Advertisment

ফের দশহাজারের গণ্ডি পার, দেশে ভয়ঙ্কর আকার নিচ্ছে করোনা সংক্রমণ  

একদিনে মারণ ভাইরাসের বলি ৩৮ জন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
corona, india

শুধু ভারত নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়াজুড়েই বাড়ছে কোভিড সংক্রমণ।

বিরাট জাম্প! গতকালের তুলনায় একদিনে অনেকটাই বাড়ল করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য অনুসারে গত ২৪ ঘন্টায় দেশে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন, ১০হাজার ৫৪২ জন। সেই সঙ্গে পজিটিভিটি রেট বেড়ে হয়েছে ৪.৪%

Advertisment

দেশে মোট সক্রিয় রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৬৩,৫৬২। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তথ্য অনুসারে একদিনে দেশে মারণ ভাইরাসের বলি হয়েছেন ৩৮ জন। মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫,৩১,১৯০। পাশাপাশি দেশে দৈনিক ইতিবাচকতার হার রেকর্ড করা হয়েছে ৪.৩৯ শতাংশ এবং সাপ্তাহিক ইতিবাচকতার হার ৫.১ শতাংশে রেকর্ড করা হয়েছে। দেশে এই মুহুর্তে সুস্থতার হার ৯৮.৬৭ শতাংশ।  

দেশ জুড়ে ফের চিন্তা বাড়াচ্ছে করোনা। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান বলছে, মঙ্গলবার নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ৭, ৬৩৩। সক্রিয় রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬১,২৩৩। মঙ্গলবার দেশে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। তার মধ্যে চারজন দিল্লির, চারজন কেরল এবং একজন করে হরিয়ানা, পঞ্জাব এবং কর্নাটকের। কোভিড আতঙ্ক ছড়াচ্ছে বাংলাতেও। এ রাজ্যেও ইতিমধ্যে মৃত্যু ঘটেছে। এই আবহেই নতুন করে নির্দেশিকা প্রকাশ করল রাজ্যের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক।

নয়া স্ট্রেনের দাপটেই বাড়বাড়ন্ত করোনা ভাইরাসের। উপসর্গ (Symptoms) মৃদু হলেও প্রাণ হারাচ্ছেন প্রবীণ ব্যক্তিরা, সেই সঙ্গে যাদের কো-মর্বিডিটি (Co-Morbidity) আছে এমন মানুষ অর্থাৎ যাঁদের হৃদপিণ্ড, কিডনি, ফুসফুস, যকৃতের রোগ আছে তাঁদের ক্ষেত্রে আরও সাবধানতা মেনে চলার নির্দেশ জারি করেছে রাজ্যের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক।  

রিপোর্ট অনুসারে বলা হয়েছে, যারা এই নয়া স্ট্রেনের কবলে পড়ছেন তাদের মধ্যে ১-২ দিন ধরে জ্বর, গলা ব্যথা, মাথাব্যথা, ডায়রিয়ার মতো উপসর্গ ছাড়াও শরীরে প্রচণ্ড ব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। XBB.1.16 বা Arcturus ভেরিয়েন্ট তরুণদের অনেক বেশি সংক্রমিত করছে। এনিয়ে বিশেষ ভাবে সাবধানতা মেনে চলার কথা বলেছেন চিকিৎসকরা। তাদের কথায়, XBB.1.16 বা Arcturus ভেরিয়েন্ট অল্পবয়সীদের সংক্রামিত করছে এমন আবহে কোভিড বিধি মেনে চলা বাধ্যতামূলক।

আপনার কি COVID-19 বুস্টার ডোজ নেওয়া উচিত?

চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন এখনও যারা বুস্টার ডোজ গ্রহণ করেননি বিশেষ করে যদি আপনি অন্য কোন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে সংক্রমণ থেকে বাঁচতে "টিকার বুস্টার ডোজ সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে দিতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস , দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ (CKD), করোনারি আর্টারি ডিজিজ (CAD), রোগীদের ইমিউনোসপ্রেসিভ ওষুধ ইত্যাদির ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত, এবং বুস্টার ডোজ সহ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে টিকা নেওয়া উচিত।

যদি আপনি নয়া এই স্ট্রেনে সংক্রমিত হন কী করবেন?

- পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন। সুস্থ হওয়ার জন্য আপনাকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতেই হবে।  

- হাইড্রেটেড থাকুন যাতে শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় থাকে

- করোনা থেকে সেড়ে ওঠার পর সাত থেকে দশ দিন কোন ভারি কাজ করবেন না।

- ফাইবার সমৃদ্ধ একটি স্বাস্থ্যকর এবং সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন। কিছু সময়ের জন্য তৈলাক্ত এবং জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে চলুন এবং প্রচুর পরিমাণে জল, গোটা ফল খান, বিশেষ করে সকালে।

 রাজ্যের তরফে কী বলা হল গাইডলাইনে?

•    যতটা সম্ভব ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে, বিশেষ করে প্রবীণ, শিশু, অন্তঃসত্ত্বা মহিলা এবং কো-মর্বিডিটি থাকা ব্যক্তিদের।

•    ভিড়ে যদি ঢুকতেই হয়, কিংবা ভিড়ে ঠাসা গণ পরিবহণ ব্যবহার করতে হয় তবে সঠিকভাবে মাস্ক পরতে হবে, বয়স যা-ই হোক না কেন।

•    সাবান এবং স্যানিটাইজারের ব্যবহারে জোর দেওয়া হয়েছে। শিশুদেরও এই অভ্যাস গড়ে তুলতে উৎসাহ দিতে হবে।

•    হাঁচি বা কাশির সময়ে রুমাল কিংবা টিস্যু পেপার কিংবা কনুই দিয়ে মুখ এবং নাক চাপা দিতে হবে। যত্রতত্র থুতু ফেলা নিষেধ।

•    জ্বর হয়েছে কিংবা সর্দি-কাশিতে ভুগছে এমন মানুষজন ভিড় এড়িয়ে চলুন।  

•    এখনও পর্যন্ত কোভিড টিকার প্রিকশনারি ডোজ না নিলে নিয়ে নিতে হবে।

•    জ্বর সঙ্গে গলা ব্যথা, কাশি, সর্দি থাকলে সংকোচ না করে করোনা পরীক্ষা করান।

•    কোভিড পজিটিভ হলে এক সপ্তাহ আইসোলেশনে থাকতে হবে।

•    রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের হোম ম্যানেজমেন্ট গাইডলাইন অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।

•    যদি উপসর্গ তীব্র হতে শুরু করে, নিঃশ্বাসে কষ্ট হয়, দ্রুত চিকিৎসক কিংবা হাসপাতালের দ্বারস্থ হতে হবে।

•    কোনও শিশু কিংবা বয়স্ক মানুষ কোভিডে আক্রান্ত হলে দ্রুত চিকিৎসক অথবা হাসপাতালের পরামর্শ নিতে হবে।

•   চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টি-বায়োটিক এবং কাশির সিরাপ খাওয়া যাবে না।

•    প্রয়োজন পড়লে ফোন করা যাবে রাজ্যের হেল্পলাইন নম্বর ১৪৪১৬-এ। 

শুধু ভারত নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়াজুড়েই বাড়ছে কোভিড সংক্রমণ। এদিকে বাড়তে থাকা করোনা নিয়ে ইতিমধ্যেই বিবৃতি দিয়েছে WHO, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে করোনার এই বাড়বাড়ন্তের পিছনে রয়েছে XBB.1.16 ভ্যারিয়েন্ট। ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ) সোমবার দেশের জনগণকে ক্রমবর্ধমান কোভিড সংক্রমণের মধ্যে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেছে যে তাদের যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখা উচিত।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছে ওমিক্রন XBB.1.16 ভেরিয়েন্ট। ক্রমশ মিউটেশনের মাধ্যমে নিজেকে আরও বেশি সংক্রামক করে তুলছে ওমিক্রনের এই ভেরিয়েন্ট। গত ১৫ মাসে ভারতে ওমিক্রনের চারশো নতুন সাব-ভেরিয়েন্টকে শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে, সমস্ত ভেরিয়েন্টের ৯০ শতাংশ হল XBB৷ XBB.1.16।

দেশে বাড়তে থাকা সংক্রমণের মাঝে জনসাধারণকে ভিড়ের মধ্যে মাস্ক পরা এবং সেই সঙ্গে যথাযথ কোভিড বিধি পালনে জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এবিষয়ে বিশিষ্ট পালমোনোলজিস্ট ডাঃ সন্দীপ নায়ার জানিয়েছেন, দেশে যেভাবে সংক্রমণ বাড়ছে তাতে জনবহুল স্থানে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক বলেই নির্দেশ অবিলম্বে জারি করা উচিত।

Corona India
Advertisment