Advertisment

পুলওয়ামার জেরে মুম্বইয়ের দোকানের কাঁধে ১ লক্ষ ৯৫ হাজার টাকার বোঝা

"আমার কাছে প্রায় ৪০ কেজির বস্তা আসার কথা ছিল। ৫০০০ টাকা মতো দাম হওয়ার কথা। কিন্তু আমার কাছে ২ লক্ষ টাকা চাওয়া হল। এত টাকা আমি দেব কী ভাবে? ৪৫০ টাকা দিয়ে একটা ম্যাগাজিন কে-ই বা কিনবে"?

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update

নাজ বুক ডিপোর মালিক মহম্মদ আসিফ

বছর পঞ্চাশের মহম্মদ আসিফ দক্ষিণ মুম্বইয়ের প্রখ্যাত নাজ বুক ডিপোতে কাজ করেন সেই ছোটবেলা থেকে। সাত দশক আগে আসিফের বাবা প্রয়াত আবদুল্লা হাজি আলি মহম্মদের নিজের হাতে তৈরি সেই বইয়ের দোকান। বৈশিষ্ট্য ছিল একটাই, পাকিস্তানের জার্নাল, সংবাদপত্র পাওয়া যেত নাজ বুক ডিপোতে। উর্দু এবং হিন্দি দু'ভাষাতেই। স্বভাবতই নাজ বুক ডিপোতে নানা ধরনের গ্রাহক আসতেন। পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে, এমন মুসলিম পরিবার, ছাত্রছাত্রী, গবেষণারত পড়ুয়া, সবাই এসে ভিড় জমাতেন নাজে।

Advertisment

ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু পুলওয়ামা হামলার পর পাকিস্তানি সমস্ত পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক ২০০ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়েছে কেন্দ্র। আর তাতেই থমকে গিয়েছে নাজের জনপ্রিয়তা। আসিফ প্রস্তুত ছিলেন না একেবারেই। অন্যান্য বারের মতোই ১৯ ফেব্রুয়ারি বিমানবন্দরে পৌঁছে গেছিলেন প্রতিবেশী দেশ থেকে মাসিক যে সমস্ত পত্রিকা আসে, তা নিতে।

আরও পড়ুন, জালিয়ানওয়ালার একশো বছর, ১৪৪ ধারা অমৃতসরে

"আমার কাছে প্রায় ৪০ কেজির বস্তা আসার কথা ছিল। ৫০০০ টাকা মতো দাম হওয়ার কথা। কিন্তু বিমানবন্দরে আমার কাছে ২ লক্ষ টাকা চাওয়া হল। এত টাকা আমি দেব কী ভাবে? ৪৫০ টাকা দিয়ে একটা ম্যাগাজিন কে-ই বা কিনবে", প্রশ্ন আসিফের।

খালি হাতেই ফিরতে হল আসিফকে। কিন্তু পরের ১০ দিন নিয়মিত কাস্টমস অফিসে ঘোরাফেরা করেছে আসিফ, যদি নীতির কিছু পরিবর্তন হয়, এই আশায়। জবাব এসেছে, নির্বাচন শেষ হলে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসতে পারে, তবে জোর দিয়ে কিছুই বলতে পারছে না কেউ।

ডাইলি জঙ্গ, নয়া ওয়াক্ত, শুয়া, পাকিস্তানের জনপ্রিয় দৈনিকগুলো ৩০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে বিক্রি করতেন আসিফ। তার বাবার সময় থেকেই নিয়মিত এসব পত্রিকা আসত নাজে। বিক্রি হত পাকিজা, খাওয়াতিন, শুয়া-র মত মহিলাদের উর্দু পত্রিকা। পাকিস্তানে সেসবের দাম ১০০ টাকা। নাজে পাওয়া যেত ২০০ টাকায়। সত্তর বছরে এই প্রথম পাক কলমের ছিটেফোঁটাও সম্ভার আনতে পারেনি নাজ বুক ডিপো।

হালে যদিও অধিকাংশ দৈনিকের ডিজিটাল সংস্করণ রয়েছে, কিন্তু নাজে মানুষ আসত সাদা পাতার ওপর লেখা কালো কালো হরফের টানেই, যা ছুঁয়ে দেখা যায়। গত মাস থেকে যতজন ক্রেতা এসেছেন, হতাশ হয়ে ফিরেছেন খালি হাতেই।

মুম্বই উর্দু নিউজ-এর সম্পাদক রশিদ শাকিল বললেন, "পাকিস্তান থেকে যে সমস্ত সংবাদপত্র এবং ম্যাগাজিন আসত, তা থেকে আমরা অন্য ধরনের একটা আঙ্গিক পেতাম। সব কিছু তো ইন্তারনেটে পাওয়া যায় না। কেন্দ্রের নতুন নীতির ফলে আমরা ওদের চিন্তা ভাবনা, ওদের আদর্শ সম্পর্কে জানার সুযোগটা হারালাম। ওদের পাঠকের সঙ্গেও যে একটা মনের যোগাযোগ তৈরি হতো, তা ভেঙ্গে গেল"।

Read the full story in English

Pulwama Attack
Advertisment