নাথুরাম গডসে সম্পর্কিত মন্তব্য করে বিরোধীদের তোপের মুখে পড়ে শুক্রবার লোকসভায় দু দুবার ক্ষমা চাইলেন ভোপালের সাংসদ প্রজ্ঞা সিং ঠাকুর। দ্বিতীয়বারের জন্য ক্ষমা চাইবার সময়ে প্রজ্ঞা ঠাকুর বলেন, নাথুরাম গডসেকে কখনও দেশপ্রেমিক হিসেবে বর্ণনা করিনি, কারও নাম উল্লেখ করিনি। কিন্তু যদি কেউ আহত হয়ে থাকেন, আমি তাহলে ক্ষমা চাইছি।
এর আগে প্রজ্ঞা ঠাকুর দাবি করেন, তাঁর মন্তব্যের অপব্যাখ্যা করা হয়েছে। এর পর লোকসভা অধ্যক্ষ কক্ষের বিভিন্ন দলের নেতাদের নিয়ে একটি বৈঠক ডাকেন। বৈঠকের উদ্দেশ্য, প্রজ্ঞার বিবৃতি নিয়ে যা চলছে তা শেষ করা।
বিজেপি সাংসদ প্রজ্ঞা ঠাকুর শুক্রবার বলেন, নাথুরাম গডসেকে নিয়ে তাঁর মন্তব্য প্রেক্ষিতহীনভাবে তুলে আনা হচ্ছে। একই সঙ্গে প্রজ্ঞা বলেন, তাঁকে জঙ্গি বলার জন্য প্রাক্তন কংগ্রেস প্রধান রাহুল গান্ধীর ক্ষমা চাওয়া উচিত। লোকসভায় প্রজ্ঞা ঠাকুর বলেন, "আমার মন্তব্য যদি কাউকে আহত করে থকাে, তাহলে আমি ক্ষমা চাইছি। কিন্তু আমি এও বলতে চাই যে আমার কথা ঘোরানো হচ্ছে, এবং এমনভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, যা নিন্দাযোগ্য।"
তিনি বলেন, তাঁকে জঙ্গি বলা আইনবিরুদ্ধ এবং তাঁর পক্ষে অবমাননাকর। প্রজ্ঞার কথায়, "আমার বিরুদ্ধে আদালতে কোনও অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। প্রমাণ ছাড়া আমাকে জঙ্গি বলা আইনবিরুদ্ধ এবং আমার পক্ষে অপমানের। এটা আমার সম্মানের উপর আঘাত।"
তাঁর বিবৃতির পর বিরোধীরা সংসদের অধিবেশনে মহাত্মা গান্ধী কি জয়, গডসে মুর্দাবাদ শ্লোগান দিতে থাকেন। লোকসভায় কংগ্রেস দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেন, "আমাদের একটিই দাবি, আমরা নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনা চাই।"
গণ্ডগোল চলতেই থাকে। ওম বিড়লা কক্ষের নেতাদের নিয়ে একটি বৈঠক আহ্বান করেন উত্তেজনা প্রশমনের উদ্দেশ্যে। তিনি বলেন, গডসে নিয়ে প্রজ্ঞার মন্তব্যের রাজনীতিকরণ উচিত হবে না। "শুধু এ দেশই নয়, সারা পৃথিবী মহাত্মা গান্ধীর নীতি মেনে চলে। এ বিষয়ে নিয়ে রাজনীতি করা ঠিক নয়। যদি আমরা এরকম করতে থাকি, তাহলে সারা পৃথিবীর মানুষ তা জেনে যাবে। সে কারণে আমি বলেছি যে ওই মন্তব্যের রেকর্ড থাকবে না। কক্ষের বাইরে হোক বা ভেতরে, মহাত্মা গান্ধীর হত্যাকাণ্ডকে বড় করে দেখানো যেতে পারে না। গতকাল সরকারে অবস্থান স্পষ্ট করেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। সাংসদ নিজেও ক্ষমা চেয়েছেন।"
পরে লোকসভায় প্রজ্ঞা বলেন, "আমি শুধু দেশের জন্য কী করেছি সে কথাই বলতে পারি। ২৭ নভেম্বর এসপিজি সংশোধনী বিল নিয়ে আলোচনার সময়ে আমি নাথুরাম গডসেকে দেশভক্ত বলিনি। আমি তাঁর নাম অবধি করিনি। তবু, যদি কেউ আহত হয়ে থাকেন, আমি দুঃখপ্রকাশ করছি ও ক্ষমা চাইছি।"
এরপরেই বিজেপি সাংসদ তাঁকে জঙ্গি বলার জন্য রাহুল গান্ধীর ক্ষমাপ্রার্থনার দাবি তোলেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, "হ্যাঁ, আমি নিজের বিবৃতি সঠিক বলে মনে করছি। আমি টুইটারে যা লিখেছি, তাই ঠিক।"
তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্পর্কে বিজেপির দাবি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে রাহুল গান্ধী বলেন, "ঠিক আছে। কোনও সমস্যা নেই। ওঁরা যা করতে চান, তাতেই স্বাগত।"