Advertisment

পরিযায়ীদের ট্রেনযাত্রা, "আমার সুযোগ কবে আসবে?"

রেলমন্ত্রী পীযুষ গোয়েল শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিসগড় ও রাজস্থান সরকার এই ট্রেনের ব্যাপারে অনুমতি দিচ্ছে না বলে অভিযোগ করার পর শনিবার মহারাষ্ট্র থেকে প্রথম ট্রেন পশ্চিমবঙ্গের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Migrant Train Ticket

মুম্বইয়ের ছত্রপতি শিবাজি টার্মিনাস স্টেশনের বাইরে শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনের যাত্রীদের লাইন

১৫ মে-র সূর্য তখনও ওঠেনি। মুম্বই থেকে উত্তরপ্রদেশের প্রতাপগড় জেলায় ১৫০০ কিলোমিটার সফর শেষ করে নিজের ট্যাক্সি থেকে নামলেন ওমপ্রকাশ তিওয়ারি। সঙ্গে তাঁর ৬ জনের পরিবার। ১০ দিন আগে তিনি পরিযায়ীদের জন্য বিশেষ ট্রেনের টিকিট কেটেছিলেন। কিন্তু সুযোগ আসবে কি না, সে প্রশ্নের উত্তরের জন্য তর সয়নি তাঁর।

Advertisment

৮ মে সূর্যাস্তের সময়ে ২৫ বছরের জরি কর্মী আদিল খান মুম্বইয়ের যোগেশ্বরী থেকে বিশেষ ট্রেনে উত্তরপ্রদেশে রওনা দিয়েছিলেন। মাত্র তিনদিন আগেই তিনি স্থানীয় থানায় আবেদন জমা দিয়েছিলেন।

দুটো যাত্রার মধ্যে তফাতের জায়গাটা হল হাজার হাজার পরিযায়ী রেলস্টেশন থেকে  থেকে দূরে হাইওয়ের মধ্যে দিয়ে বেপরোয়া ও বিপজ্জনক এক যাত্রা শুরু করেছেন, তার কারণ কর্মহীনতা আর শহর এলাকায় ব্যাপক করোনাবৃদ্ধি।

অনেকের কাছেই স্পেশাল ট্রেনগুলোতে সিট পাওয়া লটারি পাবার মতই, বিশেষ করে নথিভুক্তির বিষয়টা যেহেতু সম্পূর্ণত গন্তব্য রাজ্যগুলির উপর, এবং তারা কোনও ব্যাখ্যা ছাড়াই অনুমোদন করতে পারে বা আটকে দিতে পারে।

মহারাষ্ট্র, দেশের শিল্পরাজধানী এ সারা দেশের পরিযায়ীদের অন্যতম গন্তব্য এ কথাটা সংখ্যা গিয়েই প্রমাণ করা যাবে এই সময়ে। ১ থেকে ১৫ মে-র মধ্যে ২.২৫ লক্ষ মানুষ ১৯১ টি শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনের মধ্যে প্রথম ১০০ টিতে যাত্রা করেছেন, যার ৫০টি উত্তর প্রদেশ ও ২৫টি বিহারে, এক লক্ষের বেশি মানুষ বেসরকারি গাড়ি ও বাসে রওনা দিয়েছেন, পারমিট নিয়ে। মুম্বইতে অন্যদিকে কোভিডে আক্রান্ত ১৭৬৭১ জন এবং মৃত ৬৫৫ জন।

রেল মন্ত্রী পীযুষ গোয়েল শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিসগড় ও রাজস্থান সরকার এই ট্রেনের ব্যাপারে অনুমতি দিচ্ছে না বলে অভিযোগ করার পর শনিবার মহারাষ্ট্র থেকে প্রথম ট্রেন পশ্চিমবঙ্গের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে।

ইতিমধ্যে তেওয়ারির কাহিনি গোটা পরিস্থিতিটার একটা বাস্তবানুগ বর্ণনা দেয়। তেওয়ারির কথায়, “আমরা ৬ তারিখে আরও ২৫ জনের সঙ্গে ফর্ম ফিলআপ করি, কালা চৌকি থানায়। কিন্তু কেউ বলতে পারেনি আমাদের সুযোগ হবে কিনা। আমরা একটা বাসের পারিমিটের চেষ্টা করি, কিন্তু সে গাড়ি ট্যাক্স ক্লিয়ার ছিল না।”

৫৯ বছরের তেওয়ারি তখন সিদ্ধান্ত নেন নিজের ট্যাক্সিতেই রওনা দেওয়ার। “তা সত্ত্বেও ওরা পারমিট দিচ্ছিল না, বলেছিল একজনকে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। শয়ে শয়ে লোক একটা ট্রাকে করে রওনা দিচ্ছে কিন্তু আমাকে ওরা অনুমতি দিল না। তখন, শুক্রবার রাত দুটোয় আমি পারমিট ছাড়াই রওনা দিই।”

মহারাষ্ট্রের সরকারি আধিকারিকরা বলছেন টিকিটপ্রত্যাশীদের স্থানীয় থানায় রেজিস্ট্রেশন ফর্ম ভরতে হবে, যেখান থেকে গন্তব্যের জেলার ২০-২৫ জনের টিম বাছাই হবে।

এর পর ডিসিপি অফিস থেকে ওই তালিকা ঝাড়াই-বাছাই হবে। জেলার যাচাই হবে আধার কার্ডে দেওযা বাড়ির ঠিকানা থেকে, আধার কার্ডের কপি আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে।

মহারাষ্ট্রের সচিবালয়ে এ বিষয়ক নোডাল শীর্ষকর্তা নিতিন কারির জানিয়েছেন, “সংশ্লিষ্ট ডিসিপি রাজ্যহুলিকে এ বিষয়ে অনুরোধ করবেন এবং একই সঙ্গে আমাদের ফলোআপ করতে বলবেন। রাজ্যগুলি আবেদন গ্রহণ করার সাধারণত পরের দিনই আমরা তা রেল দফতরে পাঠিয়ে দিই। এর পর ট্রেনের বন্দোবস্ত করতে আরও একদিন মত সময় লাগে এবং আমরা ইতিমধ্যে আবেদনকারীদের জানিয়ে দিই ও তাঁদের বাসে করে স্টেশনে আনার ব্যবস্থা করি।”

কোঙ্কন ডিভিশনের ডিভিশনাল কমিশনার শিবাজি দাউন্দ জানিয়েছেন মুম্বইয়ের পুলিশ কমিশনারেট ও জেলা কালেক্টররা মন্ত্রালয়ের দলের সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করে চলেছেন।

তেওয়ারি ও খানের বিষয়ের উল্লেখ করা হলে এক বরিষ্ঠ আধিকারিক মেনে নিয়েছেন যে গোটা প্রক্রিয়াটার কোনও নির্দিষ্ট নির্দেশ নেই, যেমন গন্তব্য রাজ্যে কোনও একটি জেলার সম্পর্কে স্পষ্ট কিছু জানায়নি, অন্য একটি জায়গা সম্পর্কে জানিয়েছে এরকম হচ্ছে।

তিনি বলেন, “রাজ্যের কাছে অনেকরকম ইস্যু রয়েছে সমাধান করার, বিশেষ করে বাসে করে ফেরার ব্যবস্থা করা, রাস্তায় খাবারের বন্দোবস্ত করা, কোয়ারান্টিনের ব্যবস্থা করা। এগুলি বিশাল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “শ্রমিক ট্রেন শুরু হয়েছে ১ মে থেকে, তিন দিন আগে পর্যন্তও দিনে দু-তিনটির বেশি ট্রেন যাতায়াত করত না। তবে এখন মুম্বই থেকে অন্তত সাত-আটটি ট্রেন ছাড়ছে। রাজ্য সরকার অন্তত ২০০-র বেশি ট্রেন ব্যবস্থা করেছে। অন্য রাজ্য থেকে নো অবজেকশন সার্টিফিকেট আনার ব্যবস্থাও করছে।” তবে এসবে খুব কিছু অদলবদল হয় না তেওয়ারির মত মানুষদের। শনিবার সন্ধেয় তিনি ট্যাক্সিতে কানপুর পৌঁছেছিলেন, বাড়ি থেকে মাত্র ২৫০ কিলোমিটার দূরে। “মুম্বইতে আমার টাকা ফুরিয়ে যাচ্ছিল, আমি ট্রেনের জন্য আর অপেক্ষা করতে পারছিলাম না।”

Lockdown COVID-19
Advertisment