/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/02/india-pakistan-explained.jpg)
অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি পাকিস্তানের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করেছেন
১৯৯৪ সালের গ্যাট (General Agreement on Tariffs and Trade)-এর প্রথম অনুচ্ছেদেই বলা আছে, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সমস্ত সদস্য দেশ একে অপরকে বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত দেশ বা মোস্ট ফেভারড নেশন বলে চিহ্নিত করবে।
সারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মধ্যেকার বাণিজ্য আইন স্থির করার একমাত্র সংগঠন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা। এদের সদস্য ১৬৪টি দেশ। সামান্য হাতে গোনা কয়েকটি দেশ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্য নয়।
আরও পড়ুন, মাসুদ আজহারকে সন্ত্রাসবাদী ঘোষণা: পথের কাঁটা চিন
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার উদ্দেশ্য সকলের স্বার্থে খোলা বাণিজ্য। সে দিক থেকে দেখলে বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত দেশ তকমাটি খাপছাড়া। কার্যত, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার অন্তর্ভুক্ত সব দেশই অন্য দেশগুলির কাছে বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত।
বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত দেশের নীতি অনুসারে এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বাধ্যবাধ্যকতা অনুসারে ভারত ১৯৯৬ সালে পাকিস্তানকে বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত দেশের মর্যাদা দেয়। দু দশকের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও পাকিস্তান কিন্তু ভারতকে সে মর্যাদা দিয়ে উঠতে পারেনি।
দু দেশের মধ্যে আমদানি-রফতানি নিয়ে পাকিস্তান বারবার নানারকম শর্ত আরোপ করায় এ নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে ভারতের মধ্যে। পাকিস্তানকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিও উঠেছে বারবার, বিশেষ করে সন্ত্রাস হামলার পর বা দু দেশের মধ্যে যখনই কোনও রকম উত্তেজনা সৃষ্টি হয় তখনই। কিন্তু ভারত সে ব্যাপারে খুব বেশি এগোয়নি।
আরও পড়ুন, কাশ্মীরে সিআরপিএফ: কী তাদের ভূমিকা
পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য সংখ্যাগত দিক থেকে দেখলে সামান্যই। ২০০০-০১-এ এবং ২০০৫-০৬-এ বাণিজ্যের পরিমাণ বেড়েছিল তিন গুণ। ২৫১ মিলিয়ন ডলার থেকে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৬৯ মিলিয়নে। কিন্তু পরবর্তী দশকগুলিতে বৃদ্ধির হার মন্থর। অনেক ছোট দেশ ভূটানের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যের পরিমাণ পাকিস্তানের অর্ধেকেরও বেশি। ভূটানের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যের পরিমাণ ৮৭২৩ কোটি টাকা, যেখানে পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্যের পরিমাণ ১৭,২০০ কোটি টাকা। ২০০৭ সালে বিশেষজ্ঞ সংস্থার হিসেব ছিল দু দেশ যথাযথ ব্যবস্থা নিলে পারস্পরিক বাণিজ্য হতে পারে ১১.৭ বিলিয়ন ডলার (৪৬,০৯৮ কোটি টাকা)। কিন্তু ২০১৭-র আর্থিক বর্ষে সে পরিমাণ ছিল মাত্র ২.২৯ বিলিয়ন ডলার, ভারতের মোট বাণিজ্যের মাত্র ০.৩৫ শতাংশ।
পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বারবার দু দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্কের উন্নতির কথা বলেছেন, বলেছেন উপমহাদেশের মানুষের মধ্যে থেকে দারিদ্র্য দূর করতে এবং তাদের মানোন্নয়নে আলোচনার মাধ্যমে দূরত্ব মেটাতে হবে, বাণিজ্য শুরু করতে হবে।বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত দেশ হিসেবে পাকিস্তানের নাম প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত ভারত নিয়েছে কূটনৈতিক স্তরে পাকিস্তানকে চাপে ফেলা এবং তাদের শিল্প সংকোটন ঘটানোর উদ্দেশ্যে। দুদেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ কম হলেও রাসায়নিক এবং তুলা- এই দুই ক্ষেত্রে ভারত থেকে আমদানির উপর অনেকটাই নির্ভর করতে হয় পাকিস্তানকে। তবে এ সিদ্ধান্তের ফলে পাকিস্তানের চরমপন্থীরা যে তাদের ভারতবিরোধী সুর চড়াতে সাহায্য করবে, তাতে সন্দেহ নেই।