PM Narendra Modi in Kerala: অগাস্ট ৮ থেকে নতুন করে ভারী বর্ষণ এবং বন্যার প্রকোপে কেরালায় মৃতের সংখ্যা রাজ্য দুর্যোগ মোকাবিলা বিভাগের কন্ট্রোল রুমের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯৪। এই সংখ্যা বাড়ার পূর্ণ সম্ভাবনা রয়েছে, কারণ অনেকের মতেই ধ্বস নামার ফলে মাটির নীচে আটক প্রচুর মৃতদেহ এখনও উদ্ধার করা যায় নি। এখন পর্যন্ত ৩.১৪ লক্ষ মানুষকে ত্রাণ শিবিরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে, গত ১০০ বছরে এ রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতি এত গুরুতর হয় নি, এবং এ বছর রাজ্যের মোট ৩৩টি বাঁধের গেট খুলে দেওয়া এবং সমস্ত নদীতে জল বিপদসীমার ওপর দিয়ে বওয়ার ফলে অবস্থা আরও সঙ্গিন হয়ে উঠেছে।
আজ, শনিবার, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বন্যা বিধ্বস্ত কেরালার জন্য ৫০০ কোটি টাকার অতিরিক্ত অনুদান ঘোষণা করেছেন। এর আগে তিনি ওই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে বন্যাত্রাণ সংক্রান্ত বৈঠক করেন, এবং বিমান থেকে বন্যা কবলিত এলাকাগুলি পরিদর্শন করেন। এর পাশাপাশি তিনি বন্যায় মৃত সকলের পরিবার পিছু প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় ত্রাণ তহবিল থেকে ২ লক্ষ টাকা এবং গুরুতর আহতদের পরিবার পিছু ৫০,০০০ টাকার সাহায্য মনজুর করেছেন। ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন জানিয়েছেন, প্রাথমিক মূল্যায়ন অনুযায়ী, বন্যায় এ পর্যন্ত আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১৯,৫১২ কোটি টাকা।
দেশজুড়ে বিভিন্ন রাজ্য থেকে ত্রাণ ঘোষণার খবর এসেছে ইতিমধ্যেই। মধ্য প্রদেশ সরকার দশ কোটি টাকা সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, ঝাড়খণ্ড দিচ্ছে পাঁচ কোটি, মহারাষ্ট্র কুড়ি কোটি, হরিয়ানা দশ কোটি, বিহার দশ কোটি, এবং দিল্লির আম আদমি পার্টি সরকার দশ কোটির ত্রাণ ঘোষণা করেছে। এ ছাড়াও দিল্লি সরকারের সমস্ত মন্ত্রী নিজেদের এক মাসের বেতন কেরালা ত্রাণ তহবিলে দান করবেন। মহারাষ্ট্র সরকার বিশেষ ট্রেনে করে কেরালায় পানীয় জল পাঠানোর ব্যবস্থা করছে, এবং ওড়িশা সরকারের পক্ষ থেকে ২৪০ জনের একটি ফায়ার সার্ভিস কর্মীদল ওই রাজ্যে পাঠানো হয়েছে।
আন্তর্জাতিক স্তরেও কেরালার ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। জাতি সঙ্ঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেজ এ বিষয়ে দুঃখপ্রকাশ করে জানিয়েছেন, "আমাদের মানবিক সহকর্মীরা, এবং আমাদের ভারতে অবস্থিত টিম অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে পরিস্থিতির ওপর লক্ষ্য রাখছেন। জাতি সঙ্ঘের পক্ষ থেকে আমরা ভারতের এই বন্যায় প্রাণহানি এবং বিপুল ক্ষয়ক্ষতিতে গভীর শোকপ্রকাশ করছি।"
শুক্রবার ৮২,০০০ জনেরও বেশি মানুষকে জলমগ্ন এলাকা থেকে সরিয়ে ত্রাণ শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়। পত্তনমতিট্টা, এরনাকুলম এবং থ্রিসুর জেলায় বন্যার জলের উচ্চতা বাড়তে থাকায় দেখা যায়, বহু মানুষ নিজেদের ছাদে বা বাড়ির উঁচু তলায় উদ্ধারের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন। শুক্রবার ৩১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।
আশঙ্কার বিষয় হলো, ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ আগামী দুদিনের জন্য ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস জারি করেছে। ইতিমধ্যেই কোচি এবং কেরালার মধ্যবর্তী জেলাগুলিতে বৃষ্টির দাপট বেড়েছে। আবহাওয়া বিভাগের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, উত্তর বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়েছে, যার ফলে আজ এবং কাল কেরালায় ভারী বৃষ্টি হবে। এর মধ্যে রাজ্যের এগারোটি জেলায় রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।
অভিবাসী শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন নেতা কে সহদেবন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রতি এক ই-মেল বার্তায় জানিয়েছেন, বাংলার প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ কেরালায় কাজ করেন। এঁদের মধ্যে অধিকাংশেরই বাস পত্তনমতিট্টা, এরনাকুলম, ওয়ানাড এবং পালঘাট জেলায়, যেগুলি সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলির তালিকায় পড়ে। প্রায় এক লক্ষ শ্রমিক অত্যন্ত সংকটজনক পরিস্থিতিতে রয়েছেন। সহদেবন আবেদন জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার যেন একটি বিশেষ দল পাঠিয়ে এই শ্রমিকদের দেখভালের ব্যবস্থা করে, এবং এরনাকুলম থেকে হাওড়া অবধি একটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করে, যেটি আলেপ্পে, তিরুবনন্তপুরম, মাদুরাই এবং চেন্নাই হয়ে যাতায়াত করবে। এই আবেদন গুরুত্ব লাভ করছে এই কারণে যে খুব শিগগির পানীয় জল এবং খাদ্য সঙ্কট দেখা দেবে প্রধানত বাঙালি শ্রমিক-অধ্যুষিত নিম্নবর্তী এলাকাগুলিতে।
বিভিন্ন সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে যে মালায়ালাম ভাষা না জানার কারনে শ্রমিকদের মধ্যে অনেকেই ঠিকমত সহায়তা পাচ্ছেন না। কেরালা ফ্লাড মাল্টিলিঙ্গুয়াল কল সেন্টার নামক একটি ফেসবুক পেজে যাবতীয় জরুরি তথ্য দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।