ইউক্রেনে (Ukraine) রুশ হামলায় প্রথম ভারতীয়র মৃত্যু। মৃত ছাত্রের নাম শেখরাপ্পা জ্ঞানগউধর নবীন। আদতে কর্ণাটকের বাসিন্দা নবীন টানা ছয়দিন দেখেছে একের পর রুশ হানা। পূর্ব ইউক্রেনের খারকিভ ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির একদল ছাত্রের গত কয়েক দিনের স্থায়ী ঠিকানা ছিল বাঙ্কার। কারফিউ না থাকাকালীন মুদির দোকানে খাদ্য সামগ্রী কিনতে গিয়ে রুশ মিসাইলে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় তাঁর শরীর।
Advertisment
নবীনের সহপাঠী, অমিত বৈশ্য দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে জানান, ‘গত সোমবার আমাদের একটি দল খারকিভ ছেড়ে চলে গেছিল, জুনিয়র দল তখনও বেরোতে পারেনি। নবীন বলেছিল তাঁরা সবে একবছর ইউক্রেনে এসেছে তাঁদের পাশে থাকা উচিত। তাই সোমবার সেই দলের সঙ্গে আমরা যাইনি। আমরা থেকে গেছিলাম বাঙ্কারেই।" তিনি জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে যায়, উঠে দেখি তখন সকাল ৬টা বেজে গিয়েছে। নবীন আমাদের সবার জন্য খাবার আনতে চলে গেল। আমাদের বাঙ্কার থেকে বাজার প্রায় ৫০ মিটার। সকাল ৭টা ৫৮ মিনিট নাগাদ, নবীন কিছু টাকার জন্য আমাদের একজনকে একটি মেসেজ করেন। বলে, কিছু টাকা তাঁর অ্যাকাউন্টে পাঠাতে। তারপর আমাদের মধ্যে একজন সকাল ৮টা ১০ মিনিট নাগাদ নবীনের ফোনে কল করেছিল, কিন্তু একজন ইউক্রেনীয় কলটি ধরে এবং জানায় ‘সে আর নেই’।
বেঙ্গালুরু থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূরে হাভেরি জেলার চালাগেরি গ্রামের বাসিন্দা নবীন। মাত্র ২১ বছর বয়সেই ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন চোখে নিয়েই রুশ মিসাইলে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যায় তাঁর দেহ। বাড়িতে রয়েছেন বাবা শেখরপ্পা জ্ঞানগউধর, কাজ করতেন একটি বেসরকারি সংস্থায়। মা বিজয়লক্ষ্মী এবং বড় ভাই হর্ষ যিনি পিএইচডি করছেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে নবীনের বাবা শেখরাপ্পা জানান, ‘ছেলের সঙ্গে তাঁর শেষ কথা আগের দিন রাত্রে। সোমবার রাত ১০টার দিকে নবীনের শেষ ফোন আসে। ফোনে সে বলে পরিস্থিতি খারাপ কিন্তু আমরা এখানে নিরাপদে রয়েছি। যুদ্ধ শুরুর দিন থেকে প্রতিদিন চার পাঁচ বার করে ওর ফোন আসত আমরা সকলেই ওকে নিয়ে উৎকণ্ঠায় ছিলাম’। কেন ডাক্তারি পড়তে ইউক্রেনে পাঠালেন ছেলেকে? বাবার অশক্ত চোয়ালের জবাব, ‘আমি নিরুপায় ছিলাম। এখানে ডাক্তারি পড়ানোর খরচ বহন করতে পারতাম না। আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন ভারতে শিক্ষা ব্যবস্থা যদি সঠিক হত, আমি এই দিনের মুখোমুখি হতাম না,"
Advertisment
এদিকে অমিত বৈশ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানান, ‘দূতাবাসের পক্ষ থেকে আমরা কোনও পরিবহন ব্যবস্থার সাহায্য পায়নি। সেখান থেকে আমাদের জানানো হয়, আমরা হাঙ্গেরি বা রোমানিয়ার সীমান্তে পৌঁছালেই তবে তারা সাহায্য করতে পারবে।' নবীনের স্কুলের সহপাঠী দীনাকরের কথায়, নবীন স্কুলের মধ্যে একমাত্র যে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পেয়েছিল। দীনাকর জানায় ও খুবই মাধাবী ছাত্র ছিল। ছ’মাস আগে যখন ও দেশে ফিরেছিল তখনই শেষ দেখা। দিনাকরের সঙ্গে নবীনের শেষ কথা হয় গত সোমবারই। নবীন বলেছিলেন যে "যদিও তিনি একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত অঞ্চলে ছিলেন। তবে তিনি একটি বাঙ্কারের মধ্যে নিরাপদ আছেন"।
খারকিভ থেকে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে কথা বলার সময়, নবীনের প্রাক্তন হোস্টেল সঙ্গী শ্রীধরন গোপালকৃষ্ণণ বলেছিলেন যে, 'প্রায় ২০০ ভারতীয় পড়ুয়া কলেজ হস্টেলে একটি বাঙ্কারের ভিতরে আশ্রয় নিয়েছে এবং তাঁদের সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনার কোন খবর নেই। রাশিয়ার সীমান্ত থেকে অঞ্চলটি প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে। বাঙ্কারে থাকা সব ছাত্রই ভারতীয়। একমাত্র রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই আমাদের সরানো সম্ভব। সেই সঙ্গে তিনি জানান আমাদের কলেজে পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় ১৫০০। এছাড়াও খারকিভে আরও তিনটি মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে সেখানেও অনেক ভারতীয় পড়ুয়া রয়েছে। আমি ট্রেন অথবা ক্যাব বুক করে খারকিভ থেকে পালানোর চেষ্টা করছিলাম কিন্তু নবীনের খবর শুনে আবার বাঙ্কারে ফিরে আসি’।