মধ্যযুগীয় প্রথায় ভর করে মহারাষ্ট্রের এক গ্রাম পঞ্চায়েত দুই তরুণীর বিবাহবিচ্ছেদে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছে। কোলাপুরের সেই ঘটনায় পুলিশ গ্রেফতার করেছে দুই তরুণীর স্বামী, শাশুড়ি ও পঞ্চায়েত সদস্যকে। জানা গিয়েছে, বিয়ের পরে সম্প্রদায়ে প্রচলিত প্রাচীন প্রথা মেনে কুমারীত্ব পরীক্ষা দিতে হয়েছিল দুই নববধূকে। সেই পরীক্ষায় ‘পাশ না করার অপরাধে’ এক তরুণী আর তাঁর বোনকে বিবাহবিচ্ছেদের রায় দেয় স্থানীয় ‘জাত পঞ্চায়েত’। পঞ্চায়েতের সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন সেই দুই তরুণীর মা।
মহারাষ্ট্রের কোলহাপুরের কঞ্জরভাট সম্প্রদায়ের মধ্যে কয়েক শতক ধরে চলে আসছে নববধূদের কুমারীত্ব পরীক্ষার রীতি। পুলিশ জানিয়েছে, গত নভেম্বরে ওই সম্প্রদায়ের দুই যুবকের সঙ্গে দুই বোনের বিয়ে হয়েছিল। দুই যুবকের মধ্যে এক জন সেনায় চাকরি করে। আর এক জন অন্য পেশায় আছে। বিয়ের পর পরই প্রথা মেনে কুমারীত্ব পরীক্ষা করানো হয় দুই বোনের। মেয়েটির পরিবারের অভিযোগ, ‘দু’বোনের মধ্যে এক জন ওই পরীক্ষায় পাশ করেননি। অর্থাৎ স্বামীর সঙ্গে প্রথম সঙ্গমে সাদা চাদরে রক্তের দাগ দেখতে না-পাওয়ায় ওই তরুণীর উপরে নির্যাতন শুরু হয়। বিয়ের আগে মেয়েটির আগে অন্য কারওর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল বলে চাপ দিতে থাকে স্বামী-সহ শ্বশুরবাড়ির লোক জন।‘
বাদ যাননি ওই তরুণীর বোনও। তাঁদের দু’জনকেই নিয়মিত মারধর করা হত বলে অভিযোগ। ১০ লক্ষ টাকা চেয়ে তরুণীর বাপের বাড়িতে চাপ দেওয়াও শুরু হয়। এর পরে বিষয়টির নিষ্পত্তি চেয়ে স্থানীয় ‘জাত পঞ্চায়েত’-এর দ্বারস্থ হন তরুণীর মা। তাঁর দাবি ছিল, তাঁর মেয়ে নির্দোষ। তিনি জানিয়েছেন, মীমাংসা করার জন্য প্রথমেই তাঁর কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা নেন পঞ্চায়েত সদস্যেরা। গত ফেব্রুয়ারিতে স্থানীয় এক মন্দিরে বসে সালিশি সভা।
তাতে যুবকের বাড়ির লোকের সমর্থনেই কথা বলে পঞ্চায়েত। সেই সঙ্গেই দুই বোনের বিবাহবিচ্ছেদের রায়ও দেয়। এর পরেই ‘মহারাষ্ট্র অন্ধশ্রদ্ধা নির্মূলন সমিতি’ নামে এক সংগঠনের দ্বারস্থ হন তরুণীর মা। তারাই পুলিশে যোগাযোগ করে গোটা ঘটনা জানায়। গত বৃহস্পতিবার দুই তরুণীর স্বামী, শাশুড়ি ও পঞ্চায়েতের কিছু সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।