ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা বিষয়ে গতকালের সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে দেশজোড়া উল্লাসের মধ্যেই ছন্দপতন। মতাদর্শ নির্বিশেষে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম ধর্মযাজক এই রায়ের তীব্র প্রতিবাদ করে বলেছেন, সমকামিতা ধর্ম এবং মানবিকতা বিরোধী।
অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের কিছু আধিকারিক এও বলেছেন, তাঁরা এ নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন। জামিয়াত উলেমা ই হিন্দের সাধারণ সম্পাদক মৌলানা মাহমুদ মাদানি বলেন এই রায়ের পর দেশে যৌন অপরাধের প্রবণতা বাড়বে, এবং শীর্ষ আদালতের উচিৎ ছিল ২০১৩ সালের সেই রায়কেই সমর্থন করা, যাতে চার বছর আগের দিল্লি হাই কোর্টের রায় নাকচ করে বলা হয়েছিল, সমকামিদের মধ্যে যৌন সম্পর্ক অপরাধ।
"সমকামিতা প্রকৃতির বিরুদ্ধে। এর ফলে সমাজে বিশৃঙ্খলা ছড়াবে, এবং যৌন হিংসা ও অপরাধ বাড়বে, যা আমরা রোজই দেখছি। এই লজ্জাজনক প্রবণতার প্রভাবে পরিবার ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে যাবে। কয়েকজন হাতে গোনা লোকের স্বার্থে, যারা সমকামিতাকে মৌলিক অধিকার হিসেবে প্রচার করছেন, গোটা সমাজকে বিচ্যুতির পথে ঠেলে দেওয়া যায় না," বলেন মাদানি। তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর প্রতিটি ধর্মগ্রন্থে সমকামিতাকে "অপ্রাকৃতিক" বলে বর্ণনা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ৩৭৭ খারিজ, ঐতিহাসিক রায়ের দিনে ফিরে দেখা আইনি ইতিহাস
আইনজীবী এবং অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের সদস্য কামাল ফারুকী বলেন, "অপরাধ না হতে পারে, পুলিশের হয়তো অধিকার নেই কারোর শোয়ার ঘরে ঢোকার, কিন্তু একইসঙ্গে, যদি সমাজ নষ্ট হয়, আমার দেশের সংস্কৃতি নষ্ট হয়ে যায়, পার্সোনাল ল বোর্ডের অবশ্যই ভূমিকা রয়েছে, শুধু মুসলমানদের স্বার্থেই নয়, দেশের সব নাগরিকের স্বার্থে।"
ফারুকী আরও বলেন, "আমরা খুব শিগগির আমাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করব, আদালতেও যেতে পারি। আমি স্পষ্ট করে দিতে চাই যে সমকামিতা ইসলাম বিরোধী, কোরআনে এ নিয়ে একটি গোটা পরিচ্ছেদ রয়েছে। এটা যদি নিয়ম হয়ে যায়, ১০০ বছর পর তো মানবিকতা বলে কিছু থাকবে না।" এদিকে একইসঙ্গে তিনি জানান, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা এবং গোপনীয়তার অধিকার প্রত্যেকের আছে।
শিয়া পণ্ডিত এবং সামাজিক নেতা মৌলানা কালবে রশিদ বলেন, "আমি এতে ধর্মীয় রং দিতে চাই না, কিন্তু আমার চোখে, সমকামিতা মহিলাদের অধিকার খণ্ডন করে। পুরুষরা যদি মহিলাদের ভূমিকা পালন করেন, তাহলে মহিলারা কী করবেন? বলতে দ্বিধা নেই, যতদিন ভারতীয় সংস্কৃতি বেঁচে আছে, সমকামিতা শুধুমাত্র অপরাধই নয়, পাপ।"