ইদানীং নিজের সন্তানদের নিরাপত্তার অভাব বোধ করেন ভারতে, এই মন্তব্য করে সম্প্রতি বিতর্কে জড়িয়েছিলেন অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহ। অ্যামনেস্টি ইন্ডিয়ার একটি ভিডিও-তে এবার 'মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব' করার অভিযোগ তুললেন কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে। জানালেন, কী ভাবে শিল্পী-অভিনেতাদের কোণঠাসা করছে সরকার, কীভাবে কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে সাংবাদিকদের।
২ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের এই ভিডিওটিতে নাসিরুদ্দিন সংবিধানের প্রসঙ্গ টেনে এনে দরিদ্র মানুষের শোষণের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
নাসিরুদ্দিন বলেছেন, "দেশের সংবিধানের প্রণয়নের মূল উদ্দেশ্যই ছিল দেশবাসীর প্রত্যেকের জন্য সামাজিক, আর্থিক এবং রাজনৈতিক ন্যায় সুনিশ্চিত করা। প্রত্যেককে নিজস্ব মত এবং ধারণা পোষণের, নিজস্ব ধর্মবিশ্বাস পালনের সমান সুযোগ দেওয়া। প্রত্যেকের জীবনধারণের অধিকারকে সমান ভাবে সম্মান করা। আমাদের দেশে যাঁরা দরিদ্রতম মানুষের বেঁচে থাকার অধিকারের জন্য লড়াই করেন, যাঁরা দায়িত্বের পাশাপাশি অধিকারের প্রশ্নটিও তোলেন, যাঁরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেন, তাঁরা সংবিধানের মূল উদ্দেশ্যটি উপলব্ধি করতে পেরেছেন বলেই এই লড়াই চালিয়ে যান।"
নাসিরের খেদোক্তি, "অথচ আমরা দেখছি, কেউ অধিকারের প্রশ্ন তুললেই তাঁকে জেলে পুরে দেওয়া হচ্ছে। শিল্পী-কবি-সাহিত্যিক-অভিনেতাদের কোণঠাসা করা হচ্ছে। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার উপর আঘাত নেমে আসছে। নিরীহ মানুষ খুন হচ্ছেন। ধর্মের নামে মানুষে-মানুষে বিভেদ তৈরি করা হচ্ছে, দেশে এখন চরম ঘৃণা আর বিদ্বেষের বীজ বোনা হচ্ছে। যাঁরা এসবের প্রতিবাদ করছেন, তাঁদের অফিসে রেইড করা হচ্ছে, লাইসেন্স বাতিল করে দেওয়া হচ্ছে, ব্যাঙ্ক অ্যকাউন্ট সিল করে দেওয়া হচ্ছে। উদ্দেশ্য একটাই, সত্যকে প্রকাশ্যে আনার সাহস যাতে কেউ না দেখান।”
আরও পড়ুন: বিপদের সময় নাসিরের পাশে মধুর, আশুতোষ
ভিডিওটির শেষে নাসির প্রশ্ন তুলেছেন, "এ কোথায় চলেছি আমরা? এই সংবিধানের স্বপ্নই কি দেখেছিলাম আমরা, যেখানে বিরুদ্ধ মতের কোন স্থান নেই? যেখানে ধনী এবং ক্ষমতাবানদেরই থাকবে একচ্ছত্র আধিপত্য, আর দরিদ্র এবং দুর্বলেরা শোষিতই থেকে যাবেন? দেশে এখন আইনের জায়গা নিয়েছে অন্ধকার।”
গত বছরের অক্টোবর মাসে অ্যামনেস্টি ইন্ডিয়ার সদর দফতরে এবং সংস্থার ডিরেক্টর আকার প্যাটেলের বেঙ্গালুরুর বাসভবনে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের তরফে তল্লাশি করা হয় 'ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট'-এর সরকারি বিধি লঙ্ঘন করে ৩৬ কোটি টাকা বিদেশ থেকে আমদানির অভিযোগে।
এই অভিযানের প্রতিবাদ করে অ্যামনেস্টির তরফে বলা হয়, "মোদীর সরকার মানবাধিকার সংস্থাগুলির সঙ্গে এমন আচরণ করছে, যেন এগুলি অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত। মোদী যখন বলেন, জরুরি অবস্থার দমনপীড়নের দিনগুলি দেশের ইতিহাসে ক্ষতচিহ্ন স্বরূপ, আমরা তাঁর সঙ্গে সহমত হই। দুর্ভাগ্যের, সেই অন্ধকার দিনগুলির ছায়া ফের ঘনিয়ে আসছে ভারতের উপর।"