Advertisment

'এভারেস্ট বাড়েওনি, কমেওনি'!

পর্বতারোহীদের কাছে কেন গুরুত্বপূর্ণ নয় এই উচ্চতা? ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে জানালেন এভারেস্ট-সহ একাধিক শৃঙ্গজয়ী পর্বতারোহী দেবাশিস বিশ্বাস।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

পৃথিবীর উচ্চতম শৃঙ্গ। ফাইল চিত্র

বিশ্বের উচ্চতম শৃঙ্গের উচ্চতা আরও বাড়ল কি কমল সে বিষয়ে উচ্ছ্বসিত নন পর্বতারোহী কিংবা শৃঙ্গজয়ীরা। সাধারণ মনে অবশ্য প্রশ্ন উঠতে পারে এভারেস্টের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কেন সত্যিই কি কিছু যায় আসে না? পৃথিবীর উচ্চতম শৃঙ্গ আরোহনেরর স্বপ্ন দেখা পর্বতারোহীদের কাছে কেন গুরুত্বপূর্ণ নয় এই উচ্চতা? সামিটে এর কোনও প্রভাব পড়বে? এই সব প্রশ্নের উত্তর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে জানালেন এভারেস্ট-সহ একাধিক শৃঙ্গজয়ী পর্বতারোহী দেবাশিস বিশ্বাস

Advertisment

এভারেস্ট-নামের মধ্যেই যেন একটা 'সর্বোচ্চ' ভাব রয়েছে। সেই পর্বতশিখর জয় যেন বিশ্বজয়েরই সমান। হবে নাই বা কেন? সমুদ্রপৃষ্ট থেকে ৮৮৪৮ মিটার উচ্চতার শৃঙ্গ জয় মুখের কথা নয়। ১৯৫৪ সালে সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার তরফে এভারেস্টের যে উচ্চতা সরকারিভাবে প্রকাশিত হয় তা ছিল ৮৮৪৮ মিটার। কিন্তু সম্প্রতি এই উচ্চতা নিয়েই গোল বাঁধায় চিন ও নেপাল। দুজনেই দু'রকম উচ্চতা প্রকাশ করে। তবে শেষমেষ জট কাটিয়ে দুই দেশের তরফে যৌথভাবে ঘোষণা করা হয় এভারেস্টের নয়া উচ্চতা। আগের তুলনায় যা .৮৬ মিটার বেশি, অর্থাৎ এভারেস্ট এখন ৮৮৪৮.৮৬ মিটার।

publive-image পায়ে পায়ে বিপদ নিয়েই এভারেস্ট জয়ের লক্ষ্য। ফাইল চিত্র

এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে, বিশ্বের উচ্চতম শৃঙ্গ উচ্চতায় তো বাড়ল, তবে কি এর আগের এভারেস্টজয়ীদের রেকর্ডে কিছু 'কম পড়ল'? এভারেস্টজয়ী দেবাশিস বিশ্বাসের কথায়, "পর্বতশৃঙ্গটির নাম এভারেস্ট। সে উচ্চতা কতটা বাড়ল, কমল সত্যিই কি তাতে এভারেস্টের মহিমা, গৌরবে কিছু যায় আসে?" এমন প্রশ্ন অবশ্য উঠেছিল বছর কয়েক আগে। এভারেস্টে ভয়ঙ্কর তুষারধ্বসের পর গুজব ওঠে বিশ্বের সর্বোচ্চ শিখরের উচ্চতা নিয়ে। কিন্তু এমনটা কেন হয়? দেবাশিসবাবুর কথায়, "বরফের স্তর কম বেশি হয়। যার ফলে উচ্চতা নিয়ে দ্বিমত চলে এসেছে এতকাল। বর্তমানে উন্নত প্রযুক্তি দিয়ে কল্পনায় বরফের চাদরকে সরিয়ে উচ্চতা হিসেব করা হচ্ছে। সেই মোতাবেক এই উচ্চতা সরকারিভাবে প্রকাশিত হয়েছে। তবে উচ্চতা কিন্তু বাড়েওনি, কমেওনি। এভারেস্ট এভারেস্টই আছে।"

publive-image দুর্গম গিরি জয়ের নেশায় চলছে আরোহণ। ফাইল চিত্র

এর নেপথ্যে রয়েছে ভূ-তাত্ত্বিক থিয়োরি। এভারেস্টের প্রতি বছরই উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। এর কারণ প্লেট টেকটনিক (গ্রিক দেবতা টেকটনিসের নামে এই নাম) মত। ইন্ডিয়ান এবং ইউরোসিয়ান টেকটনিক প্লেটের ধাক্কাতেই নীচের পলিস্তর বাড়তে থাকে। দেবাশিস বিশ্বাসের কথায়, 'কয়েক লক্ষ বছর ধরে এই কাজ প্রাকৃতিকভাবে হয়ে আসছে, আগামী কয়েক লক্ষ বছর ধরে এই কাজ চলবে।তাই প্রতিবছর ৬ থেকে ৭ সেন্টিমিটার করে এভারেস্ট কিন্তু লম্বা হচ্ছে। শুধু এভারেস্ট নয়, হিমালয় রেঞ্জের সমস্ত শৃঙ্গ উঁচু হচ্ছে এবং উত্তর দিকে হেলেও যাচ্ছে। তাই এই নয়া উচ্চতা ঘোষণার আগে যে লোকটি এভারেস্ট শৃঙ্গ জয়ে করেছে তাঁরও যা ক্রেডিট, এরপর যারা জয় করবেন তাঁদেরও একই রেকর্ড থাকবে। পাহাড়িয়া হিসাবে আমরা কখনই ভাবব না যে এখন তো উচ্চতা বেড়ে গিয়েছে, তাহলে আবার জয় করতে হবে।'

এভারেস্ট যেমন পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ, তেমনই দুর্গম ও বিপদসঙ্কুল গিরি। সামান্য ভুলও ক্ষমা করে না এই শৃঙ্গ। তাই উচ্চতা যাই হোক না কেন, কঠিনতম লড়াইকে জয় করে এভারেস্টের শিখরে আরোহণই এগিয়ে থাকবে। বাকি, 'তোমরা যা বলো তাই বলো।'

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Mount Everest Everest
Advertisment