শ্রীনগরে জি-২০ সম্মেলনের একটি বৈঠক আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। এহেন সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছে পাকিস্তান ও চিন। আগামী মে মাসে শ্রীনগরে বৈঠক আয়োজনের পরিকল্পনা করেছে জি-২০ সভাপতি ভারত। সেই কথা প্রকাশ্যে আসতেই ভারতের নিন্দায় সরব হয়েছে পাকিস্তান। এদিকে শ্রীনগরে জি-২০ সম্মেলনের ডাক দিয়ে পাকিস্তান ও চিনকে বিশেষ বার্তা দিতে চায় বিদেশমন্ত্রক। মে মাসের ২২ থেকে ২৪ তারিখ পর্যন্ত শ্রীনগরের মাটিতে জি-২০র পর্যটন সংক্রান্ত বৈঠক হবে। শ্রীনগর ছাড়া লেহ ও লাদাখেও এই সম্মেলন আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে।
জম্মু ও কাশ্মীরে প্রথমবারের মতো জি-২০ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। জি-২০ বৈঠকের আগে জম্মু-কাশ্মীরের শ্রীনগরের ঐতিহাসিক লাল চক সেজে উঠছে। কেন্দ্রের মোদী সরকার ৩৭০ ধারা বাতিলের পর কাশ্মীরের পরিস্থিতি বদলই শুধু নয়, জম্মু-কাশ্মীরের ছবিও এখন পাল্টাতে চলেছে। একই সঙ্গে ক্লক টাওয়ার থেকে শুরু করে সবকিছুর সৌন্দর্যায়নের কাজ চলছে পুরোদমে।
মে মাসে জি-২০ বৈঠকের আগে পুরোদমে সেজে উঠছে শ্রীনগর। ওয়াই-ফাই জোন, ফ্লাইওভার এবং দেওয়াল জুড়ে থ্রিডি পেইন্টিং, ভোল বদল হতে চলেছে শ্রীনগরের। এই সংস্কারের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে শ্রীনগরের ঐতিহাসিক লাল চক এবং এর ক্লক টাওয়ার।শ্রীনগরের মেয়র জুনায়েদ আজিম মাট্টু এক টুইট বার্তায় লিখেছেন, আইকনিক ক্লক টাওয়ার, ১৯৭৮ সালে বাজাজ গ্রুপ নির্মাণ করে। শ্রীনগরের "ঐতিহ্য এবং স্থাপত্যকে প্রতিফলিত করে চলেছে এই আইকনিক ক্লক টাওয়ার"। আসন্ন জি-২০ বৈঠকের আগেই সেই আইকনিক ক্লক টাওয়ারের পুনর্নির্মাণের কাজ চলছে। পাশাপাশি শহরে ওয়াই-ফাই জোন স্থাপনের পরিকল্পনাও করা হয়েছে।
জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঢেলে সাজানো হচ্ছে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও। শহরের একাধিক রাস্তারও ভোলবদল করা হচ্ছে। যানজট কমানোর জন্য একাধিক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি তৈরি করা হচ্ছে বিশেষ সাইকেল ট্র্যাক। বৈঠকের সম্ভাব্য স্থান শের-ই-কাশ্মীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টার। জি-২০ সম্মেলনের অংশ হিসেবে ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের জন্য শ্রীনগরকে বেছে নিয়ে ভারত পাকিস্তান ও চিনকে চমকে দিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার মনে করছে ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের জন্য শ্রীনগরকে বেছে নেওয়ার মাধ্যমে সরকার পাকিস্তান ও চিনকে এক বিশেষ বার্তা দিতে সক্ষম হবে, যে জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিল করার পরে সেখানকার পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়েছে।
চলতি বছর জি-২০-এর সভাপতিত্ব করছে ভারত। এর জন্য সব শহরই সাজানো হচ্ছে। যেখানেই জি-২০ প্রতিনিধিদলের বৈঠক হবে সেখানেই বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আগামী মে মাসে শ্রীনগরে একটি সভা অনুষ্ঠিত চলেছে। এই কারণে শ্রীনগরকে সাজানো হচ্ছে নতুন আঙ্গিকে। শ্রীনগরের সবচেয়ে বিশেষ এলাকা বা পুরো জম্মু ও কাশ্মীরের সবচেয়ে বিখ্যাত লাল চককে ঢেলে সাজানো হচ্ছে।
৩৭০ ধারা বাতিলের পর কাশ্মীরের পরিস্থিতির অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এখানকার যুবকরা সরকারি চাকরি ও নিরাপত্তা বাহিনীতে যোগ দিচ্ছেন। সন্ত্রাসবাদী ঘটনা আগের থেকে অনেকটাই কমেছে। কেন ভারত সরকার শ্রীনগরকে বেছে নিল? সরকার চায় শ্রীনগর একটি পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হোক। বিদেশ থেকে মানুষ এখানে এলে জম্মু ও কাশ্মীরেরও অর্থনীতিও আমূল বদলে যাবে। শ্রীনগরকে ইতিমধ্যেই স্মার্ট সিটি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আধুনিকতার মোড়কে মুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে জম্মু ও কাশ্মীরকে।
এখন পর্যন্ত শহর জুড়ে ৪০ টিরও বেশি নির্মাণ প্রকল্প চলছে। প্রধান রাস্তা, পথ, সাইকেল ট্র্যাক এবং নিষ্কাশন ব্যবস্থা ইত্যাদি পুর্ণনির্মাণের সঙ্গে সঙ্গে হওয়ায় শ্রীনগরকে নতুন ভাবে সাজিয়ে তোলার কাজ চলছে। কর্মকর্তাদের মতে, প্রকল্পটির মোট বাজেট ৩০০০ কোটি টাকা। গত তিন বছরে শ্রীনগরে বনধ বা পাথর নিক্ষেপের কোন ঘটনা ঘটেনি কিংবা কোন বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং শান্তি ভঙ্গের ঘটনাও ঘটেনি। পরিবর্তে শহরটি জীবন্ত হয়ে উঠেছে এবং কর্মকাণ্ডে পূর্ণ। শহরটি তার হারানো 'ক্যারিশমা' ফিরে পেয়েছে।
শ্রীনগরের প্রাণকেন্দ্রে পোলো ভিউ মার্কেটের কাজ চলছে । শ্রীনগর শহরের বাণিজ্যিক কেন্দ্র লাল চককেও চাঙ্গা করা হচ্ছে। ঐতিহাসিক ক্লক টাওয়ার সংস্কারের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। একসময় জঙ্গিদের ঘাঁটি জম্মু-কাশ্মীর, ৩৭০ ধারা বাতিলের পর 'নতুন জম্মু ও কাশ্মীর'-এর প্রতীক হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে।