তৃণমূল শ্রমিক ইউনিয়নের একাংশের তোলাবাজির অভিযোগে নাকতলা-হাওড়া রুটের মিনিবাস চলাচলই বন্ধ হয়ে গেল। এই রুটের তৃণমূল কংগ্রেসের শ্রমিক ইউনিয়নের হিসেবে গরমিল রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন খোদ ইউনিয়নের অপর এক অংশ। সাত বছর ধরে কোনও হিসেব দেওয়া হয়নি। তাঁদের দাবি, চাঁদা তোলা নিয়ে প্রতিবাদ করলেই ভাস্কর দামের নাম করতেন কেউ কেউ। ভাস্করবাবুর স্ত্রী স্থানীয় কাউন্সিলর সুস্মিতা দাম। তবে ভাস্করবাবু এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। দুর্নীতি ধরা পড়লে প্রয়োজনে তিনি এফআইআর করবেন বলে জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার নাকতলা-হাওড়া রুটের মিনি বাস বন্ধ হওয়ায় হয়রানির শিকার হয়েছেন যাত্রীরা। ১১২ নম্বর রুটের বাস কর্মী হরবিন্দর সিংয়ের অভিযোগ, "যখন তখন চাঁদা তোলা হচ্ছে। হিসেব চাওয়ার পর নথিপত্রও ইউনিয়ন অফিস থেকে নিয়ে চলে গিয়েছে। সাত বছরের হিসেবের দাবিতে আমরা রুটের ২১টি বাস বন্ধ রেখেছি।" তবে শুধু তোলাবাজি বা হিসেবের গরমিলের অভিযোগ নয়, শ্রমিকদের দাবি, হিসেব চাইলে তাঁদের মারধরও করা হত। শাসকদলের ইউনিয়নের দুই গোষ্ঠীর বিবাদের জেরে এর আগেও নাকতলা-হাওড়া মিনিবাস বন্ধ রাখতে হয়েছে। তবে আগামী রবিবার ফের বৈঠকে বসার কথা আছে বলে জানিয়েছেন হরবিন্দর।
আরও পড়ুন: ব্রিজ ভেঙে পরিবহণে সঙ্কট, মোকাবিলায় বাড়তি সরকারি বাস
ইউনিয়ন সূত্রে খবর, নাকতলা মিনিবাস ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের দায়িত্ব সামলান স্থানীয় তৃণমূল নেতা ভাস্কর দাম। অভিযোগ, তিনি ওই ইউনিয়ন অফিসে না-এলেও তাঁর নামে চাঁদা তোলা রেওয়াজ হয়ে গিয়েছে। হরবিন্দরের অভিযোগ, "বুধবার আগের কমিটির সদস্য় অমর সাহা চাঁদা তুলছিলেন বাসকর্মীদের থেকে। আমরা তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম তুমি চাঁদা তুলছ কেন? তিনি বলেন, আমাকে ভাস্কর দাম বলেছেন। কারও কিছু বলার থাকলে পার্টি অফিসে গিয়ে বলতে। তারপর পুরো বিষয়টা মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের ঘনিষ্ঠ নীহার দত্তকে জানানো হয়। রবিবার মিটিং করে হিসেব দেবে বলে তিনি আমাদের জানিয়েছেন।"
কত টাকার বিষয় যে তা নিয়ে গোলমাল? এই রুটে ২১টি বাস চলে। প্রতি বাস থেকে প্রত্য়েকদিন ৩০ টাকা করে নেওয়া হয়। তার ওপর বাসের পিছনে যে বিজ্ঞাপন থাকে, তাতেও আসে মাস প্রতি ৩,০০০ টাকা। সম্প্রতি এই ইউনিয়ন অফিসের ছাদের ওপর একটি বিজ্ঞাপনের হোর্ডিং থেকে মাসে আয় হয় ৪,০০০ টাকা। বাসকর্মীরা জানিয়েছেন, তাঁদের বলা হয়েছে ব্যাঙ্ক অ্য়াকাউন্টে রয়েছে মাত্র ৫৪,০০০ টাকা। এতেই আপত্তি শ্রমিক ইউনিয়নের একাংশের। সাত বছরে মোট টাকার অঙ্ক কিন্তু অনেকটাই। তাদের বক্তব্য়, হিসেবে গরমিল রয়েছে। এক কর্মী বলেন, "গত ১০-১২ দিন ধরে ভয়ঙ্কর অত্য়াচার করছে। আগের কমিটির দুজনকে রেখে কমিটি পাল্টানো হয়েছে। তা সত্ত্বেও পুরনো কমিটির লোকেরা এসে চাঁদা তুলছে।"
হরবিন্দর জানান, "হিসেব চাইলে গালিগালাজ করে। বাসকর্মীদের মারধরও করেছে। সব কর্মীরা এক হয়ে আজ বন্ধ করে দিয়েছি।" তাঁর নামে চাঁদা তোলা হয়েছে শুনে এদিন ইউনিয়ন অফিসে ছুটে এসেছেন ভাস্করবাবু। স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি কাউকে বলেননি চাঁদা তুলতে। তিনি শুধু বলেছিলেন বোনাসের হিসেব করতে। ভাস্করবাবু বলেন, "ওদের অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়ার নয়। তবে আগে আমাকে জানালে ভাল হত। কারণ কে কার নামে টাকা তুলছে না জানালে বুঝবো কী করে? আমি আগামীকালই সব নথি আনতে বলেছি। যদি দুর্নীতি থাকে, আমি নিজে এফআইআর করব। তবে বাসের রুট বন্ধ করাটাও সমর্থন করছি না।"