নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু সংক্রান্ত একাধিক ফাইল প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ও পশ্চিমবঙ্গ সরকার। যদিও সেই সব ফাইলে নেতাজি অন্তর্ধান রহস্যের কিনারা হওয়ার মতো কোনও তথ্যই মেলেনি। হতাশ হয়েছেন সুভাষচন্দ্র বসুর পরিবার ও আমজনতা। তবে এবার বসু পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে নেতাজির চিতাভস্মের ডিএনএ পরীক্ষার। একইসঙ্গে জাপান সরকারের কাছে নেতাজি সংক্রান্ত তিনটি অপ্রকাশিত ফাইল সামনে আনারও দাবি জানিয়েছেন নেতাজির প্রপৌত্র চন্দ্র বসু।
১৮ অগাস্ট, ১৯৪৫। জাপানে বিমান দুর্ঘটনায় এই তারিখে আদৌ কি মৃত্যু হয়েছিল বীর বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র বসুর? দীর্ঘকাল ধরেই এই নিয়ে বিতর্ক এবং নানা রকম তদন্ত চলেছে। সেই তদন্তে কবে দাঁড়ি পড়বে তাও অজানা। তবে বসু পরিবার চাইছেন, আপাতত জাপানের রেনকোজি মন্দিরে রক্ষিত চিতাভস্ম নিয়ে একটা সিদ্ধান্তে আসতে। চন্দ্র বসু ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বলেন, "প্রায় এক মাস আগে আমরা পরিবারের পক্ষ থেকে একটি চিঠি দিয়েছি প্রধানমন্ত্রীকে। যে চিতাভস্ম রেনকোজি মন্দিরে রাখা আছে, বলা হয় ওই চিতাভস্ম নেতাজির। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তার কোনও প্রমাণ সামনে আসেনি। এখন বিজ্ঞান অনেক উন্নত হয়েছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করেছি যাতে ওই চিতাভস্মের ডিএনএ পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। তাতে ওই চিতাভস্ম আদৌ নেতাজির কিনা তার ইঙ্গিতও মিলতে পারে।"
তিনি বলেন, "নেতাজি-কন্যা অনিতা বসু পাফ, ভাইপো দ্বারকানাথ বসু ও অর্ধেন্দু বসু যৌথভাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই পত্র পাঠিয়েছেন। আমি সেই চিঠি পৌঁছে দিয়েছি।" চন্দ্রবাবুর কথায়, "আমার দাদা সূর্য বসু গতমাসে জাপানে গিয়ে রেনকোজি মন্দিরের পুরোহিতের সঙ্গে কথাও বলেছেন। মন্দিরের পুরোহিত বলেছেন তাঁদের চিতাভস্ম দিতে কোনও আপত্তি নেই। অনিতা দেবী বলেছেন, সরকার যদি উদ্যোগ নিতে চায়, আমরা বসু পরিবার নিজেদের খরচায় ডিএনএ পরীক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করব।" উল্লেখ্য, প্রথা অনুযায়ী জাপানীদের শেষকৃত্যের সময় সম্পূর্ণভাবে দাহ করা হয় না। সেক্ষেত্রে ভস্ম থেকে ডিএনএ-র উপাদান মিললেও মিলতে পারে।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতাজির ফাইল প্রকাশ করেছিলেন। সেই ফাইল রয়েছে মাণিকতলার পুলিশ মিউজিয়ামে। ২০১৬ সালের ২৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও নেতাজির ফাইল প্রকাশ করেছিলেন। তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ রাশিয়া, জার্মানি, আমেরিকা, জাপান ও ইংল্যান্ড সরকারকে চিঠি দিয়েছিলেন। ওই দেশগুলির কাছে নেতাজি সংক্রান্ত কোনও তথ্য আছে কিনা তিনি জানতে চেয়েছিলেন। চন্দ্রবাবু বলেন, "একমাত্র জাপানই বলেছিল, তাদের কাছে পাঁচটি ফাইল আছে। এর মধ্যে দুটি ফাইল প্রকাশ করেছিল জাপান। সেগুলোতে অন্তর্ধান রহস্য সমাধানের কোনও তথ্যই পাওয়া যায়নি। তিনটি ফাইল এখনও অপ্রকাশিত রয়েছে। ওই ফাইলগুলোতে নেতাজির অন্তর্ধান সংক্রান্ত তথ্য থাকতে পারে।"
জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীর সম্পর্ক বেশ ভালো। চন্দ্র বসু জানান, মোদীর কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে, জাপান যে তিনটে ফাইলের কথা বলেছিল, তা প্রকাশ করা হোক। প্রয়োজনে একটা বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করা যেতে পারে। ওই তিনটি ফাইল সংগ্রহ করলে কিছু রহস্য ভেদ হতে পারে। ইংল্যান্ড বলেছে, ২০২২ সালে নেতাজি বিষয়ক কিছু তথ্য প্রকাশ করবে তারা। সেটার জন্যও অপেক্ষা করতে হবে।
দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানানো হয়েছে, ২৩ জানুয়ারি দেশপ্রেম দিবস হিসাবে ঘোষণা করার। এখনও সে বিষয়ে কোনও জবাব মেলেনি বলে জানিয়েছেন নেতাজির এই বংশধর। চন্দ্রবাবুর ধারনা, "১৯৪৫ -এ বিমান ভেঙে পড়েছিল। কিন্তু তাতে নেতাজির মৃত্যু হয়নি। তিনি হাসপাতালে গিয়ে সুস্থ হয়েছিলেন। রাশিয়া যাওয়ার পরিকল্পনাও করেছিলেন। তখন তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল।"