প্রতিবেদক- এষা রায়
১৮ থেকে বেড়ে মেয়েদের ন্যূনতম বিয়ের বয়স হোক ২১। ইতিমধ্যেই বাল্যবিবাহ নিষেধাজ্ঞা (সংশোধনী) বিল ২০২১ সংসদের স্ট্যানডিং কমিটিতে খতিদের দেখার জন্য পাঠানো হয়েছে। সরকারের এই পদক্ষেপকে সমর্থন করছেন বেশিরভাগ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা। কিন্তু এই বিল আইনে পরিণত হলে তা ব্যক্তিগত আধিকারের পরিশরকে সঙ্কুচিত করতে পারে। এই আশঙ্কাও করছেন তাঁরা।
সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী পার্সি সম্প্রদায়ের নোডাল সংগঠন জিও পার্সির নির্দেশক ডঃ শেহনাজ কামার দাবি, যেসব সম্প্রদায়ের যুবক-যুবতীরা অপেক্ষাকৃত বেশি বয়সে বিয়ে করেন, সেইসব সম্প্রদায়ে উপর প্রস্তাবিত এই আইনের তেমন প্রভাব পড়বে না। কিন্তু, সংবিধান স্বীকৃত ব্যক্তিগত অধিকার আইনের উপর প্রস্তাবিত আইন প্রভাব ফেলছে কিনা তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। ডঃ কামার কথায়, 'পার্সি সম্প্রদায়ের মেয়েরা সাধারণত ২৮-৩০ ও ছেলেরা ৩৫ বছর বয়সে বিয়ে করেন। যা জাতীয় গড়ের চেয়ে বেশি। কিন্তু স্ট্যানডিং কমিটির সদস্যদের সংবিধান স্বীকৃত ব্যক্তিগত অধিকার আইনের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে।। এবং অবশ্যিকভাবে কমিটিতে মহিলা সদস্য রাখতে হবে।' তিনি বলেছেন, 'পুরুষ বা মহিলা- কেই সাবালোক হলে তাঁর ব্যক্তিগত অধিকারে হস্তক্ষেপের অধিকার কারোর রয়েছে বলে আমি মনে করিনা।'
দিল্লি আর্চডায়োসিসের মুখপাত্র ফাদার সাভারি মুথু জানিয়েছেন, খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ে কেন্দ্রীয় প্রস্তাবকে সমর্থন করে। তবে, গ্রামীণ প্রান্তিক সমাজে এই আইনের প্রভাব নিয়ে সতর্ক করেছেন তিনি।
“আমরা বিশ্বাস করি যে, যে কোনো ক্ষেত্রে দেশের আইনের শাসন অবশ্যই ধর্মীয় আইনকে ছাপিয়ে যাবে…, ক্যাথলিকদের পাশাপাশি অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যে, মেয়েরা গড় ন্যূনতম বিয়ের বয়স বেশি। তবে এটি মূলত শহরাঞ্চলে। উদ্বেগের কেন্দ্রের গ্রামীণ এলাকা, বিশেষ করে প্রান্তিক সম্প্রদায় যেমন তফসিলি জাতি এবং তফসিলি উপজাতি।' ফাদারের আশঙ্কা, 'ভয় হল যে প্রান্তিক সম্প্রদায়ের মধ্যে আরও কম বয়সে বিয়ের প্রবণতা বাড়তে পারে এবং সেটি তাঁরা লুকিয়ে রাখবে। প্রান্তিত যুবক-যুবতীদের হয়রানির জন্য নতুন আইনের অপব্যবহারও হতে পারে। বিলটি আইনে পরিণত হওয়ার আগে এগুলি সরকারকে অবশ্যই খতিয়ে দেখতে হবে।'
অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল'বোর্ড প্রস্তাবিত আইনের বিপক্ষে। সংগঠনটি প্রস্তাবিত আইনটিকে 'খুব যুক্তিহীন ' বলে ব্যাখ্যা করেছে। অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল'বোর্ডের সদস্য নিয়াজ আহমেদ ফারুকি বলেছেন, 'প্রস্তাবিত আইনে নারীদের প্রকৃতপক্ষে কী সুবিধা হয় তা দেখার বিষয়। ভারতে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন মহিলাদের নিরাপত্তা। যখন একটি মেয়েকে বাড়িতে রাখতে হয়, তখন তার নিরাপত্তার দায়িত্ব বর্তায় বাবা-মায়ের উপর, তাই মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। যদি ১৮ বছর বয়সীরা প্রাপ্ত বয়স্ক বলে বিবেচিত হন ও ভোট দিতে পারেন তাহলে বিয়ের ক্ষেত্রে অসুবিধা কোথায়? সরকার কীভাবে এক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করতে পারে? ব্যক্তিগত আইন যেকোনও সম্প্রদায়ের মৌলিক অধিকার, সরকারের এতে হস্তক্ষেপ করার অধিকার নেই।'
ফারুকির প্রশ্ন, 'আমরা নিশ্চিতভাবেই মেয়েদের কম বয়সে বিয়ের পক্ষে নই। মেয়েরা আগের মতো ১২-১৩ বছর বয়সে বিয়ে করবে - আমরা অবশ্যই এটি চাই না। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি প্রস্তাবিত আইনটি ব্যক্তিগত অধিকার সংক্রান্ত আইনের বিরুদ্ধে। এর নেপথ্যে বৈজ্ঞানিক যুক্তি কী রয়েছে? অপুষ্টির কথা বলে ১৮ বছর বয়সে একটি মেয়ের বিয়ে বন্ধ করা হলে মাত্র ৩ বছর পর, ২১ বছর বয়সে হঠাৎ কীভাবে এত পরিবর্তন সম্ভব?'
কাশ্মীরি গেটের জামা মসজিতের ইমাম মহসিন তাকভি বলেছেন, 'মুসলিমদ মেয়েরাও বর্তমানে ২১-এর আগে খুব একটা বি্য়ে করে না। ফলে প্রস্তাবিত আইনের সঙ্গে বিরোধ হওয়ার কথা নয়। কিন্তু বিলটি আইনে পরিণত হওয়ার আগে ধর্মীয় নেতৃত্বের সঙ্গে সরকারের আলোচনা প্রয়োজন।'
Read the full story in English