অবশেষে টনক নড়ল পূর্ত দফতরের। বাগুইআটি গোডাউনে পড়ে থাকা মোবাইল ব্রিজ ইন্সপেকশন ইউনিট (M.B.I.U.)-এর সন্ধান পেয়েছিল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা। একদিকে সেতু ভেঙে পড়ছে অন্য দিকে গ্যারেজে পড়ে আছে সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার যন্ত্র। এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পর নড়েচড়ে বসে রাজ্য পূর্ত দফতর। অবশেষে সেই এমবিআইইউ যন্ত্রটি শুক্রবার বর্ধমানের নতুনহাটে অজয় নদের ওপর লোচনদাস সেতু পর্যবেক্ষণ করল। শনিবার এই ইউনিটটি খতিয়ে দেখেছে বীরভূমের ইলামবাজার সেতুটি। সেখানে যন্ত্রটির কাজ পর্যবেক্ষণ করতে ছুটে গিয়েছেন পূর্ত দফতরের প্রধান সচিব অর্ণব রায়। ইলামবাজারে পাশে আর একটি ব্রিজ হচ্ছে। নতুন সেতুর টাকা অনুমোদন হয়েছে। পূর্ত দফতর সূত্রে খবর, ওই সেতুটির হাল খুব খারাপ। ইলামবাজার সেতুর পর ফের কাটোয়ার কাশিরাম দাশ সেতু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। তারপর বাগুইআটির গ্যারেজে ফিরবে। বিশ্বকর্মা পুজো সেরে ফের এমবিআইইউ বেরিয়ে পড়বে রাজ্য়ের অন্যান্য সেতুর হাল হকিকত যাচাই করতে।
এই মোবাইল ব্রিজ ইন্সপেকশন ইউনিট (M.B.I.U.)-এর নিয়মিত ব্যবহার দুর্ঘটনা এড়াতে সাহায্য করতে পারে বলে জানিয়েছিলেন প্রাক্তন পূর্তমন্ত্রী ক্ষিতি গোস্বামী। এদিন সেতু পরীক্ষার যন্ত্র ফের তার কাজ শুরু করায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রাক্তনমন্ত্রী। ক্ষিতিবাবুর বক্তব্য, এখানে যে পরিকাঠামো রয়েছে তা ঠিক করে ব্য়বহার করলেও অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। সেদিকে সরকারে নজর দেওয়া উচিত।
সূত্রের খবর, গত মঙ্গলবার নবান্নে দফতরের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। সেই বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে রাজ্যের সামগ্রিক রাস্তা ও সেতু রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে। মন্ত্রী কড়া নির্দেশ দিয়েছেন দফতরের আধিকারিকদের। সেতু পরীক্ষার যন্ত্র নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েন দফতরের আধিকারিকরা। সঠিক জবাব মেলেনি কারও কাছ থেকে। ওই বৈঠকে মন্ত্রী স্পষ্ট নির্দেশ দেন অবিলম্বে সেতু পরীক্ষার যন্ত্রটি ব্যবহার করতে। পূর্ব বর্ধমান থেকে যন্ত্রটি চাওয়া হয়েছিল সেতু পরীক্ষার জন্য়। তাই তা তড়িঘড়ি বর্ধমানের নতুনহাট পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবারই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়ে যায়। আপাতত তিনটে সেতু পরীক্ষা করা হবে।
দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনকার যে টিম কাজ করছে সেটি খুব অভিজ্ঞ নয়। জোড়াতালি দিয়ে গঠন করা নতুন টিম পাঠানো হয়েছে। ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশের বক্তব্য, এই যন্ত্রটি নিয়ে যে টিম কাজ করত তা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তাদের বিভিন্ন জায়গায় বদলি করে দেওয়া হয়েছে। যার ফলে বেসিক জায়গাটি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এই যন্ত্রটি নানা ভাবে সেতুর কাজ করে। সেতুর পরীক্ষা থেকে মেরমতি সব কাজেই প্রয়োজন এই যন্ত্র। ব্রিজে গজিয়ে ওঠা গাছ সহজেই কাটা যায় এই যন্ত্র ব্য়বহার করে। তাছাড়়া অন্যান্য মেরমতির কাজও হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন ডিভাইসের মাধ্যমে ব্রিজের হাল দেখা সম্ভব। অনেক কম খরচে সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা সম্ভব। বিষেজ্ঞদের বক্তব্য, এমবিআইইউ নিয়ে নিয়মিত সেতু পর্যবেক্ষণ করলে ঝুঁকি অনেক কমে যেত। মাঝেরহাটের মত যাতে রাজ্যের অন্য কোনও সেতুর হাল না হয় তা নজরে রাখা দরকার।
রাজ্যে ২০১১ সালের পর পরিবর্তনের সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আরও দুটো সেতু পরীক্ষার যন্ত্র কেনা হবে। একটা যন্ত্রের ওপর অহেতুক চাপ পড়বে তাই আরও দুটি কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সূত্রের খবর, তখন প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে, পশ্চিমবঙ্গকে তিনটে জোনে ভাগ করা হবে। সেতু পরীক্ষার একটি যন্ত্র থাকবে উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি বা জলপাইগুড়িতে। দক্ষিণবঙ্গের বাঁকুড়া বা দুর্গাপুরে আর একটি যন্ত্র রাখা থাকবে। আর বাগুইআটিতে পুরনো যন্ত্রটি রাখা হবে। তাহলে একটি যন্ত্র নিয়ে হুড়োহুড়িও পড়বে না। কিন্তু সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি। জানা গিয়েছে, সেই প্রোপোজাল বাস্তবায়িত করতে ফের চিন্তা-ভাবনা করছে পূর্ত দফতর।
কেন্দ্রীয় সরকারের সড়ক পরিবহণ ও হাইওয়ে মন্ত্রক ২০০৭ সালে জার্মানীতে তৈরি তৎকালীন চার কোটি টাকা দামের এই মোবাইল ব্রিজ ইন্সপেকশন ইউনিট (M.B.I.U) দিয়েছিল রাজ্যকে। অভিযোগ ওঠে প্রথম দিকে সেতু পরীক্ষার জন্য নিয়মিত যন্ত্রটি বাইরে বের হলেও পরে তা অনিয়মিত হয়ে যায়। দফতরের একাংশের কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগ ওঠে। দফতরের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ঘটতে থাকে। যার ফলেই বাগুইআটির গোডাউনে বদ্ধ হয়ে গিয়েছিল এমবিআইইউ।