দুদিন আগেই, অর্থাৎ শনিবার, রেড রোডে কলকাতার বৃহত্তম ঈদের নমাজের সমাবেশে অন্তত চারজন গরমে এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়েন যে তাঁদের হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। ঘটনাচক্রে দিনটা ছিল পয়লা আষাঢ়, কবি কালিদাসের 'আষাঢ়স্য প্রথম দিবস'। যেদিন ঝেঁপে বৃষ্টি পড়ার কথা, মুছে যাওয়ার কথা গ্রীষ্মের সমস্ত গ্লানি। খিচুড়ী-বেগুনি-আলুভাজার দিন। তার ওপর কেকের ওপর চেরির মত ছিল ঝমঝমে বৃষ্টিতে আরাম করে বাড়িতে বসে বিশ্বকাপ দেখার আশা।
আবার একটু আগেই এক সহকর্মী সুন্দরবন অঞ্চলের একটা ছবি পাঠালেন। অসহ্য দাবদাহের তাড়নায় গোলপাতার গাছের নীচে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করছে একটি বৃহৎ নোনাজলের কুমির। প্রকাশ্য দিবালোকে, জনসমক্ষে, নিজেকে লুকিয়ে রাখার কোন চেষ্টাই না করে।
আরও পড়ুন: Health Tips for Summer Heat Wave: তীব্র গরমে মাথায় রাখুন এই দিকগুলো
Kolkata Rain Forecast: প্রচণ্ড গরমে আশ্রয়ের খোঁজে সুন্দরবনের নোনাজলের কুমির। ছবি: তাপস দাশ
মোটমাট ব্যাপারটা হলো, কলকাতা-সহ গোটা দক্ষিণবঙ্গ এই ভরা বর্ষাকালে heat wave-এ ধুঁকছে, সে মানুষ হোক বা জীবজন্তু। এবং weather office-এর বক্তব্য অনুযায়ী, আগামী অন্তত ৪৮ ঘন্টা এই অঞ্চল এভাবেই ধুঁকবে। কারণ সেই সময়ের মধ্যে ছিটেফোঁটা বৃষ্টির আশাও নেই। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের ডিডিজিএম সঞ্জীব বন্দ্য়োপাধ্য়ায় বলেছেন, "আপাতত দু’দিন কলকাতা-সহ গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে তাপপ্রবাহ চলবে। এই মুহূর্তে বৃষ্টির কোনও সম্ভাবনা নেই।" একইরকম নির্মমভাবে হাওয়া অফিসের আরেক কর্তা যা বললেন, শুনে এই গরমেও গা হিম হয়ে যাওয়ার কথা। "বর্ষা দুর্বল হয়ে পড়েছে, তাই এই মুহূর্তে বৃষ্টির কোনও সম্ভাবনা নেই। বরং কলকাতায় গরম, অস্বস্তি বাড়বে।"
আজকের কথাই ধরুন। আলিপুরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০.৬ (স্বাভাবিকের থেকে সাত ডিগ্রি বেশি), দীঘা তে ৩৮.৯ (আবার সাত বেশি), বাঁকুড়ায় ৪২.৪, কৃষ্ণনগরে ৩৯.৬ (দু জায়গাতেই সাত বেশি), বর্ধমানে ৪১.৮, পুরুলিয়াতে ৪০.৭, দমদমে ৪০.৬। শুধুমাত্র শেষের তিনটি তাপমাত্রা স্বাভাবিক। এবং এই উলটপুরান লেখা হচ্ছে উষ্ণ পশ্চিমী বায়ুর প্রভাবে, যা কার্যত মৌসুমি বায়ুকে আটকে রেখে দিয়েছে।
Kolkata Rain Forecast: আপাতত ছবি দিয়েই কাজ চালাতে হবে। আগামী ৪৮ ঘন্টা বৃষ্টির কোন আশা নেই। ছবি: শশী ঘোষ
এক সপ্তাহের বেশি হয়ে গেল, তিনি এসেছেন। গত সপ্তাহের পয়লা দিনে নিয়মকানুন মেনেই সাড়ম্বরে দক্ষিণবঙ্গে পা রেখেছিলেন rain রানি। রাখার সঙ্গে সঙ্গেই কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গকে স্বস্তির বৃষ্টিতে ভিজিয়েছিলেনও বটে। কিন্তু তারপরই যেন নাকে সরষের তেল দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন, ওঠার নাম নেই। তিনি উধাও, তাই সব ফুটেজ খেয়ে পাগলু ডান্স করছেন গ্রীষ্মদা, তাঁর তেজে হিমশিম খেয়ে ঘামতে ঘামতে আমার-আপনার মেসি, রোনাল্ডো ভুলে যাওয়ার জোগাড়।
ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে এই সপ্তাহের মাঝামাঝি একটু আধটু বৃষ্টি হলেও হতে পারে। কিন্তু বাজি ধরবেন না।