"কোথায় গেলে আমরা ন্যাশনালিটি সার্টিফিকেট পাব জানি না। ডেপুটি কমিশনারের অফিসে গেছি, সাব ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেটের অফিসে গেছি, তহশিলদারের দফতরে গেছি। কেউই কিছু জানে না মনে হয়।" আম্বালায় নিজেদের বুটিকে বসে বলছিলেন দুই বোন।
২৯ বছরের সন্তোষ আর ২৬ বছরের হিনার বার্থ সার্টিফিকেট নেই। গত ৬ মাস ধরে তাঁরা প্রমাণ করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন যে তাঁরা ভারতীয়। তাঁদের সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে তাঁদের পাসপোর্ট আবেদনের উপরে লিখে দেওয়া এক আধিকারিকের মন্তব্য। তিনি লিখেছেন, এরা দুজন নেপালিদের মত দেখতে।
২৮ ডিসেম্বর দুই বোন শেষ পর্যন্ত হরিয়ানার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল ভিজের সঙ্গে দেখা করতে সক্ষম হন। অনিল ভিজ বিধানসভায় আম্বালা ক্যান্টনমেন্টের প্রতিনিধি। তিন দিন পর আম্বালার ডেপুটি কমিশনার অশোক কুমার শর্মা বলেন, অফিসারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দুজনের জন্য পাসপোর্ট ইস্যু করতে।
সন্তোষ ও হিনারা চার বোন। তাঁদের বাবা ৫৪ বছরের ভগত বাহাদুর ব্যাপারটায় থতমত হয়ে আছেন। বললেন, "এতদিন পর্যন্ত আমরা ভাবতাম আমরা ভারতীয়। আমি ভারতে জন্মেছি, বড় হয়েছি। আমাদের পরিবারকে আগে কখনও জাতীয়তার প্রমাণ দিতে বলা হয়নি।"
ভগত জানালেন, তাঁর বাবা গোপাল সিং ১৯৬৫ সালের আগে নেপাল থেকে এ দেশে এসেছিলেন লুধিয়ানায় বসবাস করতে শুরু করেন। ১৯৮৪ সালে তিনি সে শহরেরই এক গোর্খা মহিলাকে বিয়ে করেন। পরে তাঁরা আম্বালায় চলে যান এবং সেখানে সেলাইয়ের কাজ শুরু করেন। ভগত জন্মেছিলেন হিমাচল প্রদেশে। তাঁর মা মারা যাবার পর তাঁর বাব নেপালে চলে গেলেও, ভগত সিং এখানেই বসবাস করতে থাকেন এবং বিয়েও করেন। তাঁর স্ত্রী রুবি দেবী এবং সন্তোষ ও হিনার সঙ্গে তাঁরা আম্বালা সিটির কৃষ্ণা কলোনিতে থাকেন। সন্তোষ ও হিনার একটি পোশাকের বুটিক রয়েছে। বুটিকের নাম মীরা। ভগতের অন্য দুই মেয়ে মীরা ও কোমলের বিয়ে হয়ে গিয়েছে।
এ পরিবারের কাছে আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড এবং ওবিসি সার্টিফিকেট রয়েছে। মীরার পাসপোর্টও রয়েছে। ২০১০ সালে কোনও ঝুটঝামেলা ছাড়াই তিনি পাসপোর্ট পেয়ে যান। তাঁর পরিকল্পনা ছিল বিদেশ যাওয়ার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি, তিনি আম্বালা কলেজ থেকে এম কম পাশ করেন।
হিনা ফার্মেসিতে স্নাতক হয়েছেন। তিনি চান কানাডায় গিয়ে আরও পড়াশোনা করতে। সন্তোষ ইতিহাসে এমএ পাশ করেছেন এবং ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে ডিপ্লোমা করেছেন। তিনি ওয়ার্ক ভিসা চান। সবচেয়ে ছোট বোন কোমলের পাসপোর্ট নেই।
সন্তোষ এবং হিনা পাসপোর্টের জন্য আম্বালার স্থানীয় দফতরে আবেদন করেছিলেন গত ২৯ জুন। পুলিশ ভেরিফিকেশনের পরেও পাসপোর্ট না আসায় সেপ্টেম্বরের ১৬ তারিখ চণ্ডীগড়ের রিজিওনাল পাসপোর্ট অফিসারের কাছে যান। সেখানে এক আধিকারিক তাঁদের ফর্মের উপর লিখে দেন, আবেদনকারীদের দেখতে নেপালিদের মত। আরপিও দুই বোনকে ডেপুটি কমিশনারের দফতর থেকে সিটিজেনশিপ সার্টিফিকেট আনতে বলেন। এর পরই শুরু হয় সরকারি দফতরে চক্কর লাগানো।
দুজনকে অস্থায়ী পাসপোর্ট দিলেও আরপিও আম্বালার পুলিশ সুপার অভিষেক জোরওয়ালকে জন্মসূত্রে এ দুজন ভারতীয় নাগরিক কি না সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে বলেন। কিন্তু ভগৎ, তাঁর স্ত্রী বা মেয়ে কারোরই বার্থ সার্টিফিকেট নেই। পুলিশ বলছে, বার্থ সার্টিফিকেট না থাকলে নাগরিকত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া মুশকিল।
সন্তোষ বলেন, "পুলিশ আমাদের বাড়িতে এসেছে, বুটিকেও এসেছে। আমাদের কাছে বারবার বার্থ সার্টিফিকেট চাওয়া হচ্ছে, কিন্তু বার্থ সার্টিফিকেট আমাদের নেই। আমাদের পরিবার গরিব, ১৯৮৬ সালে আম্বালায় বাস শুরু করার আগে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছি আমরা। আমাদের বাড়িওয়ালারা রেশন কার্ড পাওয়ার জন্য তাদের ঠিকানাও ব্যবহার করতে দিত না। শেষমেশ একজন বাড়িওয়ালা রাজি হওয়ায় আমরা রেশন কার্ড পেয়েছি।"
আম্বালার পুলিশ সুপার বললেন, স্বাভাবিকীকরণের ভিত্তিতে এই পরিবার নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারেন। একই সহ্গে তিনি জানান, তাঁদের ভেরিফিকেশন পর্ব চলছে।
পাসপোর্ট আধিকারিকরা বলছেন, কেউ যদি ১২ বছর ভারতে বাস করেন, তাহলে তিনি ডেপুটি কমিশনারের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারেন।
তবে সন্তোষ ও হিনা ভয় পাচ্ছেন, এর মানে কী, আর তারপর কী হতে পারে! জেপুটি কমিশনার ও পাসপোর্ট অফিসার দুজনেই বলেছেন নেপালিদের মত দেখতে এ মন্তব্য করা ঠিক হয়নি। তবে একই সঙ্গে জানানো হয়েছে, নাগরিকত্ব প্রমাণিত না হলে পাসপোর্ট ফেরত নিয়ে নেওয়া হব।
আরেক পাসপোর্ট আধিকারিক জানিয়েছেন, "যদি কেউ নেপালিদের মত দেখতে হয়, তাহলে তাঁর ফাইলে আধিকারিক সে কথা লিখে দেন। এরকম সকলে তো আর ভারতীয় নাগরিক নন, সে যতই আধার কার্ড, ভোটার কার্ড থাকুক।"