''বড় মা নিয়ে যেত, কখনও সাদা, কখনও লাল কখনও বা কালো গাড়ী আসত। বিকেল চারটের সময় বেরিয়ে যেত, সকালে যখন ফিরত, দিদি কোনও কথাই বলত না। ওর চোখ ফুলে থাকত।'' রবিবার রাতে পুলিশের কাছে এমনই জবানবন্দি দিয়েছিল উত্তরপ্রদেশের হোম থেকে পালিয়ে আসা এক ১০ বছরের কিশোরী। তার অভিযোগের ওপর ভিত্তি করেই নড়েচড়ে বসে পুলিশ। এরপর জানা যায়, প্রতিবেশী রাজ্য মজফফর পুরের মতোই ঘটনা ঘটে চলেছে উত্তর প্রদেশের এই হোমের।
এলাকার পুলিশ সুপার রোহান পি কানয় সাংবাদিকদের বলেন, "ওই হোম থেকে ২৪ জন মেয়েকে উদ্ধার করা হয়েছে , মোট ৪২ জনের মধ্যে ১৮ জন এখনও নিখোঁজ, আমরা ওই হোম সিল করেছি।" হোমের মালিক মোহন ত্রিপাঠি এবং তাঁর স্ত্রী গিরিজা ত্রিপাঠীকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
উত্তরপ্রদেশের নারী ও শিশুকল্যাণ দফতরের মন্ত্রী রীতা বহুগুণা জোশী জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বিষয়টির ওপর কড়া নজর দিয়েছেন এবং এ ঘটনার জেরে জেলা শাসককে সরিয়েও দেওয়ারহয়েছে। রীতা বহুগুণা জোশী আরও জানিয়েছেন, তদন্তের জন্য একটি উচ্চপর্যায়ের দল গঠন করা হয়েছে এবং তাঁদের ওই শহরে পাঠানো হয়েছে তদন্তের জন্য।
রীতা বহুগুণা জোশীর কথা অনুযায়ী, ওই হোমের স্বীকৃতি পত্র এক বছর আগেই খারিজ করা হয়েছিল এমনকি কোনও তহবিলও দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, "ওই হোম কীভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল তা খতিয়ে দেখা হবে এবং এর জন্য কারা দায়ী তাও যাচাই করা হবে"।
২8 জুলাই, উত্তর প্রদেশের নারীকল্যাণ বিভাগ জেলা শাসককে ওই হোমের বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়।ওই হোম যে অবৈধভাবে চালানো হচ্ছিল, তা জানা ছিল দফতরের। ৩১ জুলাই তদন্তকারী একটি দল সেখানে গেলে তাঁদের হোমে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তদন্তকারীরা জানান হোমের পরিচালকরা তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে।
ওই দিনই শহরের কোতোয়ালি থানায় গিরিজা ত্রিপাঠী, তাঁর মেয়ে কাঞ্চনলতা ত্রিপাঠীসহ হোমের পরিচালকদের নামে এফ আই আর দায়ের করা হয়।
তা সত্ত্বেও ১০ বছরের শিশুকন্যা হোম থেকে পালিয়ে এসে পুলিশের কাছে বয়ান না দেওয়া পর্যন্ত হোমের বিরুদ্ধে কোনও রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
আরও পড়ুন: উত্তরপ্রদেশে নাবালিকাদের হোম থেকে উদ্ধার ২৪ আবাসিক, নিখোঁজ ১৮
মজফফরপুর মামলার কথা জানাজানি হওয়ার পরে মুখ্যমন্ত্রী সমস্ত জেলাশাসকদের নিজ নিজ জেলার মহিলা আবাসিক হোমের আবাসিকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার ব্যাপারে নির্দেশ দেন।
কোতোয়ালি থানার ইন্সপেক্টর বিজয় সিং গৌর জানিয়েছেন, রবিবার হোমে হানা দিয়ে আবাসিকদের উদ্ধারের পর সোমবার নতুন করে হোমের মালিক গিরিজা ত্রিপাঠী, তাঁর মেয়ে কাঞ্চনলতা ত্রিপাঠী এবং অন্যদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। এর আগে জেলা প্রোবশন অফিসার প্রবাত কুমার যে এফআইআর করেছিলেন, তার সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে ভারতীয় দণ্ডবিধি ও পকসো ধারাও।
লখনউয়ে রীতা বহুগুণা জোশী জানিয়েছেন, হোম বন্ধ করে দেওয়ার ব্যাপারে যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, তা মান্য না করার জন্য জেলাশাসককে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রী জানিয়েছেন, "গত এক বছর জেলা শাসকের কার্যকালে থাকাকালীন তাঁর কাছে ওই হোম সম্পর্কে মুখ্যসচিব সহ আরও অনেকে চিঠি লিখে হোমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। কিন্তু তিনি কিছুই করেননি। সে কারণেই তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। পূর্বর্তী জেলা প্রবেশন অফিসার অভিষেক পাণ্ডেকেও সাসপেন্ড করা হয়েছে। আরও দুই আধিকারিকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে"।