ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (ইউআইডিএআই) ঘোষণা করেছে অপরাধের তদন্তের জন্য আধারের তথ্য ব্যবহার করা যাবে না, তখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ভাবনাচিন্তা চালাচ্ছে আঙুলের ছাপ নিয়ে। ক্রিমিনাল ট্র্যাকিং নেটওয়ার্ক সিস্টেম (CCTNS) নিয়ে অত্যন্ত উচ্চাশা রয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের। তাদের কাছে প্রস্তাব এসেছে, আঙুলের ছাপ, মুখাবয়ব পরিচয় (ফেস রেকগনিশন) এবং চোখের মণি স্ক্যান করে সেই সমস্ত তথ্য একটি কেন্দ্রীয় ব্যবস্থায় তুলে রাখার।
স্বাষ্ট্রমন্ত্রকের এক আধিকারিকের কথায়, আঙুলের ছাপ, ফেস রিকগনিশন সফটওয়ার এবং চোখের মণি স্ক্যানিংয়ের মাধ্যমে পুলিশের অপরাধের তদন্তক্ষমতা বহু বেড়ে যাবে। জাল পরিচয়পত্র দিয়ে আর কেউ পার পেয়ে যাবে না।
আধার কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আধার আইন অনুসারে, আধারের তথ্য কোনও অপরাধ তদন্তকারী সংস্থাকে জানানো যাবে না। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর ডিরেক্টর ঈশ কুমারের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এ কথা জানানো হয়েছে। ঈশ কুমারের বক্তব্য ছিল অপরাধীদের চিহ্নিত করার জন্য আধারের আঙুলের ছাপ তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে দেওয়া উচিত।
ক্রিমিনাল ট্র্যাকিং নেটওয়ার্ক সিস্টেম (CCTNS) গঠনের প্রথম পর্যায়ের কাজ প্রায় শেষের পথে। দেশের ১৫, ৫০০ থানার মধ্যে ১৪, ৫০০-ই সিসিটিএনের আওতায় আসছে। কেবলমাত্র বিহারই এ ব্যাপারে অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে। রাজ্যের ৮৫০ টি থানা CCTNS-এর অন্তর্ভুক্ত হওয়া বাকি রয়েছে।
এর দ্বিতীয় পর্যায়ে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের পরিকল্পনা অনুসারে কেন্দ্রীয় ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যুরো (CFPB)-তে আঙুলের ছাপ মজুত রাখা হবে, এবং মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফ বি আই যে প্রযুক্তি ব্যবহার করে, সেই NFIS ব্যবহার করে আঙুলের ছাপ মেলানোর কাজ করা হবে।
তথ্য সংগ্রহের পরিমাণ বাড়ানোর ব্যাপারেও জোর দিচ্ছে সরকার। এফবিআইয়ের কাছে রয়েছে চার কোটি আঙুর ছাপ, যেখানে CFPB-র কাছে রয়েছে মাত্র ১০ লক্ষ। বিভিন্ন রাজ্যের ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যুরোর সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে আরও ৩০ লক্ষ ফিঙ্গারপ্রিন্ট জোগাড় করার চেষ্টা করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। দেশ জুড়ে অপরাধের যে তদন্ত হয়, সেগুলি থেকে পাওয়া তথ্য একত্রিত করার পরিকল্পনা রয়েছে। সারা দেশে বছরে ৫০ লক্ষের মত অপরাধের ঘটনা নথিভুক্ত হয়ে থাকে। একটি সূত্র জানিয়েছে, সেগুলোকে সংহত করে একটি ক্লাউডে রাখার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে ন্যাশনাল ইনফর্মেটিকস ব্যুরো।
২০০৯ সালে কলকাতায় একটি চুরির মামলায় ধরা পড়েছিল ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের অপারেশনস চিফ আহমেদ জারার সিদ্দিবাপ্পা, যে ইয়াসিন ভটকল নামেও পরিচিত। জাল পরিচয়পত্রের মাধ্যমে সে নিজেকে বুল্লা মালিক নামে পরিচয় দেয় এবং কয়েকদিন পরেই ছাড়া পেয়ে যায়। পুনে ও মুম্বইয়ের ধারাবাহিক বিস্ফোরণের পরিকল্পনা করেছিল এই ভটকল। ২০১৩ সালে নেপাল থেকে তাকে পাকড়াও করা হয়। এই ঘটনাই CCTNS-এর প্রয়োজনীয়তা বুঝিয়ে দিচ্ছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সমস্ত পুলিশ চৌকিগুলিকেও সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে। আর পি এফ ও তাদের তথ্যও সংযুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, সিসিটিএনের মাধ্যমে স্পট পঞ্চনামা সেরে ফেলার জন্য পোট্রোলিং পুলিশবাহিনীর কাছে পামটপ দেওয়ার প্রস্তাবও বিবেচনা করা হচ্ছে।