মহারাষ্ট্রের পালঘর জেলায় একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন টাটা সন্সের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সাইরাস মিস্ত্রি। চলতি মাসের গোড়ার দিকে তাঁর মৃত্যুর খবর গোটা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু, অনেকেই জানেন না, যেখানে সাইরাসের মৃত্যু হয়েছে, ওই রাস্তা আসলে মৃত্যুপথ। কারণ, ওই পথে মৃত্যুমিছিল যেন লেগেই থাকে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, মুম্বই-আহমেদাবাদ হাইওয়ের ১০০ কিলোমিটার পথ গাড়ির সওয়ারিদের কাছে রীতিমতো আতঙ্কের। থানের ঘোড়বন্দর থেকে পালঘর জেলার দাপচারি পর্যন্ত এই ১০০ কিলোমিটার পথ। এই পথে চলতি বছরে এখনই ২৬২টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। ৬২ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন ১৯২ জন।
গাড়ির অত্যধিক গতি, চালকের অসাবধানতার মত নানা কারণে এই দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে। পাশাপাশি অভিযোগ যে এই পথে রক্ষণাবেক্ষণের অভাব আছে। ঠিকমতো পথনির্দেশিকা নেই। গতি নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা পর্যন্ত ওই সড়কে নেই। আর, সেই সব কারণেই এই পথে মৃত্যুর সংখ্যা লাগামছাড়া।
এই পথেই চারোতির কাছে দুর্ঘটনায় পড়েছে মিস্ত্রির গাড়ি। ৪ সেপ্টেম্বর যেখানে মিস্ত্রির মার্সিডিজের দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেখানেই শুধুমাত্র এবছর ২৫টি দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। ছোটখাটো না, সবকটাই ভয়াবহ দুর্ঘটনা। এখনও পর্যন্ত ওই সব দুর্ঘটনায় ২৬ জন মারা গেছেন। কোনও বেসরকারি তথ্য না। মহারাষ্ট্র হাইওয়ে পুলিশের নথিই একথা বলছে। আর, ওই পথেই এবছর চিনচোটির কাছে ৩৪টি দুর্ঘটনায় ২৫ জন মারা গেছেন। মানরের কাছে ১০টি দুর্ঘটনায় ১১ জন মারা গেছেন।
আরও পড়ুন- কংগ্রেসের নির্বাচনে স্বচ্ছতা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন, বিজেপির উদাহরণ টেনে জল্পনা বাড়ালেন চিদাম্বরম
মহারাষ্ট্র পুলিশের সড়ক বিভাগের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, 'দুর্ঘটনার ব্যাপারে চারোতি একটা কালো দাগ। এই জায়গাটা আর মুম্বইয়ের দিকে আরও ৫০০ মিটার। এখানে দুর্ঘটনা যেন লেগেই আছে। মুম্বইয়ের দিকে যাওয়ার সময় সূর্য নদীর ব্রিজের আগে রাস্তা বেঁকে যায়। আর, তিন লেনের রাস্তা দুই লেনের হয়ে যায়। চালকদের সতর্ক করার জন্য এনিয়ে রাস্তায় কোনও সাইনবোর্ডও নেই। আবার, রাস্তায় গতি কমানোর ব্যবস্থাও নেই।'
আর এখানেই দুর্ঘটনায় পড়েছে সাইরাস মিস্ত্রির গাড়ি। গাড়িটা চালাচ্ছিল গাইনোকোলজিস্ট অনাহিতা পান্ডোল। গাড়িটা গিয়ে দ্রুতগতিতে রাস্তার ডিভাইডারে ধাক্কা মারে। পিছনের আসনে থাকা মিস্ত্রি আর তাঁর বন্ধু জাহাঙ্গির পান্ডোল ঘটনাস্থলেই মারা যান। সামনের আসনে ছিলেন অনাহিতা ও তাঁর স্বামী দারিয়াস। তাঁরা গুরুতর জখম হন। প্রশাসনের একাধিক কর্তার অভিযোগ, ইন্ডিয়ান রোড কংগ্রেসের নিরাপত্তা নির্দেশিকাগুলো এই রাস্তায় মানা হচ্ছে না।
কারণ, এই রাস্তা ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি (NHAI) অধীনস্ত। কিন্তু, এর টোল আদায় আর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে আছে বেসরকারি সংস্থা। নির্দেশিকা অনুসারে, প্রতি ৩০ কিলোমিটারে একটি অ্যাম্বুল্যান্স স্ট্যান্ড-বাই রাখতেই হবে। একটি ক্রেন এবং টহলরত যানও থাকতে হবে। কিন্তু, কোথায় কী! সেসবের কিচ্ছুটি নেই এখানে। আর, তাই এই হাইওয়ে যেন মৃত্যুপথ।
Read full story in English