দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে স্বাধীনতা দিবসের দিন ১০০ লক্ষ-কোটি টাকার 'গতিশক্তি মাস্টার প্ল্যান'-এর ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আগামী দু'বছর কোন দিশায় দেশ এগিয়ে যাবে, এদিন লালকেল্লায় স্বাধীনতা দিবসের ভাষণ থেকে তারই রূপরেখা জানান প্রধানমন্ত্রী। এই প্রেক্ষিতেই তিনি বলেন, "আগামী দিনে কেন্দ্র পিএম গতিশক্তি প্ল্যালের সূচনা হবে। এটি ১০০ লক্ষ কোটির একটি জাতীয় পরিকাঠামো প্রকল্প, যা দেশের সামগ্রিক পরিকাঠামোর ভিত্তি স্থাপন করবে এবং দেশের অর্থনীতিকে পথ দেখাবে। ভারতের উন্নয়ের জন্য নির্মাণ ও রফতানিতে গুরুত্ব আরোপ করতে হবে।"
এই প্রকল্পের আওতায় স্বাধীনতার ৭৫তম দিবসে ৭৫ সপ্তাহে দেশজুড়ে চলবে ৭৫টি ‘বন্দে ভারত’ ট্রেন। যার ফলে গোটা জুড়বে, একসূত্রে গাঁথা পড়বে ভারত। এই প্রকল্পে দেশজুড়ে কর্মসংস্থান বাড়বে বলেও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
এছাড়া শক্তি ক্ষেত্রেও ভারতের আত্মনির্ভরতার ঘোষণা করেছেন মোদী। তাঁর কথায়, "শক্তিক্ষেত্রেও ভারতে আত্মনির্ভর করে তুলেতে হবে। এটা আমাদের অঙ্গীকার।" মোবাইল শিল্পেও বিশ্বে ভারত স্থান করে নিয়েছে বলে স্বগর্বে ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। লালকেল্লার ভাষণে তিনি বলেছেন, ''ভারত বর্তমানে ৩০০ কোটি ডলারের মোবাইল রফতানি করছে। দেশীয় পণ্য গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে। স্টার্ট-আপের পাশে দাঁড়ানো থেকে কর ছাড়- সবরকমভাবে উৎসাহ দেবে সরকার।''
আরও পড়ুন- ‘নতুন ভারত বড় স্বপ্ন দেখে-কেউ রুখতে পারবে না’, লালকেল্লায় মোদী
করোনাযোদ্ধাদের ভূয়সী প্রশংসার পাশাপাশি কোভিড ভ্যাকসিন তৈরিতেও দেশ আত্মনির্ভর বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। করোনার প্রকোপ ভারতে অনেক কম ও এই ভয়ঙ্কর ভাইরাসে্র মোকাবিলা এ দেশের সবাই দারুনভাবে করছে বলেও মনে করেন তিনি। স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ''অনেক বাধা রয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমরা সবের মোকাবিলা করে এগিয়ে চলেছি। বিজ্ঞানী, শিল্পপতিদের অক্লান্ত চেষ্টা আমাদের শক্তি। আমাদের ভ্যাকসিনের জন্য অন্য দেশের মুখাপেক্ষী হতে হয় না। ভ্যাকসিন তৈরিতে আমরা স্বনির্ভর। গর্বের সঙ্গে আমরা বলতে পারি বিশ্বের সবচেয়ে বৃহথ টিকাকরণ কর্মসূচি হচ্ছে ভারতেই। ইতিমধ্যেই ৫৪ কোটি মানুষ ভ্যাকসিন পেয়েছেন।''
মোদীর কথায় স্বাধীনতা দিবসের সংকল্প হওয়া উচিত, "সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস ও সবকা প্রয়াস’, এটাই নয়া ভারতের স্বপ্ন পূরণের অঙ্গীকার। ভবিষ্যতে শহরের মতোই পরিষেবা পাবে গ্রামবাসীরা। এটাই ভারতের সংকল্প।" পিছিয়ে পড়াদের হাত ধরে এগিয়ে নিয়ে গিয়ে দেশকে পোক্ত করার কথা উঠেছে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে। তিনি বলেছেন, "ঊজ্জ্বলা থেকে আয়ুষ্মান সহ আরও অনেক প্রকল্পের সুবিধা পায় দেশের গরিব মানুষয়। অনেক দ্রুত আমরা এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। আরও এগোতে হবে। গ্রামে ১০০ শতাংশ রাস্তা, ১০০ শতাংশ পরিবারের কাছে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, বিদ্যুৎ, আবাস যোজনার মাধ্যমে সকলকে জুডে দিতে হবে।"
আরও পড়ুন- স্বাধীনতার ৭৫ বছর, ইতিহাস ও তাৎপর্য জানলে গর্বে মাথা উঁচু হবে
মানুষের স্বার্থে আমলাতন্ত্রের চালনা, নীতি নির্ধারণ ও তার প্রয়োগে সরকার সরলীকৃত ব্যবস্থা কার্যকর করেছে বলেও দাবি করেছেন মোদী। তাঁর ব্যাখ্যা, ''বড় বদলে দেশের রাজনৈতিক ইচ্ছার অভাব নেই। ৭৫ বছরের সমস্যা কয়েক দিনে মিটবে না। কিন্তু সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আমলা ব্যবস্থায় বদল ঘটানো হয়েছে। ১৫ হাজারের বেশি নিয়ম-নীতির বাঁধান আগলা করা হয়েছে। সরকার নাগরিক জীবনে দখলদারি করবে না।"
স্বাধীনতা দিবসের মঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রী নারী শিক্ষায় যুগান্তকারী ঘোষণা করেন। বলেন, "শিক্ষা হোক বা অলিম্পিক, মেয়েরা সর্বক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। তাঁদের সাফল্যে দেশ গর্বিত। তাঁদের সম্মান জানাতে সমানাধিকার সুনিশ্চিত প্রয়োজন। এবার থেকে সৈনিক স্কুলেও মেয়েরা পড়তে পারবে।"
কৃষি আইন নিয়ে গত এক বছর ধরে প্রতিবাদ আন্দোলন চালাচ্ছেন কৃষকরা। এই প্রেক্ষাপটেই মোদীর ঘোষণা, "ছোট কৃষকরাই দেশের গর্ব। তাঁদের স্বার্থেই নয়া কৃষি আইন হয়েছে। আগামী বছরগুলোতে আমাদের দেশের ক্ষুদ্র কৃষকদের যৌথ শক্তি বাড়াতে হবে। বর্তমানে কৃষকরা কিষাণ সম্মাননিধি পাচ্ছেন।তাঁদের নতুন সুবিধা দিতে হবে।"
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন