নওয়াজের ঘর-ওয়াপসি
পাকিস্তানের তিনবার নির্বাচিত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ শনিবার দুবাই থেকে একটি বিশেষ উড়ানে দেশে ফিরলেন। পানামা পেপার কেলেঙ্কারিতে নাম জড়ানোর পর গত চারবছর ধরে লন্ডনে স্বেচ্ছা নির্বাসনে ছিলেন শরিফ। আগামী জানুয়ারিতে পাকিস্তান পার্লামেন্ট নির্বাচন। তার আগেই রাজনীতিতে নয়া ইনিংস শুরুর লক্ষে নওয়াজের ঘর ওয়াপসি বলে মনে করা হচ্ছে।
দুবাইয়ে কী বলেছেন?
পাকিস্তান পৌঁছে প্রথমে ইসলামাবাদ যান প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। তার পর যাবেন লাহোরে। সেখানে সকাল থেকে তাঁর সমর্থকরা জমায়েত করছেন। তাঁদের উদ্দেশে নওয়াজ শরিফ ভাষণ দিতে পারেন বলে খবর। দেশে ফেরারর পথে দুবাই বিমানবন্দরে নওয়াজ বলেছেন, 'চার বছর পর পাকিস্তানে ফিরছি। যেদিন পাকিস্তান ছেড়ে এসেছিলাম, একবিন্দু খুশি ছিল না মনে। কিন্তু আজ আমি খুশি।'
'এ পাকিস্তানকে চিনি না'
অর্থ ও খাদ্য সংকটে জেরবার পাকিস্তান। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করতে শোনা গিয়েছে নওয়াজ শরিফকে। তিনি বলেছেন, 'দেশের বর্তমান পরিস্থিতি দেখে আমি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। এগিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে অর্থনৈতিক ভাবে এবং ঐক্যের নিরিখে দেশ ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাওয়ার আগে শক্ত হাতে রাশ ধরতে হবে। আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের ঋণ মুক্থ ছিলাম আমরা, বিদ্যুৎ সস্তা ছিল, টাকার দাম ছিল বেশি, বেকারত্বও কমেছিল। দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়ে স্কুলে যেতে পারত, ওষুধ মিলত সস্তায়। কিন্তু এখন যা শুনছি তা বিস্তর তফাৎ।'
ভোট নিয়ে নওয়াজের মন্তব্য
জানুয়ারিতে পাকিস্তানে ভোট হবে। তার আগে নওয়াজের দেশে ফেরা যথেছষ্ট তাপর্যবাহী। ভোট সম্পর্কে শরিফ বলেছেন, 'নির্বাচন কমিশন যে দিন ঠিক করবে, সকলে সেই নির্দেশ মানবেন। নির্বাচন কমিশনের কথাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এখনকার পাক নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ। তারা সঠিক সিদ্ধান্তই নেবে বলে আশাবাদী আমি। এই প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ। কিছু কাজ পড়ে রয়েছে। জনগণনা হয়ে গিয়েছে। এখনও সীমানা পুনর্বিন্যাস বাকি। সেই সব দেখতে হচ্ছে নির্বাচন কমিশনকে।'
নওয়াজের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ?
২০১৭ সালে পানামা পেপার দুর্নীতিতে নাম জড়ায় পাক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের। করফাঁকি দিয়ে কোটি কোটি টাকা বিদেশের বিভিন্ন সংস্থায় বিনিয়োগের অভিযোগ ওঠে শরিফের বিরুদ্ধে। তার জেরে ২০১৮ সালে পাক সুপ্রিম কোর্ট নওয়াজকে ১০ বছরের সাজা শোনায়। তিনি জীবনে আর কখনও সরকারি পদে অধিষ্ঠিত হতে পারবেন না বলে নির্দেশ দেয় আদালত। কোনও রাজনৈতিক দলের মাথায় থাকতে পারবেন না বলেও জানানো হয়। এরপর জামিন নিয়ে লন্ডনে চিকিৎসা করাতে যান নওয়াজ। ২০১৯ সালের নভেম্বর মাস থেকে স্বাস্থ্যজনিত কারণে স্বেচ্ছায় নির্বাসনে চলে যান নওয়াজ। তার পর জামিনের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেলেও, আর দেশে ফেরেননি নওয়াজ। সেখানেই স্বেচ্ছা নির্বাসন কাটাচ্ছিলেন এতদিন। কিন্তু শেহবাজ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দাদাকে ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। চলতি সপ্তাহেই নওয়াজের দেশে ফেরা সংক্রান্ত যাবতীয় বাধা শিথিল হয়। ইসলামাবাদ হাইকোর্ট নওয়াজকে সুরক্ষাজনিত জামিন দেওয়ায় দেশে ফিরেই গ্রেফতার আশঙ্কা নেই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর।