আজ থেকে প্রায় ২৫ বছর আগে, ১৯৯৭ সালে ভারতের ২৬তম প্রধান বিচারপতির পদ থেকে অবসর নিয়েছিলেন এএম আহমদি। তারপর ভারত কোনও মুসলিম প্রধান বিচারপতি পায়নি। কিন্তু, তাই বলে, ভারতীয় বিচার ব্যবস্থার নিরপেক্ষতার দিকে কেউ আঙুল তুলতে পারেনি। কারণ, ভারতে মুসলিম বা অমুসলিম বিচারক বা বিচারপতি হন না। এখানকার বিচার ব্যবস্থা আদর্শগতভাবেই নিরপেক্ষ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত নয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতি ভিন্ন। সেখানে রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাট বিচারপতি আছেন। তবে, ভারতীয় বিচারপতিরা নিরপেক্ষ হলেও, তাঁদের যে কোনও আদর্শবোধ নেই, তা নয়। তবে, সেই আদর্শবোধ সম্পূর্ণই ব্যক্তিগত। যেমন, বিচারপতি এএন রায় ও এমএইচ বেগ। বিচারপতি কে সুব্বারাও যেমন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। আবার, বিচারপতি কৃষ্ণ আইয়ার ছিলেন কমিউনিস্ট সরকারের একজন মন্ত্রী। তবে, তা নিয়ে কেউ কখনও প্রশ্ন তুলতে পারেনি।
এই প্রেক্ষিতেই গত ২০ জুন, বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়কে লন্ডনের কিংস কলেজে মুসলমানদের প্রতি ভারতীয় বিচার বিভাগের আচরণ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল। একজন আইনের পণ্ডিত, বিচারপতি চন্দ্রচূড় এই প্রশ্নে একদমই বিরক্ত হননি। বরং, তিনি বিনয়ের সঙ্গে উত্তর দিয়েছেন। বুঝিয়ে দিয়েছেন, ভারতের বিচারকরা বিচার করার সময় মামলাকারীর ধর্মীয় পরিচয় মাথায় রাখেন না। তার এক জ্বলন্ত নমুনা মিলেছে গত সপ্তাহেই।
আরও পড়ুন- আপকে গুরুত্বই দিচ্ছে না গুজরাত বিজেপি, হাল ছাড়তে নারাজ কেজরি
বিচারপতি সূর্যকান্ত ও বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা নবীর বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য প্রাক্তন বিজেপি মুখপাত্র নুপুর শর্মার বিরুদ্ধে কঠোর পর্যবেক্ষণ করেছেন। উদয়পুরের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের জন্য বিচারপতি সূর্যকান্ত দায়ী করেছেন নূপুর শর্মাকে। দুর্ভাগ্যবশত, বিচারকদের মন্তব্য সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। যদিও তাঁদের আসল উদ্দেশ্য ছিল শুধুমাত্র বিতর্কের অবসান ঘটানো। ভারতের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিকস্তরে উন্নত করা। মুসলমানদের মধ্যে একটি অতি প্রয়োজনীয় ধর্মীয় অনুভূতি তৈরি করা। এটা কিন্তু, ভারতীয় বিচার ব্যবস্থায় নতুন নয়। সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন বেঞ্চ অতীতে উত্তরাখণ্ডের ধর্ম সংসদের বিরুদ্ধেও একইরকম কড়া পর্যবেক্ষণ করেছিল।
যেমন ২০২১ সালে, ওয়াসিম রিজভি নামে এক ব্যক্তি কুরআনের ২৬টি আয়াত মুছে ফেলার জন্য আবেদন করেছিলেন। সুপ্রিম কোর্ট সেই আবেদন স্বীকার করতে যে কেবল অস্বীকার করেছিল, তা-ই নয়। বরং, আবেদনকারীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছিল। ১৯৮৪ সালে, কলকাতা হাইকোর্টও এমনই একটি পিটিশনের ক্ষেত্রে একইরকম রায় দিয়েছিল। যা ভারতীয় বিচার ব্যবস্থার নিরপেক্ষতার মুখই উজ্জ্বল করেছে।
Read full story in English