indian navy-pirates: জলদস্যুদের হাতে বন্দি মৎস্যজীবীদের শারীরিক সুস্থতার পরীক্ষা করা হয়েছে। (ছবি: ভারতীয় নৌবাহিনী)
Navy-Somali: বিরাট সাফল্য পেল ভারতীয় নৌবাহিনী। ১১ জন সোমালি জলদস্যুর হাত থেকে উদ্ধার করল ১৯ পাকিস্তানি মৎস্যজীবীকে। জলদস্যুরা মৎস্যজীবীদের জাহাজ 'আল নইমি' দখল করে নিয়েছিল। ভারতীয় নৌসেনার জাহাজ আইএনএস সুমিত্রা জলদস্যুদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়। সোমালিয়ার পূর্ব উপকূলে এই অভিযান চালানো হয়। তারপরই উদ্ধার করা হয় জলদস্যুদের হাতে বন্দি ওই মৎস্যজীবীদের। গত ৩৬ ঘণ্টায় এই নিয়ে দ্বিতীয় বড় সাফল্য পেল ভারতীয় নৌবাহিনী।
Advertisment
ভারতীয় নৌবাহিনী ১১ সোমালি জলদস্যুর হাত থেকে উদ্ধার করল ১৯ পাকিস্তানি মৎস্যজীবীকে।
২৯ জানুয়ারি ভারতীয় যুদ্ধজাহাজ, ইরানের জলযান এবং ১৭ জন মৎস্যজীবীকে উদ্ধার করেছিল।
নৌবাহিনীর প্রায় ১০-১২টি যুদ্ধজাহাজ বর্তমানে আরব সাগরে মোতায়েন রয়েছে।
এর আগে গত ২৯ জানুয়ারি ভারতীয় যুদ্ধজাহাজ আইএনএস সুমিত্রা ইরানের মৎস্যজীবীদের জাহাজ 'এফভি ইমান'-এ জলদস্যুদের হামলার চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছিল। সঙ্গে ১৭ জন মৎস্যজীবীকে উদ্ধার করেছিল। জলদস্যুদের বিরুদ্ধে জাহাজ ছিনতাই করে মৎস্যজীবীদের বন্দি করার অভিযোগ হামেশাই উঠছে। তারই বিরুদ্ধে ভারতীয় নৌবাহিনী লাগাতার অভিযান চালাচ্ছে। আইএনএস সুমিত্রাকে সোমালিয়া এবং এডেন উপসাগরের পূর্বে জলদস্যুদের মোকাবিলা করার জন্য মোতায়েন করা হয়েছে। ইরানের জাহাজের বেলায়, মৎস্যজীবীদের ছেড়ে দিতে জলদস্যুদের বাধ্য করার পরে, মাছ ধরার জাহাজটি দখল করে নৌবাহিনী। পরে তা মৎস্যজীবীদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
আইএনএস সুমিত্রা, ভারতীয় নৌবাহিনীর দেশীয় অফশোর টহল জাহাজ, সোমালিয়া এবং এডেন উপসাগরের পূর্বে জলদস্যুতা বিরোধী এবং সামুদ্রিক নিরাপত্তা অভিযানের জন্য মোতায়েন করা হয়েছে। (ছবি: ভারতীয় নৌবাহিনী)
Advertisment
একটি বিবৃতিতে নৌবাহিনী জানিয়েছে, আইএনএস সুমিত্রাকে অভিযান চালাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সেই নির্দেশ দ্রুত পালন করে নৌবাহিনীর ওই জাহাজ। ২৯ জানুয়ারি মাছ ধরার জাহাজটিকে আটকায় ভারতীয় নৌবাহিনী। তারপর জলদস্যুদের হাত থেকে জাহাজটিকে ছাড়িয়ে নিয়ে ওই জাহাজ স্যানিটাইজড করে। বন্দি মৎস্যজীবীদের সুস্থতা পরীক্ষা করার পর জাহাজটিকে যেতে দেওয়া হয়। ২৯ জানুয়ারির অভিযান আর পাকিস্তানি জলদস্যুদের বিরুদ্ধে অভিযান, উভয়ই আরব সাগরে, কোচির প্রায় ৮৫০ এনএম পশ্চিমে ঘটেছে বলেই জানিয়েছে নৌবাহিনী।
উত্তর আরব সাগরে এই দুটো অভিযানেই সরাসরি অংশ নিয়েছিল ভারতীয় নৌবাহিনীর মেরিন কমান্ডো বাহিনী মার্কোস (MARCOS)-এর কমান্ডোরা। শুক্রবারই জাহাজটি লাইবেরিয়া-পতাকাবাহী জাহাজের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়। সেটাও জলদস্যুরা দখল করে রেখেছিল। সেখানেও নৌবাহিনীর কমান্ডোরা জলদস্যুদের হাত থেকে ওই বাণিজ্যিক জাহাজটি উদ্ধার করে। জাহাজে বন্দি ১৫ ভারতীয়-সহ ২১ নাবিককে উদ্ধার করে। ভারতীয় নৌবাহিনী ২০০৮ সাল থেকে সারা বছর দিনরাত আন্তর্জাতিক জলসীমায় টহলদারি শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক সমুদ্রপথগুলোকে নিরাপদ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে।
নৌবাহিনী ২০০৮ সাল থেকে বছরভর রাতদিন সমুদ্রে টহল দিচ্ছে, জলদস্যুদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। সামুদ্রিক বাণিজ্যের জন্য আন্তর্জাতিক সমুদ্রপথ সুরক্ষিত রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। (ছবি: ভারতীয় নৌবাহিনী)
ভারতীয় নৌবাহিনীর এই সক্রিয়তায় ২০১১ সালে পূর্ব আরব সাগরে জলদস্যুদের চারটি জাহাজ উদ্ধার হয়। গ্রেফতার করা হয় ১২০ জন জলদস্যুকে। এর পাশাপাশি উদ্ধার হয়েছে ৭৩ জন মৎস্যজীবী এবং নাবিক। ২০১৩-১৪ সালে এই ধরনের উদ্ধার অভিযানের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছিল। কিন্তু, ২০১৭ সালে এডেন উপসাগর এবং সোমালি উপকূলে জলদস্যুদের বাড়বাড়ন্ত ঘটে। ২০২০ সালের মধ্যে বেশ কয়েকটি বড়সড় ছিনতাই চালায় জলদস্যুরা। যার জেরে ২০১১ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ভারতীয় নৌবাহিনী ৪১৩টি ভারতীয় পতাকাবাহী জাহাজ এবং ২,০৪১টি বিদেশি জাহাজকে পথ দেখিয়ে নিয়ে গিয়েছিল।
কিন্তু, তারপরও জলদস্যুরা হামলা চালিয়ে যাওয়া শুরু করে। গত সপ্তাহেই, একটি মার্শাল দ্বীপের পতাকাবাহী তেলের ট্যাংকার, মার্লিন লুয়ান্ডা জলদস্যুদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার শিকার হয়। এর জেরে আরও সক্রিয় হয়েছে নৌবাহিনী। আইএনএস কোচি, আইএনএস মার্মাগাঁও, আইএনএস কলকাতা, আইএনএস চেন্নাই এবং একটি তলোয়ার শ্রেণির জাহাজ-সহ প্রায় ১০-১২টি যুদ্ধজাহাজ বর্তমানে আরব সাগরে মোতায়েন রয়েছে। নৌবাহিনীর বিমান এবং ড্রোনও ওই হাই রিস্ক এরিয়া বা ঝুঁকিপূর্ণ (এইচআরএ) অঞ্চলে লাগাতার নজরদারি চালাচ্ছে।