দেশের অগ্রগণ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ)-এর উপাচার্য মনোনীত হয়েছেন শান্তিশ্রী ধুলিপুড়ি পণ্ডিত। জেএনইউ-য়ের ইতিহাসে এই প্রথম মহিলা উপাচার্য দায়িত্বে। কিন্তু উপাচার্য শান্তিশ্রী ধুলিপুড়ি পণ্ডিতকে কেন্দ্র করে বিতর্ক পিছু ছাড়েনি। তাঁর নামের অ্যাকাউন্ট থেকে একটি টুইট ভাইরাল হয়। যেখানে জেএনইউ-য়ের ছাত্র আন্দোলনকে কটাক্ষ করা হয়েছে। এরপরই ডাঃ পণ্ডিতের নিয়োগ ঘিরে প্রশ্ন তোলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের একাংশ। তাঁদের দাবি, ছাত্র আন্দোলনকে দমাতেই গেরুয়া মনোভাবাপন্ন লোককে উপাচার্য পদে নিয়োগ করা হয়েছে।
বিতর্ক মাথাচাড় দিতেই অবশ্য, @SantishreeD অ্যাকাউন্ট থেকে ওই টুইটটি ডিলিট করে দেওয়া হয়।
ফলে বিতর্ক আরও বাড়ে।
এই পরিস্থিতিতে জেএনইউ-য়ের নবনিযুক্ত উপাচার্য শান্তিশ্রী ধুলিপুড়ি পণ্ডিত দাবি করেছেন, তাঁর কোনওদিনই কোনও টুইটার অ্যাকাউন্ট ছিল না। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে উপাচার্য বলেছেন, 'আমার কোনওদিনই টুইটার অ্যাকাউন্ট ছিল না। জানা গিয়েছে সেটি হ্যাক করা হয়েছিল ও জেএনইউ-য়ের ভিতরের লোকই সেই কাজ করেছে। মূল বিষয় হল যে, আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মহিলা উপাচার্য হওয়ায় অনেকেই খুশি নয়।' অভিযুক্ত যে জেএনইউ-য়ের ভিতরের লোক সেটা বিশ্বস্তসূত্রে তিনি জানতে পারেন বলে দাবি উপাচার্যের।
সত্যিই যদি কোনও টুইটার অ্যাকাউন্ট তাঁর আগে না থেকে থাকে…। জবাবে জেএনইউ-য়ের উপাচার্য মনোনীত হয়েছেন শান্তিশ্রী ধুলিপুড়ি পণ্ডিত বলেন, 'না, কখনোই আমার কোনও টুইটার অ্যাকাউন্ট ছিল না। আমার মেয়ে সাইবার সিকিউরিটি ইঞ্জিনিয়ার। বছর ৬য়ের আগে, সে আমার জন্য এটি বন্ধ করে দিয়েছিল কারণ সে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কিছু চাকরির জন্য আবেদন করছিল এবং সে আমাকে বলেছিল, 'মা, তুমি কোনও সোশাল মিডিয়া সাইটে থাকবেন না। আমি সোশাল মিডিয়ায় সক্রিয় নই।'
তাঁর সংযোজন, 'টুইটারে না থাকায় বিষয়টি আমি পরে ছবি দেখে জানতে পেরেছি। যদি আমি টুইটারে না থাকি, তাহলে আমি কীভাবে জানব যে একটি অ্যাকাউন্ট রয়েছে।' কেউ তাঁকে সেই অ্যাকাউন্ট নিয়ে জানায়নি? উপাচার্যের প্রতিক্রিয়া, 'না, কেউ আমাকে বলেনি। এই বিশ্বে সকলে ষড়যন্ত্রকারী।'
এরপর সুর চড়িয়ে শান্তিশ্রী ধুলিপুড়ি পণ্ডিত সংবাদ মাধ্যমকেই নিশানা করেন। বলেন, 'কেন সংবাদ মাধ্যম আমার সঙ্গে এত খারাপ এবং জঘন্য আচরণ করছে? আমি কী পাপ করেছি? কারণ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কাঁচের সিলিং ভাঙতে বামদের মারধর করেছেন, যা বামেরা করেনি।'
প্রধানমন্ত্রী তাঁর নাম উপাচার্য হিসাবে সুপারিশ করেছিলেন কিনা জানতে চাইলে ডাঃ পণ্ডিত বলেন, 'হ্যাঁ আমি সমাজের প্রান্তিক, পিছিয়ে থাকা জাতিভূক্ত এবং তামিলনাড়ুর একজন মহিলা। সেই জেএনইউ-য়ের প্রথম মহিলা উপাচার্য আজ। এত বছর বামেরা তা করেনি কেন? সত্তর বছর তারা ক্ষমতায় ছিল। তারা কি জেএনইউতে যেতে পারেনি? এটা তাদের আড্ডার জায়গা মাত্র (হাব)।'
উপাচার্য অভিযোগ করেছেন যে, তিনি 'ভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গি'র দিকে মনোনিবেশ করায় তাঁকে আক্রমণ করা হয়েছিল। 'চোল, মারাঠা, বিজয়নগর সাম্রাজ্য, চেরা, পান্ড্য – তারা কোথায়? ইতিহাসে কত শতাংশ এদের নিয়ে লেখা আছে? দেখুন ইতিহাস হল এজেন্ডা সেটিং। আমি এর জন্য কাউকে দোষ দিচ্ছি না, আমি এর মধ্যে যেতেও চাই না। তাহলে তাঁরা যদি একটি এজেন্ডা নির্ধারণ করতে পারে, তাহলে ইতিহাস সংশোধনে দোষ কোথায়? আমি একজন দক্ষিণ ভারতীয়, আমি মনে করি রাজেন্দ্র চোল ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্রাট। তিনি ইন্দো-প্যাসিফিক জয় করেছিলেন, চীনাদের ধারণ করেছিলেন। কেন তার উল্লেখ নেই? আমি যদি এই ধরনের প্রশ্ন করি, আমি শত্রু হয়ে যাবো।'
মন্ত্রকের কাছে সাবিত্রীবাই ফুলে পুনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিল্যান্স রিপোর্টে উল্লেখ, পিআইও (ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্যক্তি) ছাত্রদের ভর্তি করার সময় একটি তদন্তে নিয়ম অনুসরণ না করার জন্য দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরে তিনি ব্যবস্থার সম্মুখীন হয়েছেন। তিনি বলেছিলেন: 'আমার বিরুদ্ধে কি একটি এফআইআর আছে? আমাকে দেখান কোন থানায় অভিযোগ আছে (এফআইআর নথিভুক্ত)। পুনে ইউনিভার্সিটি পরিচয়ের রাজনীতিকে প্রাধান্য দিয়েছিল, কারণ আমি একজন অ-মহারাষ্ট্রীয় ছিলাম, যে ম্যানেজমেন্ট কাউন্সিল নির্বাচনে জিতেছিলাম। তারপর কোনো পদ না পাওয়ার ষড়যন্ত্র হলো। যদি সত্যিই মামলা হয়ে থাকে, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় কেন আমার বিরুদ্ধে এফআইআর করেনি?'
তিনি বলেন যে এটি তাকে 'হয়রানি' করার জন্য করা হয়েছিল কারণ তারা চায়নি যে ডাঃ পণ্ডিত উপাচার্য হোক। "আমি ম্যানেজমেন্ট কাউন্সিল নির্বাচনে ডানপন্থীদের তরফে জিতেছি এবং ২০০১ থেকে আমি ডানপন্থীই ছিলাম।'
তার প্রেস রিলিজে ব্যাকরণগত ভুল নিয়ে বিজেপি সাংসদ বরুণ গান্ধীর সমালোচনা করেছিলেন। এ সম্পর্কে ডাঃ পণ্ডিত বলেন, 'আমি নির্দেশ দিয়েছিলাম… পূর্ববর্তী ভি-সি-এর মহিলা এটি শর্টহ্যান্ডে নিয়েছিলেন এবং পিআরও বলেছিলেন যে তিনি এটি সংশোধন করবেন এবং তুলে ধরবেন৷ আর কত কদেখভাল করা যায়? আমার এখনও কোনও দল নেই। আজ আমি অফিস স্টাফদের বলেছিলাম যে আপনি যদি ইংরেজি না জানেন তবে আপনার আমাকে বলা উচিত ছিল আপনি ইংরেজি জানেন না। কিন্তু কেউ বলে যে তারা জানে না। আমি নিজেই বসে টাইপ করলাম এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে আপলোড করলাম।'
তাঁর কাজের ধরন সম্পর্কে বলতে গিয়ে উপাচার্য বলেন, 'আমি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া"র পক্ষে। “আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া ছিলাম, এই প্রতিষ্ঠান আমার মায়ের মত। আমি আজ যা, তা জেএনইউ এর কারণে। ভিন্ন মতাদর্শ থাকতে পারে না? তবে, আমি দ্বিমত পোষণে রাজি।'
Read in English