উত্তরপ্রদেশ পুলিশ গত ২০ ডিসেম্বর মুজফফরনগর বলেছিল, নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দাঙ্গাহাঙ্গামা ও লুঠতরাজে প্রবৃত্ত হয়েছে। ওই দিন রাত দেড়টার সময়ে পুলিশ ১০৭ জনের নামে অভিযোগ আনে। সকলের বিরুদ্ধেই হত্যার চেষ্টাপ অভিযোগ করা হয়। তবে, ৭৩ জনকে গ্রেফতার করা হলেও, এফআইআরে একটা বিশাল ফাঁক রয়েছে। কোথা থেকে কখন পুলিশ অস্ত্র উদ্ধার করেছে, এবং সে অস্ত্রগুলি কী ধরনের, তার উল্লেখ কোথাও করা হয়নি।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের কাছে পৌঁছনো আদালতের নথিতেও এ ব্যাপারে কোনও উল্লেখ নেই। ফলে গোটা ঘটনায় পুলিশের বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দাঙ্গাহাঙ্গামা ও সরকারি সম্পত্তি ধ্বংসের মামলা হলেও, পুলিশ অভিযুক্তদের কাছ থেকে ঘটনার দিন কোনও অস্ত্রশস্ত্র বাজেয়াপ্ত করেনি।
এবার পুলিশ দাবি করছে, ঘটনার বেশ কিছু ঘণ্টা পর তারা অস্ত্রশস্ত্র আটক করেছে।
মুজফফরনগর পুলিশের এই বিস্ময়কর বয়ান জেলা ও দায়রা আদালতের কাছে সরকারি ভাবে নথিবদ্ধ হয়েছে। ওই আদালতে এখন একগুচ্ছ জামিনের আবেদন চলছে।
পুলিশ আদালতে তাদের জবাবদিহিতে জানিয়েছে, "২০ ডিসেম্বর, ২০১৯-এ ঘটনা ঘটার একদিন পর, ঘটনাস্থল থেকে ২১ ডিসেম্বর, ২০১৯-এ তিনটি দেশি পিস্তল, .৩১৫ বোর, তিনটি দেশি ১২ বোর, তিনটি এসবিবিএল ১২ বোর, একটি ডাবল ব্যারেল দেশি বন্দুক, তিনটি ছুরি, তিনটি তলোয়ার, ৩০টি খোকা বুলেট, সাতটি তাজা বুলেট, ৮টি খোকা বুলেট ১২ বোর, তিনটি বুলেট .৩১৫ বোর, চারটি খোকা বুলেট ৩২ বোর, একটি তাজা বুলেট ৩১ বোর, দুটি তাজা বুলেট ১২ বোর এবং ১২ বোর রিভলবারের চারটি তাজা বুলেট আটক করা হয়েছে।"
কোর্টের নথিতে দেখা যাচ্ছে পুলিশ ঘটনার ১৮ ঘণ্টা পরে এই অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করেছে। এই অস্ত্রগুলি উদ্ধার করা হয়েছে, "সিভিল লাইন পুলিশ স্টেশনের ৫০০ মিটার দূরে"।
অভিযুক্তদের এক আইনজীবীর কথায়, "স্পষ্টতই পুলিশ মিথ্যে মামলা সাজিয়েছে। পুলিশ স্টেশনের কাছে অস্ত্রগুলো শুইয়ে রাখা হয়েছিল নাকি?"
নিয়ম অনুযায়ী, অস্ত্র বাজেয়াপ্ত করার সময়ে একজন নিরপেক্ষ সাক্ষীর উপস্থিতি আবশ্যিক। এ ঘটনায় তেমন কোনও স্বাধীন সাক্ষীর কথাও আদালতের বয়ানে লিপিবদ্ধ নেই।
আদালতে জবাব দেবার সময়ে পুলিশ বলেছে, তাঁদের যেসব আধিকারিকরা ঘটনার দিন কর্তব্যরত ছিলেন, তাঁরা সকলে "আহত হওয়ায় তাঁদের মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য নিয়ে যেতে হয়েছিল"।
এ ব্যাপারে তাঁর মতামতের জন্য মুজফফনরনগরের পুলিশ সুপারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের তরফ থেকে। তিনি ফোন ধরেননি বা মেসেজের উত্তর দেননি।
এ অবস্থায় মুজফফরনগর পুলিশের পক্ষে কেস দাঁড় করানো মুশকিল হয়ে পড়ছে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত খবর অনুসারে, ১৫ জানুয়ারি, গ্রেফতার হওয়া ৭৩ জনের মধ্যে ১৯ জনেরও বেশিকে জামিন দিয়ে দেওয়া হয়েছে, কারণ হয় তাঁদের বিরুদ্ধে প্রমাণ ছিল না বা তাঁদের বিরুদ্ধে মারাত্মক অপরাধের যে অভিযোগ করা হয়েছিল, সেগুলি থেকে তাঁদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি মামলা পুলিশ নিজেই ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১৬৯ ধারা অনুসারে অভিযুক্তদের জামিন দিয়েছে, যার অর্থ প্রমাণে ঘাটতি রয়েছে। অন্য ১০ অভিযুক্তকে দায়রা আদালত জামিন দিয়েছে, কারণ পুলিশ ওই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে নিষেধাজ্ঞা অমান্য ছাড়া আর কোনও কিছুই প্রমাণ করতে পারেনি, দাঙ্গাহাঙ্গামা ও হত্যার চেষ্টায় যুক্ত থাকার অভিযোগ তো নয়ই।