আসাম-মিজোরাম সীমানা বিরোধ এবার নতুন মাত্রা পেল। গত ২৬ জুলাই উত্তরপূর্বের এই দুই রাজ্যের মধ্যে সীমানা সংঘর্ষের ঘটনায় এবার আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করল মিজোরামের পুলিশ এছাড়াও, এফআইআর-এ নাম রয়েছে আসামের আরও ছ'জন উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিকের। এদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারা, ও মিজোরাম মহামারি আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
আসামের কাছার জেলা সংলঙ্গ মিজোরামের কোলাসিবের থানাতে এইআফআরটি করা হয়েছে। আসামের মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও এফআইআর-এ নাম রয়েছে রাজ্যের আইজি অনুরাগ আগারওয়াল, কাছারের ডিআইজি দেবজ্যোতি মুখোপাধ্যায়, কাছারের ডিসি ক্ষেত্রী জাল্লি, কাছারের ডিআইজি শূন্যদেও চৌধুরী, কাছার জেলার পুলিশ সুপার চন্দ্রকান্ত নিমবাল্কর ও স্থানীয় থানার ওসি সাহাবউদ্দীনের। মিজোরামের তরফে এফআইআর-য়ের বিষয়টি আসামের মুখ্য সচিব ও ডিজি-কে জানানো হয়েছে। এফআইআর-এ নাম উল্লেখিত ব্যক্তিদের কোলাসিবের ভাইরেংটে থানায় হাজিরার কথা বলা হয়েছে।
সংঘর্ষের ঘটনায় উত্তাপ ক্রমশ বাড়ছে। এর আগে আসামের হিমন্ত বিশ্বশর্মী সরকারও নির্দেশিকা জারি করে আসামের বাসিন্দাদের মিজোরামে যেতে বারণ করেছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, 'মিজোরামের মানুষের হাতে একে-৪৭, স্নাইপারের মতো অত্যাধুনিক অস্ত্র রয়েছে। মানুষ আতঙ্কিত। মিজো সরকারের তা বাজেয়াপ্ত করা দরকার। এর আগে কীভাবে আসমীয়ারা ওই রাজ্যে যাবেন? অবস্থা স্বাভাবিক ও খতিয়ে দেখা পর্যন্ত আসামবাসীকে মিজোরামে না যাওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। সেখানে শান্তি ফিরলে তবেই যাওয়া উচিত হবে।' মিজোরামের সরকারি আধিকারিক ও রাজ্যের একমাত্র সাংসদের বাড়িতে সমন পাঠিয়েছে। তারপরই পাল্টা রদক্ষেপ করল মিজোরামের পুলিশ।
গত ২৬ জুলাই আসাম-মিজোরাম সীমানায় সংঘর্ষ হয়। এতে নিহত হয়েছে আসাম পুলিশের ছ'জন কর্মী ও এক নাগরিক। এই ঘটনায় আগেই মিজোরামের কোলাসিব জেলার ছ'জন সরকারি কর্মীকে সমন পাঠিয়েছে আসাম পুলিশ। ঢোলাই থানায় এফআইআর দায়ের করা হয়। ২রা অগাস্ট অভিযুক্তদের থানায় হাজিরা দিতে বলা হয়েছে। অস্ত্র আইন, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট ও উস্কানির অভিযোগের বিষয়টি এফআইআর-এ উল্লেখ রয়েছে।
পুলিশ পাঠানো হয় মিজোরামের একমাত্র সাংসদ কে ভালনাভিমার দিল্লির বাসভবনেও। জানা গিয়েছে সেই সময় সাসংদ বাড়িতে ছিলেন না। আসাম পুলিশ রেসিডেন্সিশিয়াল কমিশনারের মাধ্যমে সাংসদের কাছে সমন পৌঁছানোর চেষ্টা করলেও অফইসার তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন। ফলে সাংসদের বাসভনের বাইরেই সেটি সেঁটে দেওয়া হয়েছে। আসাম পুলিশ জানিয়েছে, সাসংদকে সমন দেওয়া হয়েছে। এবার উনি থানায় হাজিরা না দিলে আইন অনুসারে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে। জারি হতে পারে গ্রেফতারি পরওয়ানা। ১লা অগাস্ট তাঁকে ঢোলাই থানায় আবশ্যিক হাজিরার কথা বলা হয়েছে।
পরস্পর অবিশ্বাসের আবহেই মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, 'মিজোরামের তরফে প্রথমে গুলি চলেনি। তবে আমরা আমরা শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই। হিমন্তও শান্তিপূর্ণ সমাধানে আগ্রহী। প্রয়োজনে সব মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে দ্বিতীয় দফার বৈঠকে রাজি আছি।' গত ২৩ জুলাই মিজোরাম সীমানা কমিটি সিদ্ধান্ত নেয় যে, রাজ্যের উত্তরংশে ১৮৭৫ সালের নির্দেশিকা অনুসারেই সীমানা চিহ্নিত করা হবে। আসাম সরকার জানিয়েছে, ১৮৭৫ নয়, ১৯৯৩ সালের লুসাই হিল ও মণিপুর রাজ্যের মধ্যে সীমানা ভাগ নির্দেশিকা মানতে হবে। ফলে সীমানা ভাগ ঘিরেই আসাম-মিজোরাম অসন্তোষ চরমে।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন