বিরাট পদক্ষেপ শিক্ষা দফতরের। উত্তরপ্রদেশের মুজাফফরনগরের যে স্কুলে ক্লাসরুমে এক মুসলিম ছাত্রকে হেনস্থার ঘটনা ঘটে এবার সেই স্কুল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা দফতর। স্কুলের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত স্কুল বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা বিভাগের তরফে স্কুল প্রশাসনকে আরও একটি নোটিশও জারি করা হয়েছে তাতে বলা হয়েছে স্কুলে পাঠরত শিক্ষার্থীদের আপাতত কাছাকাছি স্কুলে ভর্তির ব্যবস্থা করা হবে। শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে স্কুলটিতে মোট ৫০ জন পড়ুয়া ছিল।
ক্লাসেই মুসলিম ছাত্রকে হেনস্থা, আপোসের চাপে আতঙ্কে পরিবার, শিশুর ভবিষ্যত ঘিরেই প্রশ্ন!বেসরকারি স্কুলের শিক্ষিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি তাঁর শ্রেণিকক্ষে শিশুদের নির্দেশ দিয়েছিলেন একজন ছাত্রকে মারধর করতে। ওই ছাত্রের মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি বিশ্বাসের বিরুদ্ধে রূঢ় কথা বলেছিলেন অভিযুক্ত শিক্ষিকা। শুধু তাই নয়, ‘মুসলিম শিশুদের’ সম্পর্কে তিনি অবমাননাকর মন্তব্য করেছিলেন বলেও অভিযোগ। পুলিশ সূত্রে খবর, গত বৃহস্পতিবার মনসুরপুর থানার খুব্বাপুর গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে।
ঘটনা প্রসঙ্গে নাবালক ওই মুসলিম ছাত্রের বাবা বলেন, “আমার ছেলের বয়স সাত বছর। শিক্ষক আমার সন্তানকে চড় মারার জন্য ক্লাসের অন্য ছাত্রদের নির্দেশ দেন। আমার ভাগ্নে কোন কাজে স্কুলে গিয়েছিল, সেই বিষয়টি দেখতে পায় এবং গোটা ঘটনাটি ক্যামেরায় ধারণ করে। একজনকে দুই ঘণ্টা ধরে নির্যাতন করা হলে সে ভয় পেতে বাধ্য। এটা হিন্দু-মুসলিম ইস্যু নয়। আমরা চাই আইন তার নিজস্ব পথেই চলুক”। যদিও ওই নাবালক ছাত্রের পরিবারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আগে কোনো অভিযোগ করা হয়নি। ভিডিওটি ভাইরাল হলে পুলিশ মামলা দায়ের করে।
মুজাফফরনগর জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অরবিন্দ মাল্লাপ্পা বলেছেন, “আমরা ঘটনার পূর্ণ তদন্ত করেছি। ইতিমধ্যে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছি। শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। শিশু ও তার পরিবারের কাউন্সেলিং করা হচ্ছে।” পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দাবি করেছেন, তদন্তের পর তারা জানতে পেরেছেন, ওই শিক্ষিকা কেবল মারধর নয় সেই সঙ্গে ওই ছাত্রের মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি বিশ্বাসের বিরুদ্ধে রূঢ় কথা বলেছিলেন। অভিযুক্ত শিক্ষিকার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থার সুপারিশ করেছে শিশুসুরক্ষা কমিশনও।
এদিকে অভিযুক্ত শিক্ষিকা ত্রিপ্তা ত্যাগী গোটা ঘটনাকে ‘ছোট ঘটনা’ বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, “আমার উদ্দেশ্য খারাপ ছিল না। সবাই আমার সন্তানের মতো এবং আমি আমার ভুল মেনে নিচ্ছি, কিন্তু অকারণে এটি একটি বড় ইস্যু তৈরি করা হয়েছে। রাহুল গান্ধীর মতো নেতারা টুইট করেছেন, কিন্তু টুইট করাটা এত বড় ব্যাপার ছিল না। যদি এই ধরনের বিষয়গুলো প্রতিদিন ভাইরাল হয়, তাহলে শিক্ষকরা কীভাবে শিক্ষা দেবেন ছাত্রদের?”
এদিকে নাবালক ওই ছাত্রের বাবা পরে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, “আমি এবং আমার পরিবার এখানে আমাদের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত। আমি একজন কৃষক। আমি ত্রিপ্তা ম্যামকে গ্রেফতার বা তাঁর শাস্তি চাই না। আমার ছেলে এবং তার ভাগ্নে কয়েক বছর ধরে সেখানে পড়াশোনা করছে। আমরা কেবল এই গোটা ঘটনায় তাকে ক্ষমা চাওয়ার অনুরোধ জানাই এবং কেন উনি আমার ছেলের সঙ্গে এমন ব্যবহার করলেন তার ব্যাখ্যা চেয়েছিলাম। আমার ছেলেকে তার ধর্ম পরিচয়ের জেরে রধর করা দেখে আমি অবাক হয়ে যাই। আমি আর আমার ছেলেকে ওই স্কুলে পাঠাতে পারবো না। ভিডিওটি দেখে আমার স্ত্রীও আতঙ্কিত”।