ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড প্রাণ কেড়েছে ১৮ বছরের মেয়ের। সেই মেয়েই ছিল পরিবারের একমাত্র রোজগেরে। কাজ ছাড়া কিছুই মাথায় ছিল না তাঁর। নিশার মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন মা মীরা দেবী। দুদিন আগে দিল্লির মুন্ডকায় বহুতলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মৃত নিশার মতো অনেকে। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে মেয়ের মৃত্যুতে স্বভাবতই শোকাহত পরিজনরা।
নিশার মা মীরা দেবী বলেছেন, "পরিবারে আমার স্বামী, আমি এবং আমার সাত সন্তান। একসময়ে সরকারি স্কুলে পড়ত নিশা। আমি পড়াশোনা করিনি। কিন্তু চেয়েছিলাম মেয়ে পড়াশোনা করে বড় মানুষ হোক। বছর দশেক ধরে আমার স্বামী কর্মহীন। মদ্যপান করা ছাড়া সংসারের কোনও বিষয়ে খোঁজ নেয় না। আমি কাজে বেরোতাম। দুবছর আগে নবম শ্রেণিতে ফেল করে নিশা। তার পর স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয় মেয়ে। এর পর মুন্ডকায় ওই অফিসে গত ১৩ মে কাজ শুরু করে নিশা।"
তিনি আরও বলেছেন, "দশম শ্রেণির সার্টিফিকেটও নেই ওঁর কাছে। আমার স্বামীর জন্য ওঁকে কাজে বেরোতে হয়েছিল। সংসারের বোঝা কাঁধে নিতে গিয়ে চরম পরিণতি হল তাঁর। আমার সন্তানরা অভুক্ত থাকলে নিশা বলত আমাকে কাজে যেতে হবে। আমার প্রতিবেশী যশোদা একটা কারখানায় কাজ করত। ওঁ জানত আমাদের অবস্থা খারাপ। তখন ওঁ এসে আমাকে বলে নিশা কাজে যেতে পারে। বলে, হ্যাঁ ও কাজ করতে পারবে। যশোদাও মারা গেল, আমার মেয়েও বাঁচল না।"
আরও পড়ুন দিল্লিতে রেকর্ড গরম, তাপমাত্রার পারদ ৫০ ডিগ্রি ছুঁইছুঁই
মীরা দেবী কাঁদতে কাঁদতে বলেছেন, "আমার মেয়ে খুব পরিশ্রম করত। প্রতি মাসে সাড়ে ৬ হাজার টাকা পেত। গত দিওয়ালিতে সেটা বেড়ে সাড়ে সাত হাজার টাকা হয়। রোজ সকালে সাড়ে নটায় কাজে চলে যেত। সারাদিনের হাড়ভাঙা খাটনির পর সন্ধে সাতটায় বাড়ি ফিরত। কখনও কখনও ওভারটাইমও করত। সপ্তাহের ছুটি পেত না মাঝে মাঝে। ছুটি নিলে একদিনের বেতন কাটা যেত।"
১৩ মে-র ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে নিখোঁজ মীরাদেবীর মেয়ে। ঝলসানো দেহ দেখে মেয়েকে শনাক্ত করতে পারেননি মীরাদেবী। তাই এই অফিস থেকে অন্য অফিসে ছুটছেন মেয়ের দেহের জন্য। নিজের রক্তও দিয়েছেন ডিএনএ টেস্টের জন্য। এই আশায়, যদি মেয়ের দেহ ফেরত পান।