আর্থিক বেনিয়মের অভিযোগে এবার নাম জড়াল ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেট অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির স্ত্রী সাক্ষী ধোনির। আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে নির্মাণ সংস্থা আম্রপালি গ্রুপের বিরুদ্ধে। সেই মামলাতেই কেঁচো খুড়তে কেউটে বেরিয়ে পড়ল। আম্রপালীর একটি গ্রুপ কোম্পানি আম্রপালি মাহি ডেভলপার্স প্রাইভেট লিমিটেডের শেয়ারহোল্ডার ছিলেন ধোনির স্ত্রী। এই কোম্পানির ২৫ শতাংশ শেয়ার ছিল সাক্ষীর নামে। আম্রপালী মাহি ডেভলপার্স প্রাইভেট লিমিটেডের ডিরেক্টরও ছিলেন ধোনি পত্নী। এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য এবার সামনে এসেছে।
মজার ব্যাপার হলো, এর আগে এই গ্রুপের বিরুদ্ধেই আর্থিক বেনিয়মের অভিযোগ আনেন মহেন্দ্র সিং ধোনি স্বয়ং। তাঁর দাবি, রাঁচিতে একটি ৫,০০০ স্কোয়ার ফুটের ফ্ল্যাটের জন্য আগাম টাকা দেওয়া সত্ত্বেও ফ্ল্যাটটি হাতে পান নি তিনি। তাছাড়াও এই গ্রুপের দীর্ঘদিনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাস্যাডর হওয়ার সুবাদে তাঁর বকেয়া পাওনা আন্দাজ ৪০ কোটি টাকা বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: আমি যৌন হেনস্থার শিকার: সংসদে সরব ডেরেক
আম্রপালি গ্রুপে ফরেন্সিক অডিটের রিপোর্ট জমা পড়েছে সুপ্রিম কোর্টে। সেই রিপোর্টেই মিলেছে সাক্ষী ধোনি সংক্রান্ত তথ্য। ক্রেতাদের থেকে নেওয়া টাকা আম্রপালীর যে ৪৭টি গ্রুপ কোম্পানিতে ঘুরপথে (ডাইভার্ট) দেওয়া হয়েছিল, তার মধ্যে অন্যতম আম্রপালি মাহি ডেভলপার্স প্রাইভেট লিমিটেড। অডিট রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ক্রেতাদের থেকে নেওয়া ৫,৬১৯ কোটি টাকা ঘুরপথে আম্রপালি গ্রুপের কোম্পানিগুলিতে জমা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে আম্রপালী মাহি ডেভলপার্স প্রাইভেট লিমিটেড। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে এই কোম্পানি অন্তর্ভুক্ত করা হলেও ২০১২, ১৩, ১৪ অর্থবর্ষে এই কোম্পানির আয়-ব্যয়ের, হিসেব প্রকাশ করা হয়নি।
আরও পড়ুন: তৃণমূলেই আছি, দল প্রমাণ করল আমার দাবি ন্যায্য ছিল: সব্যসাচী
অডিট রিপোর্টে বলা হয়েছে, "আমরা প্রাথমিক ভাবে জেনেছি, রাঁচিতে একটি প্রকল্পের কাজে যুক্ত ছিল এই কোম্পানি। একটি মউ-ও স্বাক্ষরিত হয়েছিল দু’পক্ষের মধ্যে। যদিও সেই কপি আমাদের হাতে আসেনি।" ধোনিকে সকলে মাহি নামেই ডাকেন। সেই নামেই এই কোম্পানি। অন্যদিকে, ২০০৯ সাল থেকে আম্রপালী কোম্পানির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর ছিলেন ধোনি। ওই সংস্থার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসার পরই ২০১৬ সালে সরে আসেন তিনি।
অডিট রিপোর্টকে উদ্ধৃত করে মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট জানায়, "ফরেন্সিক অডিটের রিপোর্ট দেখে প্রাথমিক ভাবে দুর্নীতি হয়েছে বলে বোঝা যাচ্ছে। আর্থিক তছরুপও হয়ে থাকতে পারে। আমরা এ ঘটনায় ইডিকে তদন্তের নির্দেশ দিচ্ছি। তদন্ত করে একটি প্রোগ্রেস রিপোর্ট পেশ করা হোক আদালতে। এ ঘটনায় পুলিশ যা তদন্ত করেছে, সে রিপোর্টও আদালতে পেশ করা হোক।"
আরও পড়ুন: ব্রাহ্মণদের জন্য সংরক্ষণ হোক, দাবি কেরালা হাইকোর্টের বিচারপতির
অডিটররা জানিয়েছেন, আম্রপালি গ্রুপ অফ কোম্পানিজের ৪২.২২ কোটি টাকার মধ্যে ৬.৫২ কোটি টাকা ঋতি স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেডকে দিয়েছিল আম্রপালী স্যাফায়ার ডেভেলপার্স প্রাইভেট লিমিটেড। ২০০৯ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে এই লেনদেন হয়েছিল। ধোনির স্পনসরশিপ ও বিজ্ঞাপনের বিষয়টি পরিচালনা করত ঋতি স্পোর্টস নামের সংস্থা।
আম্রপালি মাহি ডেভলপার্স প্রাইভেট লিমিটেডের শেয়ারহোল্ডার হিসেবে সাক্ষীর নাম উঠে আসা নিয়ে মুখ খোলেনি ঋতি গ্রুপ। ফরেন্সিক অডিটের সময় তারা সবরকম সহযোগিতা করেছিল বলে জানিয়েছে ঋতি গ্রুপ। একইসঙ্গে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে ঋতি গ্রুপের তরফে জানানো হয়েছে, আইনজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে এ ব্যাপারে। পরামর্শ মেনেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
Read the full story in English