জাহাঙ্গিরপুরী থেকে যোধপুর, পাতিয়ালা থেকে ভোপাল- বিগত কয়েক সপ্তাহে বারে বারেই সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়েছে। সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণের অভিযোগ তোলা হয়েছিল। কিন্তু, এর একটিও 'সাম্প্রদায়িক প্রকৃতির' নয় বলে দাবি করেছেন জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান একবাল সিং লালপুরা। তাঁর মতে, এইসব সংঘর্ষের সঙ্গে 'অপরাধমূলক উপাদান' সম্পৃক্ত।
জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশনের তরফে এক বিবৃতি বলা হয়েছে যে, 'পাতিয়ালা, যোধপুর এবং ভোপালের ঘটনায় কমিশন দ্রুত পদক্ষেপ করেছে।' এইসব ইস্যুতে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মুখ্য সচিবদের থেকেও কমিশন রিপোর্ট তলব করেছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ রয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, '২০২২ এর ১৩ই এপ্রিল সংখ্যালঘু কমিশন সংখ্যালঘুদের উপর ক্রমবর্ধমান অত্যাচারের বিষয়ে আফতাব আহমেদের প্রতিনিধিত্বে মধ্যপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, গুজরাট, পশ্চিমবঙ্গ এবং বিহারের মুখ্য সচিবদের কাছে রিপোর্ট তলব করেছিল। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছ থেকে একটি প্রতিবেদন মিলেছে, যেখানে বিষয়টি তদন্তের জন্য পশ্চিমবঙ্গের ডিজিপির কাছে পাঠানো হয়েছে। মধ্যপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, গুজরাট এবং বিহার সরকারের রিপোর্ট আসা এখনও বাকি রয়েছে।'
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে কমিশনের চেয়ারম্যান একবাল সিং লালপুরা বলেন, 'ভারত একটি বড় দেশ এবং এখানে সমস্ত সংখ্যালঘুরা উন্নতি করছে, শুধু আর্থিকভাবে নয় সংখ্যালঘুদের জনসংখ্যাও বাড়ছে। সাম্প্রতিক সংঘর্ষের কোনওটির প্রকৃতিই সাম্প্রদায়িক ছিল না। সেটা পাতিয়ালাই হোক বা জাহাঙ্গিরপুরী, যোধপুর বা ভোপালের ঘটনা। পাতিয়ালা সংঘর্ষ দুটি সম্প্রদায়ের মধ্যে ছিল না, তবে উভয় পক্ষের একদল লোক শান্তি বিঘ্নিত করতে চেয়েছিল। একইভাবে কমিশনের প্রতিনিধিরা যখন জাহাঙ্গিরুপুরী গিয়েছিলেন তখন দেখেছেন যে, পুলিশ সিদ্ধান্তমূলকভাবে কাজ করেছে এবং তারাও আহত হয়েছিল। বাসিন্দারা আমাকে বলেছিল যে, তারা সবসময় সেখানে শান্তিতে বসবাস করেছে। এই ষড়যন্ত্রের সত্য উন্মোচন করা উচিত এবং যারা অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে তাদের গ্রেফতার করে শাস্তি দেওয়া উচিত। যোধপুরেও প্রায় একই ধরণের ঘটনা ঘটেছিল। এগুলোর কোনওটিই সাম্প্রদায়িক ছিল না। এগুলোর সঙ্গে অপরাধী উপাদান যুক্ত।'
লাউডস্পিকার বিতর্কে লালপুরা বলেছেন, 'আজান হবেই। তবে শব্দ দূষণের সমস্যাও রয়েছে। আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাস হল যে, সব ধর্মীয় সম্প্রদায়ের দেশের আইন অবশ্যই অনুসরণ করা উচিত এবং লাউডস্পিকারগুলি ধর্মীয় স্থান বা বাজার, রেস্তোরাঁ বা অন্য কোথাও নিষিদ্ধ করা উচিত।' তাঁর সংযোজন, 'যতক্ষণ সংখ্যালঘুরা নিরাপত্তাহীন বোধ করছেন, কমিশন তাদের সুরক্ষার জন্য রয়েছে। তাদের শিক্ষা ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিশ্চিত করাই আমাদের কাজ।'
কমিশনের চেয়ারপার্সন জানিয়েছেন যে, চলতি বছর ১৩ এপ্রিল থেকে ২ মে পর্যন্ত কমিশনে ১২৩টি পিটিশন জমা পড়েছে। যার মধ্যে ৯টি নিষ্পত্তি করা হয়েছে এবং ১৮টির রিপোর্ট তলব করা হয়েছে।
কমিশন ২০২১-২২ সালে ২০৭৬টি পিটিশন পেয়েছে, যার মধ্যে ৪১৯২টির নিষ্পত্তি করা হয়েছে। ২০২২-২১ সালে ১৪৬৩টি মামলা, যার মধ্যে ১২৭২টির নিষ্পত্তি করা হয়েছে। ২০১৯-১০ সালে ১৬৭০টি মামলার মধ্যে ১৬০০টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে।
কমিশন সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রকের বিভিন্ন পরিকল্পনাও পর্যবেক্ষণ করে থাকে। লালপুরার কথা অনুসারে, ২-২১-২২ সালে, ৮৬,০১,০২৩ জন আবেদনকারীর মধ্যে ৫৬,৫০,৮৩২ জনকে প্রাক-ম্যাট্রিক বৃত্তি দেওয়া হয়েছিল। এবং ১৯,৪৭,৪১১ জন আবেদনকারীর মধ্যে, ৭,০৩,৩৪৬ জনকে একই সময়ের মধ্যে পোস্ট-ম্যাট্রিক বৃত্তি দেওয়া হয়েছে।
Read in English