হ্যাশট্যাগ মিটু (#MeToo) ঝড়ে দেশ উথাল পাথাল হচ্ছে বিগত কয়েকদিন ধরে। চলচ্চিত্র পরিচালক, সাংবাদিক, কর্পোরেট বস, এমন কী কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বিরুদ্ধেও যৌন হেনস্থার অভিযোগ ওঠায় পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। শুক্রবার ঘোষণা করা হয়েছে সমস্ত যৌন হেনস্থার অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য কমিটি গঠন করা হবে।
কেন্দ্রীয় শিশু এবং নারী কল্যাণ মন্ত্রী মানেকা গান্ধী ঘোষণা করেছেন উচ্চ পদস্থ বিচারপতিদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন হবে যাদের কাজ হবে এই অভিযোগ খতিয়ে দেখা। কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থা সংক্রান্ত আইনি এবং প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো নিয়ে কাজ করবে ওই কমিটি। দূরদর্শন নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মানেকা গান্ধী বলেছেন, "এতগুলো বছর ধরে মেয়েরাই বোঝা চেপে নিয়ে বেড়াচ্ছে। শারীরিক অথবা মৌখিক অত্যাচার সব মুখ বুজে সহ্য করেছে। ৮০ বছরের বৃদ্ধার সঙ্গেও যৌন হেনস্থার ঘটনা ঘটেছে। চারজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এবং একজন আইনজীবী নিয়ে তৈরি করা হবে কমিটি। এবং স্বাধীনভাবে শুনানি চালাবে সেই কমিটি।"
Official statement of Union Minister Smt. @ManekaGandhiBJP on #MeTooIndia movement.#SexualHarassmentAtWork #DrawTheLine pic.twitter.com/5ELHZVHnth
— Ministry of WCD (@MinistryWCD) October 12, 2018
২০১২ -এর ডিসেম্বরের রাজধানীতে গণধর্ষণ মামলায় বিচারপতি ভার্মার যে কমিটি গঠন করা হয়েছিল, মিটু-র ক্ষেত্রেও সেই একইরকম কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে কেন্দ্রের। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মানেকা গান্ধী বলেছেন, "প্রতিটি অভিযোগের পেছনের গল্পটা ভীষণ আতঙ্কের এবং যন্ত্রণার। কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ মহিলাদের জন্য আরও সহজ এবং নিরাপদ হওয়া প্রয়োজন। মহিলাদের কাজের জায়গায় এতকিছু সহ্য করতে হয়। যৌন হেনস্থার ক্ষেত্রে সহিষ্ণুতাকে প্রশ্রয় দেওয়া উচিৎ নয়"। তিনি মনে করিয়ে দেন, "২০১৩-এর কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থা প্রতিরোধকারী আইন কিন্তু সব বয়সের সব মহিলাকে (সরকারি অথবা বেসরকারি ক্ষেত্রে এবং সংগঠিত অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মরত) নিরাপত্তা দেওয়ার কথা ভেবেই তৈরি হয়েছে।"
কমিটির পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে একটি 'শি বক্স' রাখার পরামর্শও দিয়েছেন মন্ত্রী, যেখানে মহিলারা তাদের অভিযোগ জানাতে পারবেন। #HelpMeWCD এই হ্যাশট্যাগে টুইট করেও মন খুলে জানানো যাবে নিজেদের অভিযোগ।
মহিলাদের জন্য এমন প্রতিবাদ মঞ্চ তৈরি করা কেন্দ্রের দিক থেকে নিঃসন্দেহে সাহসী পদক্ষেপ, তবে সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়। বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশে এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ইতিমধ্যে। ভারতের মতো পিছিয়ে থাকা গরিব দেশে ডিজিটাল প্রতিবাদ ক’টা মানুষকে ছুঁতে পারে? ক'জন মহিলা কাজের জায়গায় 'ব্যাড টাচ'- এর শিকার হয়ে টুইট করে অথবা সোশাল মিডিয়ায় জানাতে পারেন যৌন লাঞ্ছনার কথা? আর যাঁরা পারেন না, তাঁদের হয়ে প্রতিবাদটা করবে কারা? প্রতিবাদের মঞ্চটা পাওয়া যাবে কোথায়? বৃহত্তর রাজনৈতিক-সামাজিক লড়াইকে বাদ দিয়ে অসংখ্য পিছিয়ে থাকা মেয়েদের পুরুষতন্ত্রের জ্বাল থেকে বের করে আনা সম্ভব কি না, উঠছে সে প্রশ্নও।