প্রায় দুবছর করোনা আমাদের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। একের পর এক ঢেউয়ের আঘাতে বিপর্যস্ত জনজীবন। ডেল্টা ওমিক্রনের হাত ধরে সর্বশেষ তৃতীয় ঢেউয়ের প্রকোপ কিছুটা কাটিয়ে উঠে আমরা ধীরে ধীরে নিউনর্মালের পথে হাঁটতে শুরু করেছি। ওমিক্রন যেভাবে প্রথম দিকে তার দাপট দেখাতে শুরু করেছিল তা সবকিছুকেই যেন এলোমেলো করে দিয়েছিল। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুসারে শুধুমাত্র ওমিক্রনের প্রভাবেই প্রায় ৫ লক্ষের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।
ওমিক্রন কালে বাবা মায়েরা সবথেকে বেশি চিন্তিত ছিল তাঁদের সন্তানদের নিয়ে। যদিও সেভাবে শিশুরা ওমিক্রনের ফলে প্রভাবিত হয়নি। তবে ভারতে হাজার হাজার শিশুর জন্য কোভিডের প্রভাব মারাত্মক হয়েছে এবং আগামীদিনেও তা হতে পারে। সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় উঠে এসেছে এমনই এক তথ্য। ইন্ডিয়ান একাডেমি অফ পেডিয়াট্রিক্স ইনটেনসিভ কেয়ার চ্যাপ্টার দ্বারা প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুসারে ভারতে প্রায় ২ হাজারের বেশি শিশুর ক্ষেত্রে মাল্টিসিস্টেম ইনফ্ল্যামেটরি সিনড্রোম ইন চিলড্রেন (এমআইএস-সি)রিপোর্ট করা হয়েছে।
এমআইএস-সি বলতে আমরা কি বুঝি?
এমআইএস এমন একটি অবস্থাকে বোঝায় যেখানে একজন রোগীর হৃদপিণ্ড, ফুসফুস এবং মস্তিষ্কের মতো একাধিক জ্বরের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ বিষয়ে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন ৬০ শতাংশের বেশি ক্ষেত্রে এমআইএস-সি হৃদপিণ্ডকে প্রভাবিত করে।
উপসর্গ এবং প্রভাব কি?
বিশিষ্ট শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ইন্দ্রনীল চৌধুরী জানান, এমআইএস-সি আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে যে লক্ষণগুলি বেশি মাত্রায় দেখা যায় সেগুলি হল, চোখ লাল হওয়া, ফুসকুড়ি, নিম্ন রক্তচাপ, উচ্চ- জ্বর এবং পেটে ব্যথা বা তীব্র গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস এবং লোয়ার রেসপিরেটরি সংক্রমণ। কোভিডে আক্রান্ত একজন শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে অথবা এমআইএস-সি’র ঝুঁকিতে থাকতে পারে। ডাঃ ধীরেন গুপ্ত বলেন গঙ্গা রাম হাসপাতালে এরকম ১৪০টি কেস রয়েছে।
তার মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। যাদের মধ্যে দুজনের বয়স আট বছরের কম এবং একজনের বয়স ১২ বছর। একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে কোভিড -১৯ শিশুদের প্রায় ২০ শতাংশকে ব্যাপক ভাবে প্রভাবিত করতে পারে। সমীক্ষায় দেখা গেছে হাসপাতালে ভর্তি থাকা ৪১টি শিশুর মধ্যে ২০টি শিশু আইসিইউতে স্থানান্তরিত করতে হয়েছে। যা প্রায় ৪৯ শতাংশ। গবেষণায় বলা হয়েছে ১লা এপ্রিল ২০২০ থেকে ৩১শে জুলাই ২০২০ সালে হাসপাতালে ভর্তি থাকা ৪১ টি শিশুর ওপর এই গবেষণা চালানো হয়েছে। ফলাফলগুলি জার্নাল অফ ট্রপিক্যাল পেডিয়াট্রিক্সে (জেটিপি) প্রকাশিত হয়েছে।
এই রোগে আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে যে লক্ষণ গুলি ধরা পড়েছে তার মধ্যে জ্বর(১০০ শতাংশ) স্নায়বিক দুর্বলতা(৮০ শতাংশ) লোয়ার রেসপিরেটরি সংক্রমণ(৫০ শতাংশ) ফুসকুড়ি (৩৫ শতাংশ) এবং তীব্র গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস (২৫ শতাংশ) ক্ষেত্রে লক্ষ করা গেছে। অধিকাংশ এমআইএস-সি আক্রান্তদের মধ্যে ৯০ শতাংশের অক্সিজেনে অভাব দেখা গেছে।