১৫ দিন ধরে নিখোঁজ ১৯ জন শ্রমিক। এই ঘটনার জেরে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়ায় ভারত-চিন সীমান্ত এলাকায় কুরুং কাম জেলায়। জানা গিয়েছে দামিনে একটি সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলাকালীন নিখোঁজ হন ১৯ জন শ্রমিক। চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছে তাদের পরিবার। তাদের মধ্যে একজন অসমের ওয়ায়েজেদ আলি।
আলির বাবা বক্কর আলি বলেছেন “ বাড়ি থেকে বেরোনোর পর প্রথম যখন তিনি ইটানগরে পৌঁছান, তারপরে ১৫ দিন পরে দামিনে এবং অবশেষে ৩ জুলাই, তিনি তার বাবাকে বলেছিলেন যে তিনি ৫ জুলাই ফিরে আসবেন, ইদ উপলক্ষে পরিবারে তখন খুশির জোয়ার কিন্তু ছেলের না ফেরায় বাড়ল উদ্বেগ। অবশেষে পরিবার জানতে পারে তার ছেলে সহ আরও বেশ কয়েকজন ক্যাম্প থেকে থেকে নিখোঁজ হয়েছেন। আলির সঙ্গেই নিখোঁজ আব্দুল আমিন সহ আরও ১৭ জন”।
দামিনে এমনিতেই মোবাইল সংযোগ সেভাবে নেই ফলে পরিবারের লোকজন তাদের কারুর সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারায় তৈরি হয়েছে চরম উৎকণ্ঠা। কুরুং কাম জেলা প্রশাসন সূত্রে দাবি করা হয় নিখোঁজ শ্রমিকদের খোঁজে তল্লাশি চালানো হলেও কোন লাভ হয়নি। কুরুং কাম জেলার ডেপুটি কমিশনার নিঘি বেঙ্গিয়া দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন যে “একটি উদ্ধারকারী দল ইতিমধ্যেই নিখোঁজ শ্রমিকদের খোঁজে তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে, একটি এসডিআরএফ দল দামিনে পৌঁছেছে পাশাপাশি একটি আইএএফ হেলিকপ্টারকেও উদ্ধারভিযানে কাজে লাগানো হয়েছে”। তিনি আরও বলেন “ঘন জঙ্গলের মধ্যে উদ্ধারকার্য চালাতে উদ্ধারকারী দলকে বেশ বেগ পেতে হয়েছে”।
কেন শ্রমিকরা হঠাৎ করেই নিখোঁজ হলেন এই প্রশ্নের কোন উত্তর পুলিশের কাছে এখনও পর্যন্ত নেই। মঙ্গলবার জেলা প্রশাসন জানিয়েছে,নদীতে এক শ্রমিকের দেহ মিলেছে বলে যে খবর প্রচার হয়েছে তা মিথ্যা। অসম থেকে আসা শ্রমিকরা যে ঠিকাদারের অধীনে কাজ করছিলেন তিনি জানিয়েছেন যে, ইদ উপলক্ষে ছুটি চেয়েছিল শ্রমিকরা। কিন্তু তিনি ছুটি দেননি। গত ৫ জুলাই দামিন সার্কেলে বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশনের রাস্তা নির্মাণের সময় ওই ১৯ শ্রমিক পালিয়ে যান বলে অভিযোগ করেন তিনি।
আরও পড়ুন: <মাঙ্কিপক্স নিয়ে জোরালো হচ্ছে আতঙ্ক, কেরলের পর তেলেঙ্গানায় প্রস্তুতি তুঙ্গে!>
জেলা প্রশাসনও জানিয়েছেন ছুটি না মেলায় ওই শ্রমিকরা কাজ থেকে পালিয়ে এসেছেন। বিআরও-এর অরুনাঙ্ক প্রকল্পের অধীনে ২০০৬ সালের মে মাসে সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হয়। যা এখন প্রায় শেষের পথে একজন প্রবীণ BRO আধিকারিক দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন “কোন মোবাইল বা ইন্টারনেট সংযোগ না থাকার কারণে শ্রমিকরা এখানে বেশিদিন থাকতে চায়না। শ্রমিকদের মাসে একবার বাড়ি যাওয়া সাধারণ ব্যাপার, কেউ বেশি দিন একটানা এখানে থাকতে চায় না,"।
একই সুর আলির বাবা বক্কর আলির গলাতেও তিনি বলেন, “শেষবার যখন ছেলের সঙ্গে ফোনে কথা হল সে খুবই বিরক্ত ছিল”। জানা গিয়েছে, উত্তর-পূর্বের জেলাগুলির সীমান্ত এলাকায় পাঁচিল তৈরির কাজের সময় আচমকাই তাঁরা নিখোঁজ হয়ে যান। যা নিয়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। এপ্রসঙ্গে জেলাশাসক জানিয়েছেন “রাস্তা তৈরির জন্য ঠিকাদার অসম অরুণাচল থেকে প্রায় ৩০ জন শ্রমিক কাজে আসেন। এলাকাটি জেলা সদর থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আমরা ১৩ জুলাই তথ্য পেয়েছি তাদের মধ্যে ১৯জন শ্রমিক কাজের জায়গা থেকে নিখোঁজ রয়েছে। কেন এই ঘটনা ঘটল তা জানতে আমরা একটি তল্লাশি অভিযান শুরু করি। আশেপাশের জঙ্গল ও অন্যান্য সড়কে তল্লাশি করেও তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি”।