দুপুরের নমাজ চলাকালীন নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ শহরে শুক্রবার দুটি মসজিদের ওপর সন্ত্রাসী হামলায় মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৪৯ জনের। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৪০ জন। মসজিদ আল নূর এবং লিনউড মসজিদে গুলি চালানোর অভিযোগে তিনজন পুরুষ ও এক মহিলাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে একজন অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক বলে জানা গেছে।
নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জ্যাসিন্ডা আর্ডার্ন বলেছেন, "এটি সন্ত্রাসবাদী হামলা ছাড়া আর কিছু নয়।" হামলার কারণ সম্পর্কে এখনো কিছু জানা যায় নি। দেশের পুলিশ কমিশনার মাইক বুশ এই হামলাকে প্রাথমিকভাবে সন্ত্রাসবাদী হানা হিসেবে নিশ্চিত না করলেও বলেছেন, "এর চেয়ে গুরুতর কিছু হতে পারে না।" অন্তত একটি বিস্ফোরক বোঝাই গাড়ি উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বুশ আরও জানিয়েছেন, মসজিদ আল নূরে নিহত হয়েছেন ৪১ জন, লিনউড মসজিদে সাতজন। হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে একজনের।
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে সন্ত্রাসবাদী হামলা: যা যা জানা গেছে
* ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি পার্ক এলাকায় মসজিদ আল নূর থেকে গুলি চালানোর খবর আসে। নিউজিল্যান্ডের সাউথ আইল্যান্ডের পূর্ব উপকূলে অবস্থিত ক্রাইস্টচার্চ শহর। কিছুক্ষণ পরে লিনউড মসজিদেও গুলি চালানোর খবর আসে। দুটি হামলায় এখন পর্যন্ত ৪৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। শহরের সমস্ত মসজিদ বন্ধ রাখার নির্দেশ জারি করা হয়েছে।
* ক্রাইস্টচার্চে হামলার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে খুলে দেওয়া হয় স্কুল। শহরের বাসিন্দাদের বাড়ি থেকে বেরোনো নিয়ে সতর্কতা বার্তা জারি করেছে পুলিশ। এর আগে বুশ বলেছিলেন, "আমরা যতক্ষণ না বলছি, দরজা খুলবেন না।"
* দেশের প্রধানমন্ত্রী জ্যাসিন্ডা আর্ডার্ন আজকের দিনটিকে "নিউজিল্যান্ডের অন্ধকারতম দিনগুলির মধ্যে একটি" বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি নিশ্চিত করেন যে একজন অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক সমেত ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে চারজনকে। তাঁর কথায়, "আমাদের দেশকে এই ঘটনার জন্য আমাদের বর্ণবিদ্বেষের প্রতি সমর্থন, বা উগ্রপন্থী ঘাঁটি হিসেবে বাছা হয় নি। আমাদের বাছা হয়েছে কারণ আমরা দুটোর কোনোটাই নই।
"আমি এই ঘটনায় সরাসরি ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি একটি বার্তা দিতে চাই…অনেকেই হয়তো এদেশে জন্মান নি। অনেকেই নিউজিল্যান্ডে এসেছিলেন স্বেচ্ছায়, এই দেশকে নিরাপদ জেনে। যেখানে তাঁরা অবাধে নিজেদের ধর্ম এবং সংস্কৃতি মেনে চলতে পারেন।"
* হামলার ঠিক আগে মসজিদের বাইরে এসে দাঁড়ায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের বাস। দলের স্ট্রেংথ ও কন্ডিশনিং কোচ মারিও ভিল্লাভারায়েন সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে জানান, "বাসটা মসজিদের সামনে আসতেই গোলাগুলি শুরু হয়ে যায়। সবাই ধাক্কা খেলেও মোটের ওপর ঠিক আছে।"
* নিউজিল্যান্ডে এর আগে এই ধরনের গণ শুটআউট হয় নি বললেই চলে। ২০১৩ সালের এক জনগণনা অনুযায়ী, দেশে এক শতাংশের কিছু বেশি নাগরিক মুসলমান ধর্মাবলম্বী।
* প্রত্যক্ষদর্শীদের উদ্ধৃত করে রয়টার্স জানিয়েছে, একজন বন্দুকধারীর "পরনে ছিল সেনাবাহিনীর স্টাইলে ক্যামোফ্লাজ পোশাক, এবং হাতের অটোম্যাটিক রাইফেল থেকে মসজিদের ভেতরের দিকে এলোপাথাড়ি গুলি চালাচ্ছিল সে"।
* প্রত্যক্ষদর্শী লেন পেনেহা সংবাদ সংস্থা এপি-কে জানান, প্রথমে অনেক কটা গুলির আওয়াজ শোনেন তিনি, তারপর বহু মানুষকে মসজিদ থেকে পালাতে দেখেন। "চারদিকে লাশ পড়েছিল," বলেন তিনি।