, নির্দিষ্ট গতিতে গাড়ি চালাতে হবে, ট্রাফিক আইন মানতে হবে। যাত্রীদের অভিযোগ, এই খসড়ার অধিকাংশ নীতিই মানেন না অটোচালকরা। অতিরিক্ত যাত্রীবহণ করা হচ্ছে শহর, শহরতলীর অধিকাংশ অটো রুটে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের ক্যামেরাতেও সেই ছবি ধরা পড়েছে। গাড়িতে পা তুলে চালানোও বহু চালকের অভ্যাসের মধ্যেই পড়ে।

kolkata Auto Driver carrying extra passengers his beside Express Photo ShashiCrime-4737-002 অনেক ক্ষেত্রে এভাবেই অটোতে বসতে পছন্দ করেন অটো চালকরা। ছবি: শশী ঘোষ

উল্টোডাঙ্গা থেকে সল্টলেকে অটোর অত্যাচার রুখতে বাসের ব্যবস্থা করেছে পরিবহণ দফতর। তবু যে সমস্যার সমাধান হয়েছে এমন নয়। পুজোর বাজার শুরু হতেই শোভাবাজার থেকে উল্টোডাঙ্গার ভাড়া বেড়়ে দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। বিধাননগর পুরসভার কাউন্সিলর নির্মল দত্ত বলেন, "নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব। বাস নামিয়ে অবস্থা সামাল দেওয়া হচ্ছে। অটো স্ট্যান্ডে ফ্লেক্সে আমার মোবাইল নম্বর দেওয়া আছে। প্রয়োজনে অভিযুক্ত গাড়ির ছবি তুলে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠাতে পারেন।"

অটো নিয়ন্ত্রণ করতে পরিবহণ দফতরও যে অপারগ, তা ভালই বুঝেছেন যাত্রীরা। অটো প্রতি চাঁদা বাবদ কোটি কোটি টাকা আদায়, মিছিলে ভিড় জমানো, আর রুট প্রতি বছরে তিন-চারটে অটো নামালেই লক্ষ লক্ষ আমদানি। হাজার নিয়মের খসড়া প্রকাশ হবে, এবং তা ওই পাতাতেই থাকবে। বাস্তবায়ন ঘটার কোনও সম্ভাবনা নেই।

kolkata public transport
Advertisment